মঙ্গলবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

করোনায় উদাসীন নগরবাসী

জয়শ্রী ভাদুড়ী

করোনায় উদাসীন নগরবাসী

দেশজুড়ে করোনা সংক্রমণ বাড়লেও স্বাস্থ্যবিধি মানায় আগ্রহ নেই অধিকাংশ মানুষের। রাজধানীর গুলিস্তানে জুতার বাজারে মাস্কবিহীন ক্রেতাদের এমন অস্বাস্থ্যকর ভিড়। রবিবারের ছবি -জয়ীতা রায়

ঘড়ির কাঁটায় সকাল ৬টা। হালকা কুয়াশায় মোড়ানো চারপাশ। এখনো জাগেনি শহর। কিন্তু কারওয়ান বাজারের কাঁচাবাজার তখন পাইকারি-খুচরা ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁক-ডাকে সরব। গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে কেনাকাটা চলছে। কারও মুখে মাস্ক নেই। দেশজুড়ে কভিড-১৯ এর তান্ডব চললেও তার কোনো আঁচ লাগেনি এখানে। হাঁচি-কাশি-থুথু ফেলা হচ্ছে যেখানে সেখানে। স্বাস্থ্যবিধি মানার উদাসীনতায় লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। 

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, দেশে প্রতিদিন ১০ হাজারের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। ছয় মাস পর ৩১ শতাংশ ছাড়িয়েছে সংক্রমণের হার। করোনার তৃতীয় ঢেউ রাজধানী থেকে ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। সংক্রমণ ঠেকাতে জারি হয়েছে কঠোর বিধিনিষেধ, বন্ধ করা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অর্ধেক জনবল নিয়ে চলছে অফিস-আদালত। তবুও স্বাস্থ্যবিধি মানায় সচেতন হয়নি মানুষ। মাস্ক পরা, হাত ধোয়া এবং সামাজিক দূরত্ব মানায় ভীষণ উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে। 

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, মানুষ ভিড়ের মধ্যে জীবিকার প্রয়োজনে বের হচ্ছেন। সবাইকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। হাসপাতাল থেকে জীবাণু ছড়ানোর ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। তাই যারা সেবা দিতে এবং নিতে যাচ্ছেন তারা অবশ্যই হাত ধোবেন, পরিষ্কার মাস্ক পরবেন। গণপরিবহন, মসজিদে মাস্ক পরতে হবে। করোনার লক্ষণ দেখা দিলে টেস্ট করতে হবে এবং আইসোলেশনে থাকতে হবে। জ্বর, কাশিসহ অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিলে অবহেলা করা যাবে না। সবাইকে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে এবং টিকা নিতে হবে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে হিমশিম পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিভাগ। কিন্তু এর কোনো আঁচ লাগেনি রাজধানীর গুলিস্তানের কাপ্তান বাজারের কবুতর হাটে। কারও মুখে মাস্ক নেই। হাজারো মানুষ গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে কবুতরের দরকষাকষি করছে। একই পরিস্থিতি গুলিস্তানের সর্বত্র, বাণিজ্য মেলা প্রাঙ্গণে। বিধিনিষেধ, জরুরি নির্দেশনা জারি হলেও স্বাস্থ্যবিধি মানায় ভ্রুক্ষেপ নেই মানুষের। আশঙ্কাজনক পর্যায়ে যাচ্ছে করোনা সংক্রমণ।

গত শুক্রবার কাপ্তান বাজার কবুতরের হাটে গিয়ে দেখা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে শুরু করে দূরদূরান্ত থেকে ক্রেতা-বিক্রেতা কবুতর নিয়ে এসেছেন হাটে। কেউ থুতনিতে মাস্ক লাগিয়ে ঘুরছেন, কারও হাতে, অনেকের মাস্কই নেই। ভিড়ে ধুলায় একাকার পরিস্থিতি। কবুতরের খোয়াড় ঘিরে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে মানুষ। এর মধ্যেই হাঁচি, কাশি, থুথু ফেলছে অনবরত।

হাটে আসা কবুতর বিক্রেতা মাজেদ মিয়া বলেন, ‘সকাল ৮টায় এসেছি হাটে। এত ভিড়, গরমে মাস্ক পরে থাকা কষ্টকর। কেউই মাস্ক পরে না, আমি একা পরলে কি আর করোনা সংক্রমণ কমে যাবে।’

হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের চেয়ারম্যান এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেছেন, করোনা সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সরকার এবং জনগণ দুই পক্ষকেই সতর্ক হতে হবে। যে কোনো ভ্যারিয়েন্টে সুরক্ষিত থাকতে মাস্ক পরার বিকল্প নেই। তিনি বলেন, মাস্ক পরাকে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দিতে হবে। করোনা নিয়ন্ত্রণে পাড়া-মহল্লায় স্বেচ্ছাসেবী টিম গড়ে তুলতে হবে। তারা এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি মানা, টিকা নেওয়া, মাস্ক পরাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন করবে। মাস্ক ছাড়া ওই এলাকায় প্রবেশ করলে এলাকাবাসী বাধা দেবে। যার স্বাস্থ্য তাকেই রক্ষা করতে হবে।

এভাবে সচেতন করে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। অফিসে, গণপরিবহনে মাস্ক পরতে হবে। সবাই মাস্ক পরলে করোনা সংক্রমণের চিত্র বদলে যেত বলে মন্তব্য করেন তিনি। 

রাজধানীর পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) আয়োজিত বাণিজ্য মেলায় গিয়েও দেখা যায়, স্বাস্থ্যবিধি মানছে না মানুষ।

গত শুক্রবার ছুটির দিনে মেলা প্রাঙ্গণ পরিণত হয়েছিল জনসমুদ্রে। মেলায় আগত দর্শনার্থীদের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার জন্য প্রবেশপথ ছাড়াও পণ্য প্রদর্শনীর জন্য স্টলে স্টলে রাখা হয়েছে মাস্ক, স্যানিটাইজার। নিরাপদ দূরত্ব রেখে, মাস্ক ব্যবহার করে মেলায় প্রবেশের জন্য মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছিল। কিন্তু মানছে না কেউ। মাস্ক নামিয়ে ঘোরাফেরা করছে অধিকাংশ মানুষ। 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর