রাজধানীর কুড়িল ফ্লাইওভারে বিভিন্ন জায়গায় পিচ উঠে গিয়ে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। বৃষ্টিতে ভাঙা জায়গায় পানি জমে ও কাদায় পিচ্ছিল হয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। মালিবাগ-মৌচাক ফ্লাইওভারজুড়ে রাতে জ্বলে না কোনো সড়কবাতি। বৃষ্টি হলে মহাখালী ফ্লাইওভারে ওঠা-নামার মুখে তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। ফ্লাইওভার বানানোর অনেক আগ্রহ থাকলেও রক্ষণাবেক্ষণে খুঁজে পাওয়া যায় না কোনো সংস্থাকেই। অরক্ষিত এসব ফ্লাইওভারে ঘটছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে ঝুঁকি।
নগরবিশ্লেষক ও স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ফ্লাইওভার ভেঙে ফেলা হচ্ছে আর আমাদের দেশে মহাউৎসাহে চলছে নতুন ফ্লাইওভার বানানো। কোন সংস্থা ফ্লাইওভার বানাবে তা নিয়ে দরকষাকষি চললেও রক্ষণাবেক্ষণে কারও আগ্রহ নেই। এজন্য বানানোর কিছুদিনের মধ্যেই জীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে ফ্লাইওভারগুলো। ফ্লাইওভার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি নির্দিষ্ট সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া উচিত। তাহলে একে অন্যের ঘাড়ে দায় চাপানোর অবকাশ থাকবে না।
গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, খিলক্ষেত থেকে ফ্লাইওভারে ওঠার সময় এবং পূর্বাচল থেকে খিলক্ষেত যাওয়ার র্যাম্পে বেশ কয়েকটি বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে সেগুলো দিন দিন আরও বড় হচ্ছে। মাঝারি বৃষ্টি হলেই কুড়িলের দিকে নামতে গেলে র্যাম্পের মাথায় গর্তে জমে থাকছে পানি। এ ছাড়া ফ্লাইওভারের![](/assets/archive/images/Print-Edition/2020/August%20-%202020/25-08-2020/BP-1a----25-08-2020.jpg)
২০১৩ সালের ৪ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুড়িল ফ্লাইওভার উদ্বোধন করেন। সে সময় এটি ছিল দৃষ্টিনন্দন ফ্লাইওভার। সাত বছরের মাথায় সব নান্দনিকতা হারিয়ে ফ্লাইওভারটি এখন জীর্ণশীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ৩০৬ কোটি টাকা ব্যয়ে তিন দশমিক এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করে। এটি নির্মাণের দায়িত্ব পালন করে চীনের মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও বাংলাদেশের প্রজেক্ট বিল্ডার্স লি. (পিবিএল)। ফ্লাইওভারটি নির্মাণের ফলে কুড়িল এলাকায় বিমানবন্দর সড়কের রেলক্রসিংয়ের ভয়াবহ যানজট দূর হয়। কিন্তু নির্মাণের পর থেকেই কোনো তদারকি নেই ফ্লাইওভারটির। একই অবস্থা মালিবাগ-মৌচাক ফ্লাইওভারের। পুরো ফ্লাইওভারজুড়ে অন্ধকার। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সড়কবাতি জ্বলে না এই ফ্লাইওভারে। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করলেও নজর নেই কারও। সিটি করপোরেশন রাস্তা ঝাড়– দিলেও ফ্লাইওভার ঝাড়– দেয় না। ধুলার স্তর পুরো হয়ে বন্ধ হচ্ছে ফ্লাইওভারের পানি বের হওয়ার পথ। বৃষ্টি হলে কাদায় পিচ্ছিল হয়ে আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে পথ। শুষ্ক মৌসুমে ঘাস জন্মাচ্ছে জমে থাকা ধুলার স্তরে। অন্ধকারে ঘটছে ছিনতাই ও খুনের ঘটনাও। গত বছরের ২৬ আগস্ট রাতে মালিবাগ থেকে শান্তিনগরে যাত্রী নিয়ে যাওয়ার পথে মো. মিলন নামে পাঠাও চালককে গলায় ছুরি মেরে হত্যা করা হয়। ছিনতাই করা হয় তার মোরটসাইকেলটিও। এরপরেও আলো জ্বলেনি ফ্লাইওভারে। মোটরসাইকেল চালক রেজা রহমান বলেন, লেট নাইট অফিস শেষে এই ফ্লাইওভার দিয়ে বাসায় ফিরতে গা ছমছম করে। এখানে অন্ধকারে দুর্ঘটনা ঘটে আবার ছিনতাইকারীরা ওতপেতেও থাকে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কেউ কোনো ব্যবস্থা নেয় না। ২০১৭ সালে জনগণের ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হয় ফ্লাইওভারটি। দুই বছর পার হতেই গায়েব হয়ে গেছে ফ্লাইওভারের সড়কবাতি।