মঙ্গলবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

সড়ক যখন খেলার মাঠ

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

সড়ক যখন খেলার মাঠ

চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানার ঘাটফরহাদবেগ আনন্দধারা আবাসিক এলাকার গলিতে প্রতিদিন বিকালে চলে শিশু-কিশোরদের খেলা। মাত্র আট ফুট প্রস্থের গলিতে শিশু-কিশোররা খেলছে প্রতিদিনই। কখনো ক্রিকেট, কখনো ফুটবল। সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী তুর্য চক্রবর্তী বলেন, ‘এখানে খেলার মতো কোনো মাঠ নেই। তাই প্রতিদিনই আমরা এখানে কখনো ক্রিকেট, কখনো ফুটবল খেলা খেলি।’   

আবাসনের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে খেলার মাঠ। অতীতের খেলার মাঠ কিংবা খোলা আঙিনা এখন আকশচুম্বী ভবন।  বাধাগ্রস্ত হচ্ছে শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশ। নগরের প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই কমছে খেলার মাঠ। সরকারি উন্নয়ন কাজ এবং বেসরকারি উদ্যোগ, দুইভাবেই গিলে খাচ্ছে মুক্ত আঙ্গিনা। ফলে শিশু-কিশোরদের খেলার মাঠ এখন পাড়ার অলিগলি ও সড়ক।

নগরের ইপিজেড এলাকার বাসিন্দা শরীফ মোস্তাজিব বলেন, ‘নিউমুরিং-ইপিজেড এলাকাটি চট্টগ্রাম বন্দর ও ইপিজেড সংলগ্ন জনবহুল এলাকা। নিকট অতীতে বন্দরের এনসিটি গেটের পাশে, বন্দরের শ্রমিক কলোনিসহ (বর্তমানে বন্দর টার্মিনাল) আশপাশের এলাকাগুলোতে খেলার মাঠ ছিল। কিন্তু এখন আর খেলার কোনো মাঠ নেই। ফলে বাচ্চারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় খেলাধুলা করে, যেখানে বন্দরের ভারী যানবাহন চলাচল করে। তাই এলাকাবাসী ও সচেতন নাগরিকদের প্রত্যাশা, এখানে একটি খেলার মাঠের ব্যবস্থা করা হোক।

বৃহত্তর চট্টগ্রাম উন্নয়ন নাগরিক আন্দোলনের মহাসচিব মুজিবুল হক শুক্কুর বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে বাড়ছে ভবন। কমছে খোলা স্থান, আঙিনা, মাঠ ও পরিত্যক্ত ভূমি। এটি অপরিকল্পিত নগরায়নের ফল। তাই নগরায়নে মাঠকে অপরিহার্য অনুষঙ্গ হিসেবে রাখা জরুরি। 

 

চট্টগ্রাম নগরে কয়টি খেলার মাঠ ছিল, এর সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে এ নগরেই ছিল খেলার মতো উপযুক্ত অনেক মাঠ। এসব মাঠে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলে জাতীয় দলেও অংশ নিয়েছেন অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড়। বর্তমানে নগরে দুটি আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম এবং হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো মাঠই নেই। নগরের ছোট-বড় মাঠগুলোর মধ্যে আছে, জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম, এম এ আজিজ স্টেডিয়াম, আউটার স্টেডিয়াম, হালিশহরের আবাহনী মাঠ, লালদীঘি মাঠ, প্যারেড মাঠ, রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ড মাঠ ও বাওয়া স্কুলমাঠ। এর মধ্যে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম ও এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে জাতীয়-আন্তর্জাতিক খেলা হয়। এ দুটি মাঠ সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত নয়। কিন্তু বাকি মাঠগুলোতে নগরের শিশু-কিশোররা খেলার সুযোগ পায় না। এসব খেলার মাঠ এখন মেলার মাঠে পরিণত হয়েছে। বছরজুড়ে এসব মাঠে আয়োজন হয় বিভিন্ন মেলা ও উৎসব। একটি মেলা শেষ হলে সেটি আবার মাঠের রূপ পেতে পেতে আরেকটি মেলার প্রস্তুতি শুরু হয়। ফলে খেলার মাঠে খেলার কোনো সুযোগই পায় না শিশু-কিশোররা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর