মঙ্গলবার, ১৮ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

‘কর্ণফুলী লুকআউট’

ইমরান এমি, চট্টগ্রাম

‘কর্ণফুলী লুকআউট’

চট্টগ্রামের বিনোদন ও ক্রীড়াঙ্গনে নতুন হাওয়া লেগেছে। নগরবাসীর চিত্ত বিনোদনের জন্য একের একের এক নেওয়া হচ্ছে নানা উদ্যোগ। মাঠ সংকট কাটিয়ে উঠতে উন্মুক্ত করা হচ্ছে পরিত্যক্ত ও দখল হওয়া মাঠ। এবার নতুন করে আশার আলো ছড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে চট্টগ্রামের লাইফলাইন খ্যাত কর্ণফুলী নদী ঘিরে নেওয়া একটি প্রকল্পের মাধ্যমে। কর্ণফুলী পাড়ে বিশ্ববিখ্যাত লন্ডন আইয়ের আদলে নাগরদোলাসহ ‘কর্ণফুলী লুকআউট’ প্রকল্প হাতে নিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক। সিটি করপোরেশনের ব্যয়ে জেলা প্রশাসনের এ প্রকল্প নগরবাসীর জন্য নতুন মাত্রা নিয়ে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, আমরা কর্ণফুলী লুকআউট প্রকল্পের পুরো এলাকা সবুজে পরিণত করব। নাগরিকদের আনন্দ দিতে যা যা করা প্রয়োজন সেটিও দেখব। তিনি বলেন, কর্ণফুলী নদী তীরবর্তী উন্মুক্ত জমির ওপর গ্রিন জোন ও বিস্তীর্ণ পার্ক নির্মিত হলে এটি নগরবাসীর বিনোদনের বিশেষ স্থান হয়ে উঠবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের পর শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার সুযোগ বাড়বে। জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, কর্ণফুলী নদীর পাড়ের ফিরিঙ্গিবাজার এলাকার বিআইডব্লিউ ঘাট থেকে সদরঘাট পর্যন্ত ১২.৪৫ একর সরকারি খাস জমিতে ‘কর্ণফুলী লুকআউট’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ফেরিস হুইল (বিশালাকার নাগরদোলা) যা বিশ্ববিখ্যাত লন্ডন আইয়ের আদলে তৈরি করা হবে। এ ছাড়া কিডস্ জোন, টেনিস, বাস্কেটবল, ভলিবল কোর্ট, ক্লাব হাউস তৈরি করা হবে। থাকবে মুক্তমঞ্চ, বোট মিউজিয়াম, ফুট কোর্ট, পার্কিং, পিকনিক স্পট ও ওয়াকওয়ে। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ কোটি টাকা। পার্কের পাশাপাশি থাকবে তিনটি ফুটবল খেলার মাঠও। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে কর্ণফুলী নদীর তীর দখল ও দূষণের কবল থেকে রক্ষা পাবে- এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে খাসজমি জেলা প্রশাসনের মালিকানায় থাকলেও প্রকল্প নির্মাণে অর্থ ব্যয় করবে সিটি করপোরেশন। এ প্রসঙ্গে মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, কর্ণফুলী নদী সুরক্ষিত রেখে নদীর সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার সুযোগ করে দিতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিস্তীর্ণ সবুজ পার্ক ও খেলার মাঠ গড়ে তোলা হবে।

বোট মিউজিয়াম প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক বলেন, এটির নাম দিচ্ছি আমরা বোট অব বেঙ্গল। সব রকম নৌকার স্থিরচিত্র সংগ্রহ করে বোট মিউজিয়ামে রাখা হবে। ইতোমধ্যে সেটি নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। নাগরিকরা যাতে শুয়ে-বসে প্রকৃতি উপভোগ করতে পারেন সে জন্য আমাদের এই প্রচেষ্টা। খাসজমিতে অপদখল ও নদীদূষণ প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন বাস্তবায়নে আমরা কর্ণফুলী লুকআউট প্রকল্প হাতে নিয়েছি। প্রকল্পের নাগরিক সুবিধা প্রদানের কাজটি করবে সিটি করপোরেশন। তাদের তহবিল থেকে তারা তা করবে।

৬০ লাখের বেশি মানুষের বসবাস চট্টগ্রাম নগরে। বিভিন্ন ছুটির দিনে বা অবসর সময় কাটানোর কোনো জায়গা ছিল না সেভাবে। পাশাপাশি চট্টগ্রামে এক সময় শতাধিক খেলার মাঠ থাকলেও তাতে ছিল নানা সমস্যা ও দখলদার কবলিত। নতুন জেলা প্রশাসক চট্টগ্রামে যোগ দিয়েই প্রথমে মাঠ সংকট কাটিয়ে তোলার নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে নগরবাসীর দাবি ছিল, কাজীর দেউড়ি আউটার স্টেডিয়ামে সব ধরনের মেলা বন্ধ করে তরুণ প্রজন্মের খেলাধূলার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার। চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি হিসেবে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মো. ফখরুজ্জামান সাবেক সিটি মেয়র আ. জ. ম নাছির উদ্দীনকে সঙ্গে নিয়ে সেই কাজ করেছেন, যা ছিল নগরবাসীর প্রাণের দাবি। আউটার স্টেডিয়াম মাঠ দখলমুক্ত করে খেলার জন্য উপযোগী করার জন্য নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। এখন মাঠটির সংস্কার কাজ চলছে। এরপর নগরের পলোগ্রাউন্ড মাঠ নিয়ে নানা পরিকল্পনা করছেন তিনি। শহরের বাইরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুন্ডে গড়ে তুলেছেন দৃষ্টিনন্দন ডিসি পার্ক। যা এরই মধ্যে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে বিনোদন প্রেমীদের। এ ছাড়াও চট্টগ্রামের ১৯৫টি ইউনিয়নে মিনি স্টেডিয়াম, কিডস জোন করার কাজও চলছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর