মঙ্গলবার, ২২ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

তবুও জলাবদ্ধতায় বন্দরনগরী

কারণ চিহ্নিত হলেও মিলছে না সমাধান

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

তবুও জলাবদ্ধতায় বন্দরনগরী

চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধ সমস্যা অন্তত তিন দশকের। জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্প নেওয়া হয়, খরচ করা হয়, সমস্যাও চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয় না। ফলে প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তি পোহাতে হয়। জলাবদ্ধতা যেন চট্টগ্রাম নগরবাসীর কপাল লিখন। গত ৩ থেকে ৬ আগস্ট কখনো থেমে কখনো মুষলধারায় বৃষ্টি পড়ে নগরজুড়ে ব্যাপক জলাবদ্ধতা হয়।

জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতার কারণ অনুসন্ধানে গত বছর চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি জলাবদ্ধতার কিছু কারণ চিহ্নিত করেছিল। এর মধ্যে আছে- অতিবর্ষণ ও কর্ণফুলী নদীতে পূর্ণিমার সময় অতিরিক্ত জোয়ার, খালের পরিধি কমে আসা, নগরের খাল-নালা-নর্দমা বেদখল, খাল-নালায় বর্জ্য ফেলা এবং নিয়মিত খাল-নালা থেকে মাটি উত্তোলন না করা। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামসকে কমিটির প্রধান করা হয়। অন্যদিকে, সিডিএর চলমান মেগা প্রকল্প কর্তৃপক্ষ জলাবদ্ধতার কিছু কারণ চিহ্নিত করে। এর মধ্যে আছে- খালের অবৈধ দখল, সব ধরনের আবর্জনা খালে ফেলা, খালকে ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহার করা, অপরিকল্পিত-অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, খালের সঙ্গে ড্রেনেজ ব্যবস্থার পরিকল্পিত সংযোগ না থাকা, খাল-ড্রেন নিয়মিত পরিষ্কার না করা, গ্যাস-বিদ্যুৎ ও পানির পাইপের মাধ্যমে ব্রিজ-কালভার্টে পানির প্রবাহ ব্যাহত হওয়া, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, শিল্পবর্জ্যরে অপরিকল্পিত নিষ্কাশন ও জোয়ার-ভাটার প্রভাব এবং উঁচু-নিচু ভূমির রূপ। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর মোবারক আলী বলেন, জলাবদ্ধতার কারণগুলো চিহ্নিত। তবুও জলাবদ্ধতা হচ্ছে। এ জন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে। কোনোভাবেই খাল-নালা-নর্দমায় বর্জ্য ফেলা যাবে না। কিন্তু আমরা প্রতিনিয়তই তা করছি। ফলে পানি প্রবাহিত হচ্ছে না। আইন ও নিয়ম করে সব হয় না। প্রথমে জনগণকেই সচেতন হতে হবে।

জানা যায়, নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ১৯ লাখ টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

প্রকল্পের অধীনে নির্মাণ করা হয়েছে পাঁচটি স্লুইসগেট, ৩৬টি খালের মধ্যে ২৫টির উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ প্রায় শেষ, ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার ড্রেনের মধ্যে ৩০২ কিলোমিটার ড্রেন-নালার কাজ শেষ, ১৭৬ কি.মি. রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, ৪৫টি ব্রিজ, ছয়টি কালভার্ট, ৪২টি সিল্ট ট্র্যাপ, ১০ দশমিক ৭৭ কিলোমিটর নতুন ড্রেন, ৮৫ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার খালের পাশে সড়ক নির্মাণ ও ১৫ দশমিক ৫০ কিলোমিটার ড্রেন সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।

কিন্তু প্রকল্পের বাইরে ২১টি খাল এবং ১ হাজার কিলোমিটার নালা-ড্রেনের অবস্থা বেহাল। ফলে পানি দ্রুত প্রবাহে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া চউকের ১২টি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের আরও ২৩টি স্লুইসগেট নির্মাণ করার কথা। সেগুলোর কাজ এখনো শেষ হয়নি।

সর্বশেষ খবর