শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১১ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

যানজটের নগরীতে উড়ালসড়কে ঢাকা পার

বিশেষ প্রতিনিধি

যানজটের নগরীতে উড়ালসড়কে ঢাকা পার

ছবি : রোহেত রাজীব

যানজটের নগরীতে ঢাকার মাটি স্পর্শ না করেই যদি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পৌঁছে যাওয়া যায় তাহলে কতই না স্বাচ্ছন্দ্যের হয় ব্যাপারটা। সেই আনন্দের উপলক্ষ নিয়েই আসছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শেষে উত্তরবঙ্গের যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন ঢাকার ওপর দিয়েই উড়ালসড়কে দ্রুততম সময়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে উঠে যেতে পারবে। সেই লক্ষ্য নিয়েই সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) বাস্তবায়ন হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পটি। আগামী সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। গত শনিবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এই ঘোষণা দেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা আশা করছি, আগামী সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও হয়ে ফার্মগেট র‌্যাম্প পর্যন্ত যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। এই অংশটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এ বছর ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ফার্মগেট পর্যন্ত আমাদের টার্গেট। মাঝখানে হাতিরঝিলের অংশ নিয়ে সংশোধনী নিয়ে ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রস্তাব আছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেই বিষয়টি দেখছেন এবং নিষ্পত্তি তিনিই করছেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, গাজীপুর থেকে কাওলা এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি উঠে যাবে, এরপর এই গাড়ি ঢাকা-চট্টগ্রামের কুতুবখালীতে গিয়ে নামবে। তাতে ঢাকা শহরের যানজট পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে এবং এখানে যানবাহনে চাপ অনেক কমে যাবে। এটি ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এর সঙ্গে এসে লিংকড হয়ে যাবে।

মাঝে বেশ কয়েক বছর নষ্ট হওয়ার পর অবশেষে বিমানবন্দর থেকে যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী পর্যন্ত নির্মাণাধীন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একাংশ খুলে দেওয়া হচ্ছে। অক্টোবরে মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে মতিঝিল রুট পুরোপুরি চালুর আগের মাস সেপ্টেম্বরে চালু হবে এক্সপ্রেসওয়ের বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও অংশ। ২০০৯ সালে নেওয়া এই প্রকল্পটি চালু হওয়ার কথা ছিল ২০১৩ সালে। নানা জটিলতায় প্রায় এক যুগ পিছিয়েছে নির্মাণকাজ। এই এক দশকে নগরীর যানজট বেড়েছে। যদিও এই সময়ে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল লাইন এমআরটি-৬ এর কাজ প্রায় শেষ। এরই মধ্যে আগারগাঁও পর্যন্ত রুট চালু হয়ে গেছে। অক্টোবরের মধ্যে পুরো পথে ট্রেন চলবে। এর পাশাপাশি আরও দুটি রুটে মেট্রোরেলের কাজ শুরু হয়েছে। বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত এই রুটে যুক্ত হয়েছে পূর্বাচলও। এই দুটি রুটের একাংশ মাটির ওপর দিয়ে এবং একাংশে ট্রেন চলবে পাতাল পথে।

সরকার মোট ছয়টি রুটে মেট্রোরেলের পরিকল্পনা করলেও বিমানবন্দর সড়কে দ্রুত চলাচলের জন্য এলিভিটেড এক্সপ্রেসওয়ে হাতে নেয়। এটি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা থেকে কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-কমলাপুর-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত যাবে। অন্যদিকে আশুলিয়া থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে বিমানবন্দরে এসে এ প্রকল্পের সঙ্গে মিলবে। ফলে, আশুলিয়া থেকে যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী পর্যন্ত পুরো পথটিই উড়াল সড়কের আওতায় আসবে।  ঢাকা-এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। এতে উঠানামার জন্য ২৭ কিলোমিটারের ৩১টি র‌্যাম্প রয়েছে। এসব র‌্যাম্পসহ এক্সপ্রেসওয়েটি প্রায় ৪৭ কিলোমিটার দীর্ঘ। এর মধ্যে বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা থেকে বনানী রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ৭ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার এবং দ্বিতীয় ধাপে বনানী রেলস্টেশন থেকে মগবাজার রেল ক্রসিং পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ৫ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার মিলিয়ে ১৩ দশমিক ৩০ কিলোমিটার চালু হবে সেপ্টেম্বরে।

প্রকল্পটি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা শহরের যানজট কমার পাশাপাশি নাগরিকদের যাতায়াতের সময় ও খরচ হ্রাস পাবে বলে আশার কথা জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী। আশা করা হচ্ছে, দেশের প্রথম এই উড়াল পথ চালু হলে অসহনীয় যানজট থেকে মুক্তি পাবে রাজধানীবাসী। বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত ভ্রমণ করা যাবে মাত্র ১০ মিনিটে। এর মাধ্যমে নগরবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্নও পূরণ হবে। প্রকল্পটি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে রাজধানীর যানজট অনেকাংশে কমে যাবে এবং ভ্রমণের সময় ও খরচও হ্রাস পাবে। পাশাপাশি এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে।

প্রকল্পের পুরো পথই রেললাইন হচ্ছে ঘেঁষে। প্রকল্পটির বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যানবাহনকে নির্ধারিত হারে টোল দিতে হবে।

সর্বশেষ খবর