মঙ্গলবার, ৪ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

দৃষ্টিনন্দন ‘চৈতীর বাগান’

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

দৃষ্টিনন্দন ‘চৈতীর বাগান’

রাজশাহী নগরীর উপকণ্ঠে ছোট্ট এক বাগানের ভিতরে গড়ে তোলা হয়েছে আরেক রাজশাহী। সবুজ নগরীর মানুষের কাছে দৃষ্টিনন্দন স্থান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে সেই বাগান। বাগান বিলাসী মতিউর রহমান চৈতী নিজের নামেই গড়ে তুলেছেন এই বাগান। প্রায় ১২ বিঘা জমির ওপর তার এই বাগান। তিনি জানান, তার পৈতৃক সম্পত্তিতে শখের বশেই এটি গড়ে তুলেছেন। যা আয় হয় তার প্রায় সবই খরচ করেন এই বাগানে। সেই বাগানের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্রাংশে যেন রূপ নিয়েছে এক খন্ড বাংলাদেশ। যা মুগ্ধ করেছে দর্শনার্থীদের।

নগরীর জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দূরে পবা উপজেলার সিলিন্দায় এই ‘চৈতীর বাগান’। গ্রামীণ পরিবেশে রঙিন বিনোদনকেন্দ্র। দুই পাশে ছোট-বড় অসংখ্য গাছের ভিতর দিয়ে রাস্তাটি এঁকেবেঁকে বয়ে গেছে বাগানের প্রধান ফটক পর্যন্ত। সেখানে ঢুকতেই চোখ আটকে যায়। মনের মাঝেও এনে দেয় প্রশান্তির দোলা। মনে হবে যেন আনন্দের এক স্বপ্নরাজ্যে এসে পড়েছি। এখানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণসহ মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন স্মৃতির খন্ডচিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কর্নারের সঙ্গেই আছে পাখিদের আবাসস্থল। সেখানে পাখিরা সারাক্ষণ কিচিরমিচির শব্দে মুখর থাকছে। এতে আনন্দের মাত্রা কয়েকগুণ বেড়ে যাচ্ছে। তারপরই কারুকার্য খচিত সৌদি আরবের নিদর্শন হিসেবে স্থাপন করা হয়েছে ‘সৌদিগেট’। গেটটি পার হতেই ডানদিকে আছে ছোট্ট পরিসরে রাজশাহীর ‘শহীদ কামারুজ্জামান স্মৃতি মনুমেন্ট’। এখানে শহীদ কামারুজ্জামানের জন্ম ও শহীদ হওয়ার সাল-তারিখ সন্নিবেশিত আছে। তার পাশেই জাতীয় চার নেতার কারাবাসের চিত্র। সেখানে স্থাপিত হয়েছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের মডেল। আরও আছে কাঠের চৌকি। তার ওপরে ছেঁড়া বিছানা, কাঁথা, বালিশ, থালা, বাটি। কারাগারের বাইরের দিকটায় লোহার শিকের সঙ্গে মরিচা পড়া তালা দিয়ে বন্ধ করা। দেখেই মনে হবে যেন সে সময়ের জীবন্ত কারাবাসের চিত্র। মনে হবে ১৯৭৩ সালের ৩ নভেম্বর কলঙ্কিত জেলহত্যার কথা।

রয়েছে সান বাঁধানো পুকুর ঘাট। সেখানে লাল শাপলা ফুটে আছে। শাপলাগুলোর পাপড়িতে সূর্যের কিরণ পড়ে রুপার মতো ঝিকমিক করে উঠছে। বাগানটির পথের দুই পাশে অসংখ্য রঙিন ফুল, বাহারি গাছপালা। হাঁটতে হাঁটতে মনে হবে, এ পথ যদি না শেষ হয় তবে ভালোই হতো! পথের দুই পাশে আছে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বহু নিদর্শন। স্থান পেয়েছে রানী হেমন্ত কুমারীর ঐতিহাসিক ‘ঢোপকল’। রয়েছে ‘কুলা’ চত্বর। 

টাইলস্ করা গোল বৃত্তে স্বচ্ছ পানির মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির রঙিন সামদ্রিক মাছ ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার মাঝখানে ফুটে আছে সাদা শাপলা। দৃষ্টি কাড়ছে সবার। কিছু দূর হাঁটতেই দৃষ্টি আটকে যাবে বাঙালির লোকজ ঐতিহ্যের সব কারুকার্যে। এখানে এক প্যান্ডেলেই আছে বাঙালি নারীদের কাজের হাতিয়ার জাঁতি, ঢেঁকি, কুলা, পুরুষদের ব্যবহৃত লাঙ্গল, মই, মাথাল, হুঁকাসহ বিভিন্ন নিদর্শন। তার পাশেই আছে বর্তমান সরকার এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা। নৌকাটিতে বৈঠাসহ রঙিন ছাউনিতে আবৃত। এ ছাড়াও আছে খড়ের ছাউনিবেষ্টিত বাহারি কাপড়ে সজ্জিত ছোট-বড় অসংখ্য টেন্ট। সেখানে বসে আড্ডা দেওয়ার ব্যবস্থা করা আছে। শিশুদের খেলাধুলার জন্য রয়েছে হরেক রকমের দোলনা, ঢেঁকিসহ নানা ধরনের খেলনা সামগ্রী। এ ছাড়াও তরুণ-তরুণীদের প্রথম পছন্দ ‘লাভ কর্নার’।

সর্বশেষ খবর