পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের ‘আসমানী’ কবিতায় ‘আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও, রহিমদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও। বাড়ি তো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি, একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি। একটুখানি হাওয়া দিলেই ঘর নড়বড় করে, তারি তলে আসমানীরা থাকে বছর ভরে।’
পল্লী কবির আসমানী চরিত্রের কবিতাটি সবার মনকে নাড়া দেয়। তবে আসমানী কবিতার আরেকটি চিত্র পাওয়া যায় চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের মনাই ত্রিপুরাপাড়ায়। এখানকার মানুষদের কপাল লিখন ‘বৃষ্টি হলেই ঘরে পানি পড়া এবং বেড়া-দেয়ালবিহীন ঘরে বসবাস।’ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে জরাজীর্ণ ঘরেই তাদের দিনাতিপাত। শত বছর ধরেই তারা এমন জীবন পার করে আসছেন। তবে এবার তাদের মাথা গুঁজবার ঠাঁই হয়েছে। ত্রিপুরাপাড়ার এমন দরিদ্র ছয়টি পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে উপহার দেওয়া হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ঘর। গত ৩১ জুলাই হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রুহুল আমীন ছয় পরিবারের সদস্যদের হাতে ঘরগুলোর চাবি হস্তান্তর করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিশেষ বরাদ্দ, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেনের নির্দেশনায় ঘরগুলো নির্মাণ তত্ত্বাবধান করেছে উপজেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে এসব ঘরের নির্মাণকাজ। ত্রিপুরা পাড়ার ঘরপ্রাপ্তরা হলেন- মোহন ত্রিপুরা, খড়িয়া ত্রিপুরা, রাধারাম ত্রিপুরা, বানী কুমার ত্রিপুরা, শচীরং ত্রিপুরা ও রবিন ত্রিপুরা। হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, ‘শতবছর ধরে ত্রিপুরা পাড়ার বাসিন্দারা হতদরিদ্র অবস্থায় কষ্টক্লেষ্টে বাস করে আসছে। তাদের বিষয়টি দেখে প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে সহায়তার জন্য চিঠি লিখেছিলাম। পরে ‘বিশেষ এলাকার জন্য উন্নয়ন সহায়তা (পার্বত্য চট্টগ্রাম ব্যতীত)’ শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় প্রাপ্ত বরাদ্দে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়। নির্মিত ঘরগুলো ছয় পরিবারের জীবনযাত্রা বদলে দেবে। ঘর নির্মাণের কাজ অনেক আগেই শেষ হতো। করোনার কারণে কাজ শেষ করতে বিলম্ব হয়।’ উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি ঘর নির্মাণে বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ২০ হাজার টাকা করে। প্রতিটি ঘরের আয়তন ১০ ফুট বাই ১০ ফুট। প্রতিটি ঘরে আছে দুটি কক্ষ, একটি রান্নাঘর ও একটা বাথরুম। যাতায়াতের জন্য তৈরি করা হয়েছে সড়ক। ত্রিপুরাবাসীর জন্য তৈরি করা হয়েছে স্কুল, গভীর নলকূপ, সোলার প্যানেল। দেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। প্রসঙ্গত, ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ত্রিপুরা পল্লীতে ২০১৮ সালের ২৬ আগস্ট হাম ভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে একই পরিবারের তিনজনসহ ৪ শিশুর মৃত্যু হয়। এরপর ত্রিপুরা পল্লীটি আলোচনায় আসে। এরপরই ত্রিপুরা পল্লীতে যাতায়াতে তৈরি করা হয়েছে সড়ক, প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র, করা হয় বিদ্যুৎ ব্যবস্থাসহ দেওয়া হয় নাগরিক নানা সেবা।