শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

অযত্নে বিবর্ণ ফুটওভার ব্রিজের সৌন্দর্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

অযত্নে বিবর্ণ ফুটওভার ব্রিজের সৌন্দর্য

রাজধানীর ফুটওভার ব্রিজগুলোতে লাগানো নানা প্রজাতির ফুলগাছ অযত্ন-অবহেলায় শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। সৌন্দর্য এখন আবর্জনায় রূপ নিয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটির শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি ছবি : বাংলাদেশ প্রতিদিন

অযত্ন-অবহেলায় রাজধানীর ফুটওভার ব্রিজের সৌন্দর্য বিবর্ণ হতে চলেছে। সৌন্দর্য বাড়াতে নগরীর বিভিন্ন ফুটওভার ব্রিজের ওপরে নানা প্রজাতির গাছ লাগানো হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ ফুটওভার ব্রিজে মরে যাচ্ছে সৌন্দর্যের সবুজ গাছগুলো। আসলে ঠিকমতো পরিচর্যা না করায় গাছ লাগানোর সৌন্দর্য অনেকটা আবর্জনায় পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে রাজধানীজুড়ে এখন চলছে নানা উন্নয়ন কর্মকান্ড। ফলে অনেক ফুটওভার ব্রিজ ভেঙে ফেলা হয়েছে।

বিশেষ করে রাজধানীর উত্তরা এলাকায় বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট-বিআরটি প্রকল্প এবং পল্টন, প্রেস ক্লাব, তোপখানা এলাকায় মেট্রোরেল প্রকল্পের নির্মাণ কাজের কারণে অনেক ফুটওভার ব্রিজ ভেঙে ফেলা হয়েছে। পথচারীদের সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে নিত্যদিন চলাচল করতে হচ্ছে।

রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ৮৫টি ফুটওভার ব্রিজ রয়েছে। উত্তর সিটি করপোরেশন আরও ৩৬টি নতুন ফুটওভার ব্রিজ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে একাধিক আন্ডারপাস রয়েছে। কিন্তু সঠিক অবস্থানে না থাকা ও ব্যবহারজনিত সমস্যার কারণে অনেক পথচারী ওসব ফুটওভার ব্রিজ-আন্ডারপাস ব্যবহার করে না। কিছু ফুটওভার ব্রিজ তৈরি হয়েছে ভুল জায়গায়। অনেক ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে পথচারী দৌড়ে রাস্তা পার হয়। এসব প্রেক্ষাপটের কারণে ঢাকার অরক্ষিত পথচারীদের নিরাপদ, সহজ ও সুন্দর পরিবেশে হাঁটার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশে প্রথমবারের মতো একটি প্রবিধানমালা তৈরি করা হচ্ছে। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ইতিমধ্যে ‘পথচারী নিরাপত্তা প্রবিধানমালা-২০২১’ শীর্ষক প্রবিধানমালার একটি খসড়াও তৈরি করেছে। সব মিলিয়ে সড়ক নিরাপত্তা প্রবিধানমালা ২০২১-এর খসড়ায় ১৬টি ধারা যুক্ত করা হয়েছে।

 ডিটিসিএকে প্রবিধানমালার খসড়াটি তৈরি করে দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিয়েশন কোম্পানি (আইআইএফসি)। এটি অনুসরণ করা গেলে পথচারীদের অনেক সুবিধা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এই প্রবিধানমালায় পথচারীদের সড়ক পারাপারের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পদ্ধতি হিসেবে রাস্তায় সমতল পারাপারের সুবিধাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তাছাড়া চার লেন বা তার বেশি লেনের ব্যস্ত সড়ক, মোটরওয়ে, এক্সপ্রেসওয়ে, বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) স্টেশন, এমআরটি (মেট্রোরেল) স্টেশনের মতো যেসব এলাকায় সমতল পারাপারের সুযোগ কম, সেসব এলাকায় ফুটওভার ব্রিজ বা আন্ডারপাসের মতো অবকাঠামো তৈরি করা যাবে। তবে এসব আন্ডারপাস বা ফুটওভার ব্রিজে র‌্যাম্প, লিফট বা চলন্ত সিঁড়ির ব্যবস্থা রাখতে হবে। যাতে অক্ষম, অসুস্থ ও বয়স্ক ব্যক্তিরা সহজেই তা ব্যবহার করতে পারে।

বর্তমানে বিদ্যমান ফুটওভার ব্রিজগুলোর প্রতি যত্নবান হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। যেসব ফুটওভার ব্রিজ ভেঙে ফেলা হয়েছে চলমান নির্মাণ কাজ শেষ হলে হয়তো সেগুলোর বিকল্প তৈরি হবে। কিন্তু যেগুলো রয়েছে সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। টঙ্গী থেকে উত্তরা, এয়ারপোর্ট পর্যন্ত ফুটওভার ব্রিজগুলোর কোনো রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না। কোনো কোনোটির রেলিং ভেঙে পড়েছে। হয়ে উঠছে ঝুঁকিপূর্ণ। বলা হচ্ছে, বিআরটি প্রকল্পের কাজের সুবিধার্থে এসব ফুটওভার ব্রিজ ভেঙে ফেলা হবে। এ জন্য এসব ফুটওভার ব্রিজে কোনো টাকা খরচ করতে চায় না সিটি করপোরেশন। ফলে অরক্ষিত, ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে অনেক ফুটওভার ব্রিজ।

সম্প্রতি ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য গ্রিন ঢাকা নামে একটি কর্মসূচি চলছে। এর আওতায় ঢাকাকে সবুজায়ন করার নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ঢাকার অনেক ফুটওভার ব্রিজ গাছের চারা দিয়ে সাজানো হয়েছে। এটি যে শুধু সৌন্দর্য বৃদ্ধিই করেছে তা নয়। সেখানকার চারপাশে আবহাওয়ার বিশেষ মাত্রা যোগ করবে। গাছ, গাছের পাতা বাতাসে বিদ্যমান ক্ষতিকর উপাদানগুলো শোষণ করে বাতাসকে নির্মল রাখতে সাহায্য করে। বাতাসের সালফার ডাই-অক্সাইড শোষণে গাছ কার্যকর ভূমিকা রাখে। যেহেতু শহরের বায়ুতেই ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদানগুলো বেশি পরিমাণে উপস্থিত থাকে।

সুতরাং শহর এলাকায় গাছপালা লাগানোর মাধ্যমে বায়ুকে দূষণমুক্ত রাখার প্রয়াস চালানো নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। বর্তমানে ঢাকার রাস্তার আইল্যান্ডগুলোতে গাছ লাগানো হয়েছে। চলতি শীত মৌসুমে অনেক সড়ক দ্বীপে নতুন করে গাছ লাগানো হচ্ছে। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যার অভাবে সড়ক দ্বীপ কিংবা ফুটওভার ব্রিজের গাছগুলো মরে যাচ্ছে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ঘটা করে সড়কে গাছ লাগানো হবে কিন্তু সপ্তাহে এক দিনও পানি দেওয়া হবে না- এটা হতে পারে না। সিটি করপোরেশন এই অবহেলার দায় মোটেও এড়াতে পারে না।

সর্বশেষ খবর