মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

চালু হচ্ছে আনিসুলের ১১ ইউটার্ন

সওজ ক্ষতিপূরণ চায় ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা

জয়শ্রী ভাদুড়ী

চালু হচ্ছে আনিসুলের ১১ ইউটার্ন

ইউটার্নে বদলে গেছে উত্তরার নিয়মিত যানজট। রাজলক্ষী বাসস্টপ সংলগ্ন ইউলুপের কারণে যানচলাচলে স্বাচ্ছন্দ্য এসেছে ছবি : জয়ীতা রায়

রাজধানীর যানজট সমস্যা কমাতে সাতরাস্তা থেকে উত্তরা পর্যন্ত ১১টি ইউটার্ন নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। কিন্তু তার মৃত্যুর পর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের জমি ব্যবহার নিয়ে সমস্যার জেরে বন্ধ হয়ে যায় এই প্রকল্প। অবশেষে সওজ’কে পাঁচ কোটি ৮০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে এই প্রকল্প শুরু হয়েছে।

এ ব্যাপারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, উত্তরার দুটি ইউটার্ন চালু হওয়ার পর যানজট সমস্যা লাঘব হয়েছে। তাই জনগণের স্বার্থে আমরা এই প্রকল্প চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। খিলক্ষেতের কাছে কাওলা এলাকায় আরেকটি ইউটার্নের কাজ চলছে। আশা করি, এক মাসের মধ্যে এটা চালু করতে পারব। যত দ্রুত সম্ভব এই প্রকল্প শেষ করতে কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

অতিরিক্ত এই অর্থ কীভাবে সমন্বয় করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মিটিং ডেকেছি। আলোচনা সাপেক্ষে এই বিষয়গুলো সমাধান করব।’

প্রকল্প সংশ্লি­ষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালে সাতরাস্তা থেকে উত্তরা পর্যন্ত ১১টি ইউটার্ন নির্মাণের পরিকল্পনা করেন মেয়র আনিসুল হক। প্রকল্প বাস্তবায়নে সড়ক ও জনপথের ৩১ দশমিক ২৫ বিঘা, রেলওয়ের ১ দশমিক ৬১ বিঘা এবং সিভিল এভিয়েশনের ১ দশমিক ৮৩ বিঘা জমির প্রয়োজন পড়ে। সংস্থাগুলোর সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেন মেয়র। এর মধ্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জমির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। মেয়রের সঙ্গে আলোচনায় কোনো খরচ ছাড়াই জমি ব্যবহারে অনুমতি দেয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ। কিন্তু আনিসুল হকের মৃত্যুর পর প্রকল্পের কাজ শুরু করতে গেলে বাধা দেয় সওজ। তারা প্রয়োজনীয় জমির জন্য অর্থ দাবি করলে প্রকল্প খরচ বেড়ে দাঁড়ায় কয়েক গুণ। এ প্রকল্প ব্যয়ের ২৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকার মধ্যে ১৯ কোটি ৮৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা সরকার দেবে আর বাকি টাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হবে। প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় থেমে যায় যাবতীয় কার্যক্রম। তখন এই সমস্যার সমাধান চেয়ে ২০১৭ সালের নভেম্বরে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর চিঠি দেয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে গত বছরের ২২ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে সভা হয়েছে। পরে স্থানীয় সরকার, পল্ল­ী উন্নয়ন এবং সমবায় মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে এই সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাদের হস্তক্ষেপে গত বছর ২৭ জুলাই সওজ ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে এই প্রকল্পে জমি দিতে রাজি হয়। প্রকল্প ব্যয়ের সঙ্গে এই ক্ষতিপূরণ যোগ করে সংশোধিত ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) গত বছরের ১৭ অক্টোবর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খন্দকার মাহাবুব আলম বলেন, প্রকল্প কাজে কিছু জটিলতা ছিল, সেগুলো সমাধান হওয়ায় কাজ শুরু হয়েছে। সওজ তাদের স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা প্রদান সাপেক্ষে এই প্রকল্প চালু হয়েছে। এই প্রকল্পের সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।  

এই প্রকল্পের আওতায় সবকটি ইউটার্ন নির্মাণ করছে এস এম কনস্ট্রাকশন। কাজের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের প্রোপাইটর হাসিবুর রহমান শাহিন বলেন, এই প্রকল্পের ১১টি ইউটার্নের কাজ দুই ধাপে শেষ করার কথা। প্রথম ধাপের পাঁচটি ইউটার্নের কাজ ৭০ শতাংশ শেষ হয়েছে। দুটি খুলে দেওয়া হয়েছে, আরেকটি আগামী মাসে চালু হবে।

মেয়র আনিসুল হকের কাছে প্রথম এই প্রকল্পের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন প্রকৌশলী কামরুল হাসান। প্রকল্প বাস্তবায়নে ঢাকাবাসী কী সুবিধা পাবে জানতে চাইলে এই প্রকল্প পরামর্শক বলেন, রাজধানীর সবচেয়ে ব্যস্ত সড়কগুলোর মধ্যে সাতরাস্তা থেকে উত্তরা অন্যতম। সারাক্ষণ এই রাস্তায় যানজট লেগেই থাকে। টার্নিং ইয়ার্ড থিওরিতে এটা নির্মাণ করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এখানে ইউটার্ন নির্মাণ হলে গাড়িগুলো কোনো সিগন্যালে না পড়েই ঘুরতে পারবে। আর এই ইউটার্নের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এ জন্য কোনো গাড়িকে অন্য গাড়ির জন্য দাঁড়াতে হবে না, সিগন্যালে আটকে গতিও কমাতে হবে না। খুব অল্প খরচে এবং কোনো দীর্ঘ খোঁড়াখুঁড়ির ঝঞ্ঝাটে না পড়েই যানজটমুক্ত সড়ক পাবে নগরবাসী।

 

সর্বশেষ খবর