মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

শীতের ঢাকায় ভোটের উত্তাপ

গোলাম রাব্বানী

শীতের ঢাকায় ভোটের উত্তাপ

পৌষের কনকনে শীতে উত্তাপ ছড়াচ্ছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। শীত উপেক্ষা করে ভোট প্রার্থনায় বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা। এবারের নির্বাচনী লড়াইয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, ইসলামী আন্দোলনসহ ৯  রাজনৈতিক দলের মেয়র প্রার্থী। সিটি ভোটকে ঘিরে নতুন বছরের শুরুতে রাজনীতির মাঠও সরগরম হয়েছে। আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ দলীয় কার্যালয় প্রার্থী-সমর্থকের পদচারণায় মুখর। ভোটের পোস্টারে ছেয়ে গেছে রাজধানীর অলি-গলি রাজপথ। পোস্টার-মাইকিং ও স্লোগানে স্লোগানে ভোট চাইছেন প্রার্থীরা। প্রচার-প্রচারণা ও আচরণবিধি লঙ্ঘন নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগও করছেন প্রাথীরা। ভোটের প্রচারে মিছিল, শোভাযাত্রায় নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি আচরণবিধি প্রতিপালনে তৎপরতা দেখাচ্ছেন রিটার্নিং কর্মকর্তারাও। উৎসবের আমেজ দেখাতে গিয়ে কোনোভাবেই যেন বিশৃঙ্খলা না ঘটে এবং আচরণবিধি লঙ্ঘন না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে কমিশনের।

উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাসেম বলেন, ভোটের যুদ্ধ চলে গেছে মাঠে। এই মাঠকে কোনোক্রমেই আমরা ঘোলাটে করতে দেব না।  নির্বাচনী উৎসবকে কোনোক্রমেই সংঘর্ষে রূপ নিতে দেব না। মলিন হতে দেব না। দক্ষিণের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন বলেন, কোনো ধরনের মিছিল, শোডাউন, বড় ধরনের জনসভা ও তোরণ নির্মাণ করা যাবে না। তবে ঘরোয়া বৈঠকে প্রার্থীরা অংশ নিতে পারবেন।

আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা ভোট নিয়ে মানুষের মধ্যে উৎসবের আমেজ দেখছেন। অন্যদিকে নির্বাচনের পরিবেশ ও ভোট কারচুপি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপি সমর্থিতসহ অন্য কাউন্সিলর প্রার্থীরা। নিরপেক্ষ ও ভোটের সুন্দর পরিবেশ প্রত্যাশা করছেন তারা। প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোট নিয়ে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা সংশয়ে থাকলেও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা স্বাগত জানাচ্ছেন। সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়েও দ্বিধায় রয়েছেন বিরোধী প্রার্থীরা।

এবারের দুই সিটিতে ইভিএমে ভোটগ্রহণ নিয়ে ব্যাপক প্রচার করছে নির্বাচন কমিশনও। ভোটের আগে ২৫ এবং ২৬ জানুয়ারি প্রত্যেক কেন্দ্র ও পাশের এলাকায় কীভাবে ইভিএমে ভোট দিতে হয় সে বিষয়ে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হবে। ২৮ জানুয়ারি ফাইনাল ‘মক ভোটিং’ হবে। ইভিএমে ভোটের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা ইসির এনআইডি উইংয়ের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, ইভিএমে অনৈতিক কার্যক্রম করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তারপরও কেউ যদি রিচেক করতে চায়, তাদের আমরা স্বাগত জানাই। আমরা ইভিএম প্রদর্শনীর আয়োজন করব। কারও সন্দেহ থাকলে, তারা এসে দেখতে পারেন। ইভিএম নিয়ে ভোটারদের প্রশিক্ষিত করতে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেছি, লিফলেট, বুকলেট ও টিভি বিজ্ঞাপন প্রচার করবে ইসি। মূলত গত বছরের শেষ দিন প্রধান দলগুলোরপ্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন। যাচাই-বাছাই, প্রত্যাহার শেষে ১০ জানুয়ারি প্রতীক পাওয়ার পর আনুষ্ঠানিক প্রচারে নেমেছেন প্রার্থীরা। ১৮ দিনের প্রচার শেষে ৩০ জানুয়ারি হবে ভোটগ্রহণ। এবার দুই সিটিতে মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদ মিলিয়ে মোট ৭৫৮ জন প্রার্থী ভোটের লড়াইয়ে আছেন। প্রতীক পাওয়ার আগে ভোটের প্রচারের নিয়ম না থাকলেও বিধি লঙ্ঘন করে আগে থেকেই বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালাতে দেখা গেছে। এ নিয়ে ইসিতে অভিযোগও হয়েছে। প্রতীক বরাদ্দের সময় রিটার্নিং কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রার্থীদের আচরণ বিধি মেনে চলার বিষয়টি ‘কঠোরভাবে’ তদারকি করবেন তারা। এ সময় আচরণবিধি প্রতিপালনের বিষয়ে কাউন্সিলর প্রার্থীদের শপথ পাঠ করান উত্তরের রিটার্নিং অফিসার। মেয়র পদে দুই সিটির ১৩ প্রার্থীর সবাই ইসিতে নিবন্ধিত দলের মনোনীত হওয়ায় যার যার দলীয় প্রতীক নিয়েই তারা লড়বেন।

উত্তরে সাধারণ ওয়ার্ড ৫৪, সংরক্ষিত ১৮টি এবং দক্ষিণের ৭৫টি সাধারণ ও ২৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড রয়েছে। এবার ভোটার ও ওয়ার্ড সংখ্যা বেড়েছে। উত্তর সিটিতে প্রায় সাড়ে ৩০ লাখ ভোটার এবং দক্ষিণে প্রায় সাড়ে ২৩ লাখ ভোটার। ঢাকা উত্তরে সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ৫৪টি পদে ২৫১ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের ১৮টি পদে ৭৭ জন ভোটের লড়াইয়ে থাকছেন। আর দক্ষিণে সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ৭৫টি পদে প্রার্থী হয়েছেন ৩৩৫ জন। সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের ২৫টি পদে মোট ৮২ জন এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দক্ষিণে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ৪ কাউন্সিলর প্রার্থী।

উত্তরে ৬ মেয়র প্রার্থী

উত্তরে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ‘নৌকা’, বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ‘ধানের শীষ’, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) প্রার্থী আহাম্মদ সাজেদুল হক রুবেল ‘কাস্তে’, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল-পিডিপির শাহীন খান ‘বাঘ’, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শেখ মো. ফজলে বারী মাসউদ ‘হাতপাখা’ ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) প্রার্থী আনিসুর রহমান দেওয়ান ‘আম’ প্রতীকে নির্বাচন করছেন।

 

দক্ষিণে ৭ মেয়র প্রার্থী

দক্ষিণে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস ‘নৌকা’, বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন ‘ধানের শীষ’, জাতীয় পার্টির হাজী মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন মিলন ‘লাঙ্গল’, ইসলামী আন্দোলনের আবদুর রহমান ‘হাতপাখা’, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) বাহরানে সুলতান বাহার ‘আম’, বাংলাদেশ কংগ্রেসের আকতার-উজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লাহ ‘ডাব’ এবং গণফ্রন্টের আবদুস সামাদ সুজন ‘মাছ’ প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠে রয়েছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর