মঙ্গলবার, ১১ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

সোনাভানের নগরী টঙ্গী

আফজাল. টঙ্গী

সোনাভানের নগরী টঙ্গী

রাজধানী ঢাকার অতি নিকটবর্তী গাজীপুর মহানগরের সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত টঙ্গী শিল্প নগরী। যা পুথি কাব্যের নায়িকা সোনাভানের সেই কহর দরিয়ার তীরে অবস্থিত। যে কহর দরিয়ার বর্তমান নাম তুরাগ নদ। যার গুরুত্ব এখন গোটা মুসলিম দুনিয়ায় ছড়িয়ে আছে বিশ্ব ইজতেমার মাধ্যমে। টঙ্গী শব্দটি ভূ-উৎপত্তিগতভাবে ‘টাঙ্গী’ শব্দ থেকে এসেছে। কথিত আছে, বর্তমান পাকিস্তানের ‘টাঙ্গী’ নামক স্থান থেকে প্রায় ৪০০ বছর আগে সৈয়দ শাহ সুফি বোরহান উদ্দিন নামক এক বুজুর্গ আলেম এসেছিলেন এই সোনাভানের শহর কহর দরিয়ার পাড়ে। উক্ত বুজুর্গ দরবেশের স্থানটি ভালো লাগায় এখানেই তিনি তার বসবাসের আস্তানা স্থাপন করেন। বোরহান উদ্দিন দরবেশ তাঁর অবস্থান ব্যক্ত করার জন্য সবসময় নাকি বাঁশের লাঠির মাথায় একটি ঝুলনা উপরে ঝুলিয়ে বা টাঙিয়ে রাখতেন। কথিত আছে যে, ঝুলনা টাঙ্গানোর কারণে তাঁকে ‘টাঙ্গীওয়ালা’ দরবেশ বলে ডাকা হতো। আবার অনেক ইতিহাসবিদ বলেন, ‘টাঙ্গী’ নামক স্থান থেকে আসার কারণে তাঁকে সবাই ‘টাঙ্গীওয়ালা’ বলে ডাকত। আসলে ‘টাঙ্গী’ শব্দ থেকে ‘টাঙ্গীওয়ালা’ শব্দের উৎপত্তি। ‘টাঙ্গী’ শব্দের অপভ্রংশই ‘টঙ্গী’। পুথি শাস্ত্রে সোনাভানের কথা একাধিকবার উঠে এসেছে। পুথি কাব্যবিদ গরীবুল্লাহ ও ফয়জুল্লাহ উল্লেখ করেছেন যে, সোনাভান ছিলেন এই কহর দরিয়ার পরগনার জমিদার। শক্তিশালী, বুদ্ধিমতী, সুন্দরী এবং বহুগুণের অধিকারিণী ছিলেন সোনাভান। তার এসব গুণের কথা ছড়িয়ে পড়েছিল সুদূর আরব পর্যন্ত। মহানবী (সা.) এর বংশধর বীর আবু হানিফা তাঁর শক্তি পরীক্ষার জন্য যুদ্ধ করতে এসেছিলেন এই তুরাগ নদে অর্থাৎ কহর দরিয়ার তীরে।

সোনাভানের সঙ্গে যুদ্ধে হেরে গিয়ে বন্দি হন আবু হানিফা। টঙ্গী বাজার বর্তমান ব্রিজের পশ্চিম পাশে কিংবদন্তি পুথি শাস্ত্রের নায়িকা সোনাভানের বসতভিটার ধ্বংসাবশেষ আছে। যেখানে বর্তমান সড়ক ও জনপথের টঙ্গী উপবিভাগ প্রকৌশলীর অফিস বিদ্যমান। সোনাভানের বসতঘরের ভিটায় ছোট ছোট ইটের দেয়ালে ১টি বটবৃক্ষ গজিয়েছিল, যা সোনাভানের স্মৃতির স্বাক্ষর বহন করত কিন্তু ২০০৮-২০০৯ সালে সওজের অফিস ভবনটি নির্মাণকালে সোনাভানের রেখে যাওয়া সব স্মৃতি ধ্বংস করে ফেলে। পশ্চিম পাশে শান বাঁধানো দীঘি এখনো স্মৃতি বহন করছে। সোনাভানের বসতভিটার পশ্চিম পাশে বোরহানউদ্দিন দরবেশের মাজার আছে। যেখানে সারা দিন ভক্ত আশেকান, আলেমরা মাজার জিয়ারত করে থাকেন। কিন্তু বস্তিবাসীদের অনধিকার প্রবেশের কারণে মাজারের পবিত্রতা বিনষ্ট হচ্ছে। ১৯৬০-এর দশকে তৎকালীন ডিআইটি ২২০ একর জমি ও বাড়িঘর হুকুম দখল করে ক্ষুদ্র এবং বৃৃহদায়তন শিল্পনগরী বানানোর জন্য। পরিণত হয় টঙ্গী শিল্পনগরী। ১৯৬৫ সালে বিশ্ব ইজতেমার মাধ্যমে গোটা মুসলিম দুনিয়ার পরিচিতি লাভ করে টঙ্গী।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর