পরিকল্পিত, আলোকোজ্জ্বল, নিরাপদ ও আধুনিক ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাজধানীর মিরপুর, উত্তরা, আবদুল্লাহপুর, খিলগাঁও, রামপুরা, বাড্ডা এলাকার ভোটারদের কাছে ভোট চাইছেন আসন্ন ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মেয়র প্রার্থীরা।
প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে সিটি ভোটের প্রচারে রাজধানী রূপ নিয়েছে উৎসব প্রাঙ্গণে। ব্যানার, লিফলেট, মাইকিংয়ে সরগরম ভোটের মাঠ। ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি শোনাচ্ছেন প্রার্থীরা। সব মেয়র প্রার্থীর প্রতিশ্রুতিতে রয়েছে নিরাপদ ঢাকার গড়ার প্রত্যাশা।
ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ছয়জন প্রার্থী এবং দক্ষিণ সিটিতে সাতজন। প্রতীক নিয়ে মাঠে নেমেছেন তারা। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদের প্রচার চলছে জোরেশোরে। অন্য দলের প্রার্থীরাও ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাইছেন।পরিকল্পিত, আলোকোজ্জ্বল ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাজধানীর মিরপুর, উত্তরা, আবদুল্লাহপুর, খিলগাঁও, রামপুরা, বাড্ডা এলাকার ভোটারদের কাছে ভোট চাইলেন ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আতিকুল ইসলাম।
ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আতিকুল বলেন, গত ৯ মাসের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে পরিকল্পিত, আধুনিক, সচল ঢাকা গড়ে তোলা আমার লক্ষ্য। শুরু করা কাজ এগিয়ে নিতে চাই। মেয়র নির্বাচিত হলে আমি মানবিক ঢাকা গড়ব। ঢাকা শহরের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ যানজট এবং জলজট। আমার এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার অভিজ্ঞতা আছে। তিনি আরও বলেন, নারীরা যাতে অবাধে চলতে পারে, এজন্য পুরো শহরে আমরা প্রায় ৪৮ হাজার এলইডি লাইট লাগানোর পরিকল্পনা নিয়েছি। আমরা স্মার্ট সিটি করতে চাই। ওয়ার্ডগুলোতে বিভিন্ন সমস্যা আছে। আমরা ওয়ার্ডভিত্তিক সেসব সমস্যার সমাধান করব। তাছাড়া মেয়র থেকে কাউন্সিলর সবারই জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে চাই।
রাজধানীর উত্তরখান, মিরপুর, উত্তরা এলাকায় গণসংযোগ করে ভোট চেয়েছেন বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগকালে তিনি দুর্নীতি দমনসহ ১২টি সমস্যা দূর করার প্রতিশ্রুতি দেন। তাবিথ বলেন, আগামী দিনে নিরাপদ শহর গড়ে তোলার জন্য যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, নির্বাচিত হলে তা বাস্তবায়ন করব। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ভোটারদের কাছে ভোট চাইছেন তিনি। পুরান ঢাকার অলি-গলি ঘুরে ভোট চাইতে দেখা যায় তাকে। এ সময় তাপস পুরান ঢাকাকে আধুনিক হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেন। শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ঢাকা শহরে মাদকসহ অন্যান্য অপরাধমূলক সামাজিক যে ব্যাধিগুলো রয়েছে, সেগুলো দূর করা হবে। আমরা এলাকাভিত্তিক সমস্যাগুলো সমাধান করব। আমরা ঢাকাকে উন্নত দেশের উন্নত রাজধানী হিসেবে গড়ে তুলব। তিনি বলেন, ঢাকা আমাদের প্রাণের শহর। ঢাকাতেই আমাদের বেড়ে ওঠা এবং স্বপ্ন দেখা। তাই আমাদের এই ঐতিহ্যবাহী ঢাকাকে পুনরুজ্জীবিত করব। আমরা আমাদের ঢাকাকে সুন্দর ঢাকা হিসেবে গড়ে তুলব।
দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে জয় ছিনিয়ে আনতে প্রচারে নেমেছেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পুরান ঢাকায় প্রচার চালাচ্ছেন তিনি। গণসংযোগে ইশরাক বলেন, ‘আমার বাবা এই পুরান ঢাকার সন্তান। পুরান ঢাকার ঐতিহ্য ধরে রেখে বাসযোগ্য নগরী হিসেবে ঢেলে সাজাতে চাই। যানজট, দূষণমুক্ত আধুনিক ঢাকা বিনির্মাণে কাজ করতে চাই। নগরকে সুন্দর পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন। তিনি বলেন, নির্বাচিত হলে শুধু রাস্তা-কালভার্ট ঠিক করা নয়, নাগরিকদের সকালে ঘর থেকে বের হওয়া ও ঘরে ফেরা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করব। অন্য দলের প্রার্থীদের প্রচারেও থাকছে নিরাপদ ঢাকার প্রতিশ্রুতি। দু-এক দিনের মধ্যে ইশতেহার ঘোষণা করবেন প্রতিটি দলের প্রার্থী। ইশতেহারে ঢাকাকে বাসযোগ্য, নিরাপদ নগরী হিসেবে গড়ে তোলাকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছেন মেয়র প্রার্থীরা।
প্রচারে মেয়র প্রার্থীদের পাশাপাশি নেমেছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। নাগরিকদের সঙ্গে কাউন্সিলরদের থাকে নিয়মিত যোগাযোগ। তাই ভোটারদের বাড়ি গিয়ে, মোড়ের চা স্টলে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। ভোটাররা অপেক্ষা করে রয়েছেন অনেক চাওয়া-পাওয়ার হিসাব মেলাতে। ক্লিন ইমেজ ঘিরে জমেছে প্রচার। ভোট উপলক্ষে গাড়ি বহর সাজিয়ে চলছে প্রচার। স্লোগানে মুখরিত এলাকা।
মাইকিং করে প্রার্থীরা জানান দিচ্ছেন নিজেদের তৎপরতা। এর মধ্যেই প্রচারে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে একাধিক প্রার্থীর বিরুদ্ধে। অভিযোগ উঠছে আচরণবিধি লঙ্ঘনেরও। সবকিছু ছাপিয়ে রাজধানীতে এখন ভোটের জোয়ার। তবে গণসংযোগের কারণে বিভিন্ন এলাকায় বেড়েছে যানজট। প্রার্থীরা যানজট কমানোর কথা বললেও তা কমেনি। প্রার্থীদের সঙ্গে প্রচারে মাঠে নেমেছেন দলের নেতা-কর্মীরাও। নির্বাচনকে ঘিরে বেড়েছে সাংগঠনিক ঐক্যও।