মঙ্গলবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

স্কুল গেটে গাড়ির জট

জয়শ্রী ভাদুড়ী

স্কুল গেটে গাড়ির জট

রাজধানীর মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলের সামনে ছবি : জয়ীতা রায়

রাজধানীর গুলশান এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলামের দুই সন্তানের একজন বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল টিউটোরিয়াল (বিআইটি) স্কুলে এবং অন্যজনকে কিন্ডারগার্টেনে শিশু শ্রেণিতে ভর্তি করিয়েছেন। ছেলে-মেয়েকে স্কুল থেকে আনা-নেওয়ার জন্য ব্যবহার হয় তাদের ব্যক্তিগত গাড়িটি। সকালে তাদের স্কুলে দিয়ে ছুটি না হওয়া পর্যন্ত স্কুল গেটের আশপাশে রাখা থাকে গাড়িটি। এ রকম স্কুলের গেটে অনেক গাড়ি পার্ক করে রাখায় ওই এলাকাজুড়ে তৈরি হয় তীব্র যানজট।

সকাল থেকে স্কুলগামী ও অফিসগামীদের যাতায়াতে যানজটে অচল হয়ে যায় রাজধানী। তাই যানজট নিরসনে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমাতে স্কুলবাস নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। এ বিষয়ে কর্মকৌশল নির্ধারণ করতে রাজধানীর চারটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষক ও অভিভাবকদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেছে ডিএনসিসি। এ চারটি স্কুল হলো- ঢাকার চিটাগং গ্রামার স্কুল, স্কলাস্টিকা, স্যার জন উইলসন স্কুল ও বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল টিউটোরিয়াল। পর্যায়ক্রমে বড় স্কুলগুলোকে এর আওতায় নিয়ে আসা হবে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এই বাস সার্ভিস চালু হবে। এ বিষয়ে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সকালে স্কুলগামী শিশুদের পৌঁছে দিতে ব্যক্তিগত গাড়ি রাস্তায় নামে। এটা যানজটের অন্যতম কারণ। যানজট নিরসনে আমরা স্কুলবাস নামানোর পরিকল্পনা নিয়েছি। অভিভাবকদের সঙ্গেও আমরা আলোচনা করেছি। নিরাপত্তা এবং ভালো সেবা নিশ্চিত করতে পারলে তাদেরও কোনো সমস্যা নেই। আমরা পাইলট প্রকল্প নেওয়ার পরিকল্পনা করছি। এই উদ্যোগ সফল হলে ডিএনসিসি এলাকার স্কুলগুলোতে এই উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চারটি ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি পাইলট প্রকল্প হবে এবং এটি সফলতা পেলে পরে সব মাধ্যমের স্কুলেই এ সার্ভিস চালু করা হবে। শিক্ষার্থীদের বাসার ঠিকানা অনুযায়ী বাস রুট নির্ধারণ করা হবে। সময়, নিরাপত্তা ও খরচ সব কিছু বিবেচনায় নিয়েই বাস সার্ভিসটি চালু করা হবে। যানজট নিরসনে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমাতে এই উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।’

রাজধানীর অধিকাংশ নামকরা স্কুলের সামনে যানজটের চিত্র নিত্যদিনের। নগরীর মতিঝিল, ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, মিরপুর, বনশ্রী, উত্তরার বিভিন্ন নামি-দামি স্কুলেই ব্যক্তিগত গাড়িগুলোর ভিড় বেশি। ধানমন্ডির অধিকাংশ ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ, ধানমন্ডি গভ. বয়েজ স্কুল, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মিরপুর রোডের রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মহাখালীর শাহীন স্কুল, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল, উত্তরার স্কলাস্টিকাসহ নগরীতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা নামকরা স্কুলগুলোর সামনেই অভিভাবকদের গাড়ির ভিড় হয়। রাজধানীর দুর্বিষহ যানজটের জন্য শিক্ষাঙ্গনকেন্দ্রিক অবৈধ পার্কিং সমস্যাকেও দায়ী করা হয়।

স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রায় ১৪ হাজার প্রাইভেট কার দিনে অন্তত চারবার শিক্ষাঙ্গনে যাওয়া-আসা করে। এর ফলে রাজধানীর সড়কসংলগ্ন ভালো স্কুলগুলোর সামনে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। স্কুলবাস চালুর মাধ্যমে স্কুল গেটকেন্দ্রিক যানজট কমাতে ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন বোর্ড (ডিটিসিবি-বর্তমানে ডিটিসিএ) অনেক দূর এগিয়ে গেলেও পরে সেটি মুখ থুবড়ে পড়ে। প্রায় এক যুগ পরও যানজট লাঘবে স্কুলবাস সার্ভিস চালু করা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) আজিমপুর থেকে মিরপুর পর্যন্ত ১৪টি স্কুলবাস চালু করলেও সেই বাস সার্ভিস এখন রাস্তায় নেই। জানা গেছে, রাজধানীতে স্কলাস্টিকা, আগা খান স্কুল, কোডা, সোডা, ইউডাসহ বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগে থেকেই নিজস্ব বাস সার্ভিস চালু করেছে। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ও তাদের শিক্ষার্থীদের আনা-নেওয়ায় বাস সার্ভিস প্রবর্তন করেছে। কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা প্রাইভেট কারে আসা-যাওয়া করে। স্কুলবাস সার্ভিস বাস্তবায়ন হলে একটি স্কুলবাসে অন্তত ৩০ শিক্ষার্থী বহন করা যাবে। অথচ এই ৩০ জনকে স্কুলে নিয়ে আসতে যেতে তাদের প্রাইভেট গাড়ির অন্তত ১২০টি ট্রিপ দিতে হয়। স্কলাস্টিকায় পড়ে ফাহমিদা হোসেনের ছেলে সাইমুন। তিনি বলেন, ছেলে স্কুলে যাওয়া শুরু করলে আমরা ব্যাংক ঋণ করে গাড়ি কিনেছি। কারণ তার স্কুলে যাতায়াত যেন নিরাপদ হয়। রাজধানীর গণপরিবহন কি শিশুদের যাতায়াতের উপযুক্ত? স্কুলবাস যদি নিরাপদ, পরিচ্ছন্ন এবং সাশ্রয়ী হয় তাহলে অবশ্যই ছেলেকে তাতেই পাঠাব। কিন্তু কর্তৃপক্ষকে আগে এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে।

ডিটিসিবির সাবেক অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. সালেহ উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যানজট নিরসনে রাজধানীতে স্কুলবাস নামানোর উদ্যোগ ভালো। কিন্তু বাস নামানোর আগে সার্বিক বিষয়ে তথ্য নিয়ে খুঁটিনাটি পরিকল্পনা করতে হবে। এই বাসগুলো রাখার জায়গা নির্ধারণ, জনবল, জ্বালানিসহ সার্বিক খরচ কীভাবে উঠবে তা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। স্কুলবাস বা শিক্ষার্থী বহনকারী বাস যদি সেই রাস্তাতেই পার্কিং করে রাখা হয় তাহলে সেটা কোনো সুফল বয়ে আনবে না। এ জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ, অভিভাবকদের সঙ্গে বিস্তারিত বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমাদের অনেক সিদ্ধান্ত সঠিক পরিকল্পনার অভাবে সফলতা পায় না।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর