মঙ্গলবার, ২২ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

কবে নামবে ডিএনসিসির স্কুলবাস?

দফায় দফায় চলছে মিটিং, ধীরগতি প্রকল্পে

জয়শ্রী ভাদুড়ী

কবে নামবে ডিএনসিসির স্কুলবাস?

ছবি : জয়ীতা রায়

সকাল থেকে স্কুলগামী ও অফিসগামীদের যাতায়াতে যানজটে অচল হয়ে যায় রাজধানী। তাই যানজট নিরসনে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমাতে স্কুলবাস নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এ বছরের শুরুতে চারটি স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য এ বাস নামানোর পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু আট মাসেও দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই এ প্রকল্পে।

এ বিষয়ে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘পরীক্ষামূলক স্কুলবাস সার্ভিস চালুর জন্য প্রস্তুতি চলছে। স্কুলবাস সার্ভিস চালুর অংশীজন হচ্ছে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক সবাই। সব অংশীজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। আশা করছি, দ্রুতই শিক্ষার্থীদের জন্য আমরা স্কুলবাস সার্ভিসটি চালু করে দিতে পারব। শিক্ষার্থীরা সবাই মিলে স্কুলবাসে যাওয়া-আসা করলে যানজট কমার পাশাপাশি তারা আনন্দ পাবে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুসম্পর্ক সৃষ্টি হবে।’ প্রকল্পে ধীরগতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্কুলশিক্ষার্থীদের বাসে শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে অভিভাবকদের বোঝাতে হচ্ছে। অভিভাবকরা ভরসা না পেলে, নিশ্চিত না হলে শিশুদের দিবে কেন? তাদের সঙ্গে আমরা অনেক মিটিং করেছি, সম্প্রতি আরেকটি মিটিং আছে। আমরা সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে খুব দ্রুতই স্কুলবাস সার্ভিস চালু করব।’ 

প্রকল্পের আওতায় আসা চারটি স্কুল হলো- ঢাকার চিটাগং গ্রামার স্কুল, স্কলাস্টিকা, স্যার জন উইলসন স্কুল ও বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল টিউটোরিয়াল। পর্যায়ক্রমে বড় স্কুলগুলোকে এর আওতায় নিয়ে আসা হবে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এই বাস সার্ভিস চালু হবে।

স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রায় ১৪ হাজার প্রাইভেট কার দিনে অন্তত চারবার শিক্ষাঙ্গনে যাওয়া-আসা করে। এর ফলে রাজধানীর সড়কসংলগ্ন ভালো স্কুলগুলোর সামনে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। স্কুলবাস চালুর মাধ্যমে স্কুল গেটকেন্দ্রিক যানজট কমাতে ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন বোর্ড (ডিটিসিবি-বর্তমানে ডিটিসিএ) অনেকদূর এগিয়ে গেলেও পরে সেটি মুখ থুবড়ে পড়ে। প্রায় এক যুগ পরও যানজট লাঘবে স্কুলবাস সার্ভিস চালু করা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) আজিমপুর থেকে মিরপুর পর্যন্ত ১৪টি স্কুলবাস চালু করলেও সেই বাস সার্ভিস এখন রাস্তায় নেই। জানা গেছে, রাজধানীতে স্কলাস্টিকা, আগা খান স্কুল, কোডা, সোডা, ইউডাসহ বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগে থেকেই নিজস্ব বাস সার্ভিস চালু করেছে। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ও তাদের শিক্ষার্থীদের আনা-নেওয়ায় বাস সার্ভিস পরিচালনা করছে। কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা প্রাইভেট কারে, রিকশায় আসা-যাওয়া করে। স্কুলবাস সার্ভিস বাস্তবায়ন হলে একটি স্কুলবাসে অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী বহন করা যাবে। অথচ এই ৩০ জনকে স্কুলে নিয়ে আসা-যাওয়ায় তাদের প্রাইভেট গাড়ির অন্তত ১২০টি ট্রিপ দিতে হয়।

ডিএনসিসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘চারটি ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে এই পাইলট প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। রুট, বাসের সংখ্যা, নিরাপত্তা অনেক বিষয় খেয়াল রাখতে হচ্ছে। বাসের হেলপার হিসেবে নারীদের নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।’

স্কলাস্টিকায় পড়ে ফাহমিদা হোসেনের ছেলে সাইমুন। তিনি বলেন, ছেলে স্কুলে যাওয়া শুরু করলে আমরা ব্যাংকঋণ নিয়ে গাড়ি কিনেছি। কারণ, তার স্কুলে যাতায়াত যেন নিরাপদ হয়। রাজধানীর গণপরিবহন কি শিশুদের যাতায়াতের উপযুক্ত? স্কুলবাস যদি নিরাপদ, পরিচ্ছন্ন এবং সাশ্রয়ী হয় তাহলে অবশ্যই ছেলেকে তাতেই পাঠাব। কিন্তু কর্তৃপক্ষকে আগে এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে।

ডিটিসিবির সাবেক অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. সালেহ উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যানজট নিরসনে রাজধানীতে স্কুলবাস নামানোর উদ্যোগ ভালো। কিন্তু বাস নামানোর আগে সার্বিক বিষয়ে তথ্য নিয়ে খুটিনাটি পরিকল্পনা করতে হবে। এই বাসগুলো রাখার জায়গা নির্ধারণ, জনবল, জ্বালানিসহ সার্বিক খরচ কীভাবে উঠবে তা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। স্কুলবাস বা শিক্ষার্থী বহনকারী বাস যদি সেই রাস্তায়ই পার্কিং করে রাখা হয় তাহলে তা কোনো সুফল বয়ে আনবে না। এ জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ, অভিভাবকদের সঙ্গে বিস্তারিত বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমাদের অনেক সিদ্ধান্ত সঠিক পরিকল্পনার অভাবে সফলতা পায় না।’

সর্বশেষ খবর