মঙ্গলবার, ২৫ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

পৌনে চারশ বছরের শাহ্ সুজা মসজিদ

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

পৌনে চারশ বছরের শাহ্ সুজা মসজিদ

শাহ্ সুজা মসজিদ। মোগল স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন। ১৬৫৮ সালে এ মসজিদটি নির্মিত হয়। পৌনে চারশ বছরের প্রাচীন এ মসজিদটি কুমিল্লা নগরীর মোগলটুলীতে অবস্থিত। প্রত্ন পর্যটন বিকাশে এটির সংরক্ষণ জরুরি বলে মন্তব্য সুধীজনের।

শাহ্ সুজা মসজিদটির নির্মাণ ইতিহাস সম্পর্কে প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ শ্রী কৈলাস চন্দ্র সিংহ তার রামমালা গ্রন্থে উল্লেখ করেন, গোমতী নদীর তীরে কুমিল্লা নগরীর মোগলটুলীতে সুজা মসজিদ নামক একটি ইষ্টক নির্মিত বৃহৎ মসজিদ অদ্যাপি দৃষ্ট হইয়া থাকে। এই মসজিদ সমন্ধে দুই প্রকার প্রবাদ শ্রুত হওয়া যায়। একটি হচ্ছে- ‘সুজা ত্রিপুরা জয় করিয়া বৃত্তান্ত চিরস্মরণীয় করিবার জন্য এই মসজিদ নির্মাণ করিয়াছিলেন। এ ছাড়া মহারাজ গোবিন্দ মানিক্য সুজার নাম চিরস্মরণীয় করিবার জন্য বহু অর্থ ব্যয় করিয়া এই মসজিদ নির্মাণ করিয়াছিলেন। দ্বিতীয় প্রবাদ অপেক্ষা প্রথমোক্ত প্রবাদ সত্য বলিয়া আমাদের বিশ্বাস হইতেছে।’ সম্রাট শাহজাহানের দ্বিতীয় ছেলে শাহ্ সুজা (১৬৩৯-১৬৬০) বাংলার সুবেদার ছিলেন। এ মসজিদের নামকরণ, প্রতিষ্ঠাতার নাম ও প্রতিষ্ঠার তারিখ নিয়ে ভিন্নমত থাকলেও এ মসজিদ যে পাক ভারত উপমহাদেশের প্রাচীন মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম সে বিষয়ে কারও সন্দেহ নেই। আয়তনের দিক দিয়ে এ মসজিদ খুব বেশি বড় না হলেও এর কৃষ্টি, ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সার্বিক অবয়ব আভিজাত্যের প্রতীক বহন করে। মসজিদটি দেখতে জুমা, শবেবরাত, শবেকদরসহ বিশেষ দিনগুলোতে মুসল্লি ও দর্শনার্থীরা ভিড় জমায়।

সূত্র মতে, মসজিদের কেন্দ্রীয় গম্বুজটি পাশের দুটি গম্বুজ থেকে আকারে বড়। আদি মাপ ছিল প্রস্থে ১৬ ফুট ও দৈর্ঘ্যে ৪৭ ফুট। সাম্প্রতিকালে মসজিদের দুই প্রান্তে ২২ ফুট করে দুটি কক্ষ এবং সম্মুখ ভাগে ২৪ ফুট প্রশস্ত একটি বারান্দা নির্মাণ করায় আদি রূপ কিছুটা নষ্ট হয়েছে। মসজিদের উত্তর-পূর্ব কোণে একটি সুউচ্চ মিনারও নির্মাণ করা হয়েছে। এই মসজিদটি উত্তর দক্ষিণে লম্বা। মসজিদের চার কোণে ৪টি অষ্ট কোনাকার মিনার। এগুলো মসজিদের ছাদের অনেক উপরে উঠে গেছে। ফুল, লতাপাতা, জ্যামিতিক ও পদ্ম নকশায় অলংকৃত মসজিদের প্রবেশপথ। কেবলা প্রাচীর ও গম্বুজ, কলসি চূড়া দ্বারা সুশোভিত। আশপাশে বড় ভবন গড়ে ওঠায় মসজিদটির সৌন্দর্য ঢাকা পড়ছে। এখন ১২০০-এর ওপরে মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারেন।

শাহ্ সুজা মসজিদ সংলগ্ন শাহ্ সুজা হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা পরিচালনা কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল আজিজ মাসুদ জানান, এটি একটি প্রাচীন মসজিদ। শুধু কুমিল্লায় নয় সারা দেশের মধ্যে অন্যতম একটি মসজিদ। এটির অপরিকল্পিত সংস্কারে কিছু সৌন্দর্য বিলুপ্ত হয়েছে। শাহ্ সুজা মসজিদসহ দেশের ঐতিহ্যবাহী মসজিদ, মন্দির ও স্থাপনার পরিচালনা কমিটিতে প্রত্ন জ্ঞানসম্পন্ন লোক রাখা প্রয়োজন। শাহ্ সুজা মসজিদের ঐতিহ্য রক্ষায় এটিকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরে হস্তান্তর করা জরুরি। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক ড. আতাউর রহমান বলেন, শাহ্ সুজা মসজিদটি পরিদর্শন করেছি। প্রত্ন পর্যটন বিকাশে এটির সংরক্ষণ জরুরি। আমরা মসজিদটির সংরক্ষণে কাজ শুরু করেছি।

সর্বশেষ খবর