মঙ্গলবার, ১৮ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

রাজধানীজুড়ে আন্তজেলা বাস কাউন্টার

যানজটের জন্য দায়ী বাস কাউন্টার সরাতে মেয়রের নির্দেশনা উপেক্ষিত

হাসান ইমন

রাজধানীজুড়ে আন্তজেলা বাস কাউন্টার

রাজধানীজুড়ে দূরপাল্লার বাস কাউন্টারগুলোর সামনে থেকে যাত্রী ওঠানামার কারণে যানজট বাড়ছে। আন্তজেলা বাসের কোনো কাউন্টার শহরের মধ্যে না রাখার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হচ্ছে না। গতকাল নগরীর পান্থপথ থেকে তোলা ছবি : জয়ীতা রায়

রাজধানীর কল্যাণপুর, কলাবাগান, পান্থপথ, ধানমন্ডি, বাড্ডা, নর্দ্দা, কমলাপুরসহ প্রায় সব কটি সড়কে রয়েছে আন্তজেলা বাস কাউন্টার। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) বলছে, শুধু শহরের ভিতরেই রয়েছে ৬০ শতাংশ বাস কাউন্টার। যেগুলো থেকে নিয়মিত যাত্রী ওঠানামা করেন। যদিও বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জুলাই থেকে কুমিল্লা ও সিলেটগামী আন্তজেলা বাসের কোনো কাউন্টার শহরের ভিতরে থাকবে না। এরই মধ্যে মাসের ১৭ দিন পার হলেও কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। কাউন্টার শহরের ভিতরে রয়ে গেছে। জানা যায়, গত ১৩ ডিসেম্বর বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির ২৫তম সভা শেষে দক্ষিণ সিটির মেয়র ফজলে নূর তাপস ঘোষণা দেন, ১ এপ্রিল থেকে শহরের ভিতরে আর কোনো আন্তজেলা বাস কাউন্টার থাকবে না। এরপরই গত ১ মার্চ বাস রুট কমিটির সঙ্গে আবারও বৈঠকে বসে বাস মালিক ও শ্রমিক নেতারা। ওই বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত হয় ২ মে থেকে কুমিল্লা ও সিলেটগামী বাস কাউন্টার থাকবে না শহরে। এরপর কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জুলাই থেকে কার্যকর করার কথাও জানা যায়। কিন্তু এর মধ্যে জুলাই মাসের ১৭ দিন চলে গেলেও কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। কমলাপুর থেকে কুমিল্লাগামী তিশা প্লাস কাউন্টার এখনো কমলাপুরে রয়েছে। তারা নিয়মিত এই কাউন্টার থেকে যাত্রী  তোলেন। তিশা প্লাস কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা এক কর্মী বলেন, আমাদের কাউন্টার কমলাপুরে রয়েছে। কাউন্টার সরানোর বিষয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি। সিলেটগামী গ্রিনলাইন পরিবহনের কাউন্টার এখনো কল্যাণপুরে রয়েছে। একই সঙ্গে কলাবাগান ও পান্থপথে তাদের কাউন্টার সচল রয়েছে। পরিবহনটি এসব কাউন্টার থেকে নিয়মিত যাত্রী ওঠানামা করে থাকে। গ্রিনলাইন কল্যাণপুর কাউন্টারের ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম বলেন, সিলেটগামী বাস রাত ১০টার পর কলাবাগান ও পান্থপথ এলাকা থেকে ছাড়ে। কল্যাণপুর হয়ে আরও কয়েকটি কাউন্টার ঘুরে রাজধানী থেকে বের হয়। কাউন্টার সরানোর বিষয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি।

