মঙ্গলবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

সরকারি হাসপাতালে নিয়ন্ত্রণহীন দালাল

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

সরকারি হাসপাতালে নিয়ন্ত্রণহীন দালাল

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতাল আশপাশের জেলার কোটি মানুষের ভরসাস্থল। হাসপাতালটিতে বিভিন্ন কথিত ক্লিনিক, অ্যাম্বুলেন্স ও ফার্মেসির দালালদের উৎপাত চরমে। দালালদের সঙ্গে হাসপাতালের কিছু স্টাফও জড়িত আছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি দালাল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে হাসপাতাল প্রশাসন। দালালদের আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হচ্ছে। অভিযুক্ত স্টাফদের বদলি ও শোকজ করা হচ্ছে।

সূত্রমতে, ১৯৯২ সালে এ হাসপাতালটি ২৫০ শয্যার হাসপাতাল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ২০০৮ সালে এটি ৫০০ শয্যায় উন্নীত হয়। কুমেক হাসপাতালে কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়ি, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরের রোগী আসে। এখানে এসে তাদের অধিকাংশ বিভিন্ন কথিত ক্লিনিক, অ্যাম্বুলেন্স ও ফার্মেসির দালালের খপ্পরে পড়েন। কোনো একজন রোগী এলে দালালরা তার সঙ্গে এমন অভিনয় করেন যেন পরম আত্মীয়। দৌড়ে গিয়ে ওষুধ নিয়ে আসবে। টেস্ট না লাগলেও টেস্ট করাতে নিয়ে যাবে। গ্রামের সরল রোগী ও তার স্বজনরা ভাবতে শুরু করেন, এখনো সমাজে এত ভালো মানুষ আছে! তাদের মোহভঙ্গ হয় ওষুধ বা টেস্টের বিল দেখে। ৫০০ টাকার ওষুধ দিয়ে ৩ হাজার টাকার বিল ধরিয়ে দেন। যার সাধারণ এক্স-রে করার দরকার নেই তার হাতে এমআরই রিপোর্ট ধরিয়ে দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে দালালরা। তারা নিরক্ষর রোগী ও তাদের স্বজনদের বেশি বেকায়দায় ফেলছেন।

সূত্র আরও জানায়, দালাল চক্রের উৎপাত বেশি হয় বিকাল বেলায়। কারণ, তখন ডাক্তারদের ডিউটি কম থাকে। রোগীকে ডাক্তার নেই বলে কথিত ক্লিনিক থেকে পরীক্ষা করিয়ে আনে। রোগীর স্বজন বরুড়ার নুলয়া চাঁদপুরের কামাল হোসেন বলেন, প্রশাসন ইচ্ছা করলে এখানে দালালমুক্ত করতে পারে। প্রয়োজনে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করতে পারে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন কুমিল্লার সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর মাসুম বলেন, কুমেক হাসপাতাল, কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতাল ও উপজেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে স্বল্পমূল্য সেবা নিতে আসেন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের লোকজন। সেখানে তাদের ভোগান্তিতে ফেলে দালালরা। বিশেষ করে সরকারি হাসপাতালের সামনে স্থাপিত বেসরকারি অধিকাংশ হাসপাতাল মানহীন। তাদের দালালদের তৎপরতা বেশি নজরে পড়ে। এ বিষয়ে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে কঠোর নজরদারি করতে হবে।

কুমিল্লা মেডিকেল হাসপাতালের পরিচালক ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, দালালের উৎপাত রয়েছে- এটা সত্য। আমরা হয়তো এক দিনেই তা নির্মূল করতে পারব না। এটা নির্মূল করতে সময় লাগবে। আমরা দালাল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। সম্প্রতি ৮৬ জনকে ধরে পুলিশে দিয়েছি। তারা ছাড়া পেয়ে এসে আবার শুরু করে। অভিযান চালিয়ে তাদের দৌড়ের ওপর রাখছি। আমাদের কিছু দুষ্ট স্টাফ আছে, তাদের বিরুদ্ধেও বদলিসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নিচ্ছি। কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. নাছিমা আকতার বলেন, সরকারি হাসপাতালগুলোর সামনে কিছু ক্লিনিক গড়ে উঠেছে। এগুলোর বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছি। দালাল নিয়ন্ত্রণেও আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করব।

সর্বশেষ খবর