মঙ্গলবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

জাদুঘরে মহারানির ঢোপকল

বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের এমন ব্যবস্থা বাংলাদেশের মধ্যে শুধু রাজশাহী পৌরসভা এবং দিনাজপুরের কোথাও কোথাও ছিল

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

জাদুঘরে মহারানির ঢোপকল

রাজশাহীতে ১৮৭৬ সালে ব্রিটিশরা যখন পৌরসভা প্রতিষ্ঠা করে তখন এখানকার প্রধান সমস্যা ছিল সুপেয় পানির। পানীয়জলের প্রধান উৎস ছিল পদ্মা নদী আর পুকুর ও দিঘিগুলো। অবস্থাসম্পন্ন বাড়িগুলোতে ছিল ইঁদারা, কুয়া ও নলকূপ। প্রতি বছরই নগরবাসীকে ভুগতে হতো ডায়রিয়া, আমাশয়, কলেরাসহ নানা পানিবাহিত রোগে। ১৯৩৪ সালে রাজশাহী পৌরসভার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়ে রায় ডি. এন. দাশগুপ্ত নগরবাসীর দুর্দশা লাঘবে গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে সুপেয় পানির কল স্থাপন করেন। এই উদ্যোগে এগিয়ে আসে রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশন। তারা শহরের ধনী ব্যক্তিদের প্রতিও সহায়তার আহ্বান জানান। সবচেয়ে বেশি সহায়তা দেন তৎকালীন পুঠিয়ার মহারানি হেমন্ত কুমারী। তিনি একাই দান করেন ৬৫ হাজার টাকা। ১৯৩৭ সালে মহারানি হেমন্ত কুমারীর সহায়তায় স্থাপিত হয়েছিল এমন অনেক ঢোপকল।

বোয়ালিয়া থানার পূর্ব প্রাচীর ঘেঁষে আছে একটি ঢোপকল। এক সময় বিনামূল্যে বিশুদ্ধ পানির উৎস হিসেবে এই ঢোপকল ব্যবহার হয়েছে। তবে এটিসহ রাজশাহী মহানগরীর প্রায় সব ঢোপকল দিয়েই পানি বের হয় না। বোয়ালিয়া থানা-সংলগ্ন ঢোপকলের জায়গাটি ঘিরে স্থানীয় নগেন্দ্রনাথ গড়ে তুলেছেন চা-শিঙ্গাড়ার দোকান। ঢোপকলের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আগে কত সহজে পানি পাওয়া যেত। গরিব মানুষের কত উপকার হতো, এখন আর পানি আসে না। গরমের দিন পানির জন্য গরিব মানুষ হাহাকার করে মরে।’

ব্রিটিশ আমলে ঢোপকলের মাধ্যমেই রাজশাহী মহানগরীর মোড়ে মোড়ে মিলত বিশুদ্ধ পানি। কিন্তু এখন উপযোগিতা হারিয়েছে প্রাচীন ঐতিহ্যের ঢোপকলগুলো। রাস্তা সম্প্রসারণসহ নানা কারণে প্রতিনিয়ত ভাঙা পড়ছে ঢোপকল। স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখতে এখন জাদুঘরে স্থান মিলেছে ঢোপকলের।

সেই সময় ঢোপকলে পানি সরবরাহ ব্যবস্থার পাইপগুলো ছিল কাস্ট আয়রনের এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যগুলো পিতলের  তৈরি ছিল। সিমেন্টের তৈরি ঢোপকলগুলো ছাড়া অন্য সবকিছু ইংল্যান্ড থেকে তৈরি করে আনা হয়।

বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের এমন ব্যবস্থা বাংলাদেশের মধ্যে শুধু রাজশাহী পৌরসভা এবং দিনাজপুরের কোথাও কোথাও ছিল। পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলায়ও ছিল এ ধরনের ঢোপকল। রাজশাহীতে গত এক যুগে ভেঙে ফেলা হয়েছে প্রায় ৬০টি ঢোপকল।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র-১ সরিফুল ইসলাম বাবু বলেন, রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য অনেক ঢোপকল ভেঙে ফেলতে হয়েছে। এখন সব বাড়িতেই পানি সরবরাহ থাকায় এগুলোর ব্যবহার নেই। তিনি বলেন, ঢোপকল আর ব্যবহারের জন্য নগরীতে রাখা হবে না। এর ভিতরে শ্যাঁওলা জমে যায়। পানি পড়ে ফুটপাত নষ্ট হয়। তাই একে এখন শুধু প্রদর্শনীর জন্য রাখা হবে। বরেন্দ্র জাদুঘরে দুটি, সিঅ্যান্ডবি মোড় থেকে ডিআইজি অফিস পর্যন্ত তিনটি এবং কাজলায় মাহবুর রহমানের আর্কাইভে একটি ঢোপকল প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর