মঙ্গলবার, ৭ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

যাত্রী ছাউনি এখন ব্যবসা কেন্দ্র

রাশেদ হোসাইন

যাত্রী ছাউনি এখন ব্যবসা কেন্দ্র

রাজধানীর যাত্রী ছাউনি দখল করে অবাধে চলছে ব্যবসা-বাণিজ্য। গুলিস্তান ও পল্টন মোড়ের ছবি -জয়ীতা রায়

রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়সংলগ্ন ফুটপাতে পুরনো বই ও স্টেশনারি সামগ্রী বিক্রির দোকান। দোকানের কারণে পথচারীরা স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে পারেন না। এই ভিড়ের মধ্যে বাসে যাত্রী ওঠানামার জন্য নির্দিষ্ট স্থান রয়েছে, যেখানে যাত্রীরা অপেক্ষা করবেন। যাত্রীদের জন্য যাত্রী ছাউনিগুলো তৈরি করা হয়েছে। বাস্তবে সেখানে মানুষ বসা তো দূরের কথা দাঁড়ানোরই কোনো সুযোগ নেই। যাত্রী ছাউনি এখন ব্যবসা কেন্দ্রে রূপান্তরিত হয়েছে। যাত্রী ছাউনি ক্ষুদ্র অংশ করে সেখানে কেউ পুরনো বই বিক্রি করছেন। কেউ আবার ডায়েরি, কলম, ব্যাগ, বিক্রি করছেন। যাত্রী ছাউনি এখন ব্যবসা কেন্দ্রে রূপান্তরিত হয়েছে। বেঞ্চের ওপর বিভিন্ন ধরনের বিক্রয় সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। যাত্রীরাও উপায়ন্তর না দেখে যত্রতত্র জায়গা থেকে গাড়িতে উঠছেন। এতে সব সময় যানজট লেগেই থাকছে। শুধু এ সড়কই নয়, বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটের সামনে একটি যাত্রী ছাউনি রয়েছে। সেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন গন্তব্যে যান। যাত্রীদের বসার জন্য যাত্রী ছাউনি রয়েছে। তবে সেটি দখল করে বসেছে পাঞ্জাবি-পায়জামার দোকান। পাশেই বিভিন্ন বাস কোম্পানির টিকিট কাউন্টার। যাত্রীরা সিরিয়াল ধরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকেন। এতে নিয়মিত যানজট লাগে। নিরাপদে বাসে উঠতে রাজধানীতে রয়েছে দেড় শতাধিক যাত্রী ছাউনি। তদারকির অভাবে এসব যাত্রী ছাউনি থেকেও কাজে আসছে না। এর কোনোটি ভাঙাচোরা ও ময়লার ভাগাড়। অপরিচ্ছন্ন থাকায় এসব যাত্রী ছাউনি দখলে নিয়েছে ভবঘুরেরা। অনেক ছাউনিতে বসছে ভাসমান দোকান। কোনো কোনো ছাউনিতে মাদকসেবীদের আড্ডা। কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে যাত্রী ছাউনির সুফল পাচ্ছেন না যাত্রীরা। নগরবাসী বলছেন, রোদ-বৃষ্টি থেকে বাঁচতে ও অপেক্ষায় থাকতে যাত্রী ছাউনি কোনো কাজেই আসছে না। সেখানে বসার মতো কোনো পরিবেশ নেই।

সরেজমিন দেখা যায়, রাজধানীতে জনসংখ্যা বাড়লেও পর্যাপ্ত যাত্রী ছাউনি ও ফুটপাত নেই। নগরীতে নামমাত্র ছাউনি আছে ১৫০ থেকে ১৬০টি। এর মধ্যে দুই সিটি করপোরেশন নির্মাণ করেছে ১০০টির মতো। ৫০ বা ৬০টি নির্মাণ করেছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়াও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের অধীনে নির্মিত হয়েছে ১৯টি যাত্রী ছাউনি। এসব ছাউনিতে অবস্থানের জন্য যাত্রীদের আকৃষ্ট করতে ওয়াইফাই, ফোন চার্জসহ নানা সুবিধা দেওয়ার কথা থাকলেও এর কোনোটিই সেসব ছাউনিতে দেখা যায়নি। নগরীতে যে ছাউনিগুলো রয়েছে তার অধিকাংশ ভাঙাচোরা কিংবা ময়লা আবর্জনায় ঠাসা। কোথাও আবার দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে দোকানপাট। দিনের বেলায় দখল নিচ্ছে ভবঘুরে, আর সন্ধ্যা হলেই বসে মাদকসেবীর আড্ডা। বৃষ্টিতে এগুলো একেবারেই অকার্যকর, নেই দাঁড়ানোর মতো অবস্থা।

গণপরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক স্থানে যাত্রী ছাউনি নির্মাণ-সংস্কার ও দখলমুক্তসহ যাত্রীদের ব্যবহারের উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। ছাউনিগুলোতে রুটের ম্যাপ দেওয়া, সেখানে কোন গাড়ি কখন আসবে সে তথ্য দেওয়ার ব্যবস্থাসহ আরও কিছু সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। যাত্রী ছাউনিতে যেন বাসগুলো থামে সে জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তা নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এবং বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এম শামসুল হক বলেন, টেকসই ঢাকা গড়ে তুলতে হলে আমাদের ঢাকা চাকা বা হাতিরঝিলের দিকে দেখতে হবে। সেখানে কোনো প্রতিযোগিতা নেই। সে রাস্তার মাঝে থেকে যাত্রী তুলে না। মানুষ যাত্রী ছাউনিতে গিয়েই দাঁড়ায়। চালকও যাত্রীদের দিকে তাকান না। কারণ ড্্রাইভিং থেকে তার পয়সা আসছে না। বেতন থেকে তার পয়সা হয়। ঢাকার অন্যান্য জায়গায় দেখা যায় চালক প্রতি যাত্রীকে তার ইনকাম সোর্স হিসেবে দেখে। তাই এ ধরনের প্রতিযোগিতা চলতে থাকে- যে যত বেশি যাত্রী তুলতে পারবে তার ইনকাম তত বেশি হবে। যাত্রী ছাউনি যদি ব্যবহৃত করতে হয় তাহলে আমাদের বাস রুট রেশনালাইজেশন করতে হবে। বাস স্টপেজ অনুসারে থামবে। এসব যাত্রী ছাউনির দিকে আমাদের নজর দিতে হবে। যেমন ধরা যাক হাতিরঝিল অথবা গুলশানের যাত্রী ছাউনি। এসব যাত্রী ছাউনি যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে। যাত্রীরা সেখানে অবস্থান করে গাড়িতে উঠতে পারছেন। অন্যান্য জায়গায় তা কেন হচ্ছে না। আমাদের দেখতে হবে কোথায় সমস্যা। যাত্রী ছাউনিগুলো ভালোভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে কি না সেটার কার্যকর তদারকি করতে হবে।

সর্বশেষ খবর