এ বিষয়ে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক সাবিহা পারভীন বলেন, সর্বশেষ সিদ্ধান্ত হয়েছে, জুলাই থেকে শহরের ভিতর কুমিল্লা ও সিলেটগামী বাসের কোনো কাউন্টার থাকবে না। যদিও এরই মধ্যে জুলাই মাসের কয়েক দিন চলে গেল। এর বাস্তবায়নে কোনো গতি পরিলক্ষিত হয়নি। তবে বাস্তবায়নের দায়িত্ব হচ্ছে সিটি করপোরেশনের মেয়র ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের। যেহেতু কোনো অগ্রগতি দেখছি না, তাই আমি টিম পাঠাব।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ বলেন, কুমিল্লা ও সিলেটগামী পরিবহনগুলোর কাউন্টার শহরের ভিতরে থাকবে না- এ বিষয়ে আমরা বাস রুট কমিটির সঙ্গে একমত পোষণ করেছি। এখন এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। পরিবহন মালিকদের চিঠি দিচ্ছি। তবে এর মধ্যে নোয়াখালীগামী পরিবহনের ঝিগাতলায় কাউন্টার অপসারণ করা হয়েছে। বাকিগুলো প্রক্রিয়ায় আছে। 

এ প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, বাস কাউন্টারগুলো জুলাই থেকে সরে যাওয়ার কথা থাকলেও তা একটু বিলম্বিত হচ্ছে। কারণ সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের সংস্কার কাজ এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। একই সঙ্গে টার্মিনালে যাদের কাউন্টার দেওয়া হবে তাদের দরপত্র কার্যক্রম চলছে। আশা করছি, চলতি মাসের মধ্যে সায়েদাবাদ টার্মিনালের কাজ শেষ হবে। একই সঙ্গে বাস কাউন্টারগুলো টার্মিনালের ভিতরে নিয়ে আসতে সক্ষম হব। ডিটিসিএ সূত্রে জানা যায়, আন্তজেলা বাস টার্মিনালগুলোকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা অনুযায়ী, কেরানীগঞ্জের বাঘাইর, নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর, তুরাগের ভাটুলিয়া, রূপগঞ্জের ভুলতা ও সাভারের হেমায়েতপুরে নতুন বাস টার্মিনাল তৈরি করা হবে। এ জন্য একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও বিস্তারিত নকশার কাজ করেছে ডিটিসিএ। সংস্থাটির করা সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাত্র ৪০ শতাংশ আন্তজেলা বাস বিদ্যমান তিন টার্মিনাল ব্যবহার করে। বাকি ৬০ শতাংশ বাস শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে পরিচালিত হয়। ঢাকার রাজারবাগ, আরামবাগ, ফকিরাপুল, গোলাপবাগ, বাড্ডা, মালিবাগ, চট্টগ্রাম রোড, কুড়িল বিশ্ব রোড, পান্থপথ, কলাবাগান, আসাদগেট, শ্যামলী, কল্যাণপুর, টেকনিক্যাল, মিরপুর-১ নম্বর এলাকা ও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব বাস চলাচল করে। এগুলোই শহরের ভিতরে যানজট ও সড়কে বিশৃঙ্খলার অন্যতম কারণ।

এদিকে ধারণক্ষমতায় রাজধানীর সবচেয়ে বড় আন্তজেলা বাস টার্মিনাল গাবতলী। এটিতে একসঙ্গে ৪০০ বাস রাখা যায়। ২২ একর জায়গার ওপর গড়ে ওঠা এ বাস টার্মিনাল দিয়ে প্রতিদিন ৪০ হাজার যাত্রী বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করেন। সেখানে বিভিন্ন কোম্পানির টিকিট কাউন্টার রয়েছে ২৪০টি। দ্বিতীয় বৃহৎ আন্তজেলা বাস টার্মিনাল সায়েদাবাদে বাস ধারণক্ষমতা ২০০টি। যদিও প্রতিদিন প্রায় ৪০ হাজার যাত্রী এ টার্মিনাল ব্যবহার করেন। মোট টিকিট কাউন্টার রয়েছে ১০৮টি। অন্যদিকে ৯ একর জায়গার ওপর গড়ে ওঠা মহাখালী আন্তঃজেলা টার্মিনালের ধারণক্ষমতা ২০০ বাসের। প্রতিদিন এ টার্মিনাল ব্যবহার করেন গড়ে ২৫ হাজার যাত্রী। মহাখালী টার্মিনালে বাস কাউন্টার আছে ৪০টি।

সর্বশেষ খবর