মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

রাজধানীতে খোঁড়াখুঁড়ি ও খানাখন্দে দুর্ভোগ

► অধিকাংশ সড়কের চিত্র বেহাল ► সড়ক খনন নীতিমালা মানছে না কেউই

হাসান ইমন

রাজধানীতে খোঁড়াখুঁড়ি ও খানাখন্দে দুর্ভোগ

কাজী আলাউদ্দীন রোড - ছবি : জয়ীতা রায়

রাজধানীর সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি ও খানাখন্দের দুর্ভোগে নগরবাসী। এসব সড়কের কোথাও কেটে ফেলে রাখা হয়েছে, কোথাও আবার কাজ শেষে ভরাট করলেও মাটি উঁচু-নিচু হয়ে আছে। আবার অনেক সড়কে ছোট-বড় অসংখ্য খানাখন্দ রয়েছে। এসব গর্তে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। একই চিত্র প্রধান সড়ক ও পাড়া-মহল্লার। এ ছাড়া সড়ক খনন নীতিমালা না মেনে যখন তখনই খোড়া হচ্ছে সড়ক। এতে কর্মস্থলে বের হওয়া নগরবাসী প্রতিদিনই দুর্ভোগে পড়ছেন।

সরেজমিন দেখা যায়, ছয় মাসের বেশি সময় ধরে হাতিরঝিলের রামপুরা থেকে মগবাজার রেলক্রসিং পর্যন্ত সড়কের একটি লেন খোঁড়াখুঁড়িতে তছনছ। রাস্তাটি কেটেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। সম্প্রতি মাটি ফেলা হলেও রাস্তাটির কোথাও উঁচু কোথাও নিচু। কোথাও আবার বড় বড় গর্ত। দিনদুপুরে চলা দায়। আর বৃষ্টি হলে এই সড়কে চলাচল একেবারে অসম্ভব। তাজউদ্দীন আহমদ সরণির হাতিরঝিল পয়েন্ট থেকে মগবাজার ক্রসিং পর্যন্ত খোঁড়া, গভীরতাও অনেক। যানবাহন যাতে গর্তে না পড়ে সেজন্য রাস্তার পাশে দেওয়া হয়েছে বাঁশের বেড়া। শ্রমিকরা সেখানে পাইপ বসাচ্ছেন। এখানে সবসময় লেগে থাকছে যানজট। একই অবস্থা রামপুরা থেকে ব্রিজের পাশে ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনের অংশে। সড়কের দুই পাশে বিদ্যুৎ বিভাগের খোঁড়াখুঁড়ি চলায় সড়ক সংকীর্ণ হয়ে গেছে। এতে প্রতিদিনই রামপুরা-বনশ্রী সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। বনশ্রী ই, এফ, জি, এইচ, এম ব্লকেও বিদ্যুৎ বিভাগের কাজ শেষে মাটি ভরাট করলেও বৃষ্টিতে অসংখ্য খানাখন্দ রয়েছে। মতিঝিল সোনালী ব্যাংক মোড় থেকে দৈনিক বাংলা পর্যন্ত গত কয়েক মাস আগে কেটেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। মাটি ভরাট করলেও গত এক মাসের বৃষ্টিতে উঁচু নিচু ছোট-বড় খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে।

পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া এলাকার বিভিন্ন রাস্তা দুই মাস ধরে কাটা। টিকাটুলী থেকে গেন্ডারিয়া যাওয়া সড়কের এক পাশ দীর্ঘদিন ধরে খোঁড়া। যত্রতত্র রাখা পাইপ-বালু-ইট-সুরকি। সতীশ চন্দ্র সাহা লেনের পুরোটাই খোঁড়া। এলাকার মানুষের ভোগান্তি এতে চরমে। ফুটপাত দিয়েও চলাচল করা কষ্টকর। একই অবস্থা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের হেডকোয়ার্টার থেকে শুরু করে ইস্কাটনের নিউ এলিফ্যান্ট রোডের ফুটপাত কেটে গভীরে পাইপ বসানোর কাজ চলছে দীর্ঘদিন ধরে। তাই ফুটপাতটি ব্যবহার অযোগ্য। বংশালের কাজী আলাউদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় ভেটেরিনারি হাসপাতাল থেকে নাজিরাবাজার চৌরাস্তা পর্যন্ত সড়কে ড্রেন মেরামত চলছে চার মাস ধরে। স্থানীয়রা জানান, এক দিন কাজ হয় তো ১০ দিন হয় না। এর আগে বংশালের রোকনুদ্দিন মসজিদ থেকে নাজিরাবাজার চৌরাস্তা পর্যন্ত সড়কটি খোঁড়াখুঁড়ির কারণে বন্ধ ছিল এক বছর। এটি এখনো চলাচলের উপযুক্ত নয়।

পুরান ঢাকার বাবুবাজার ব্রিজ থেকে ইসলামপুর পাইকারি মার্কেট ধরে পাটুয়াটুলী সড়কের নিচে ড্রেন নির্মাণ চলছে। ব্যস্ত সড়কটিতে বড় যানবাহন চলাচলের সুযোগ নেই। কোতোয়ালি থানার সামনের সড়কটি মাস দুয়েক আগে কার্পেটিং শুরু হলেও শেষ হয়নি। সূত্রাপুরের কাগজীটোলার সড়কেও চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। এ ছাড়া মিরপুর, সেগুনবাগিচা, লালবাগ, চকবাজার, কদমতলী, গোপীপাড়া, ধানমন্ডি, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, গ্রিনরোড, মেরাদিয়া, মতিঝিল, শান্তিনগর, ফার্মগেট, রাজাবাজার, আজিমপুর ও জুরাইনের বিভিন্ন সড়কে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। যাত্রাবাড়ী থেকে কাজলা পর্যন্ত রাস্তাটির করুণদশা। মগবাজার ওয়্যারলেস গেট থেকে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের দিকে যাওয়ার রাস্তাটি কাটাকাটির পর আর ঠিক হয়নি। শান্তিনগর, চামেলীবাগ এলাকায়ও অনেক সড়ক কাটাকাটির কারণে চলাচলের অযোগ্য।

অথচ ‘ঢাকা মহানগরীর সড়ক খনন নীতিমালা-২০১৯’-এ উল্লেখ রয়েছে, রাজধানীতে দিনে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করা যাবে না। বর্ষা মৌসুমেও (১ মে থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর) সড়ক কাটাকাটি করা যাবে না। তবে জরুরি প্রয়োজনে খনন করতে হলে ক্ষতিপূরণসহ ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত ফি দিতে হবে। আর কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে খননকাজ শুরু করলে জরিমানা গুনতে হবে মূল খরচের পাঁচ গুণ। তাছাড়া, মাইকিং করে এলাকার মানুষকে খননকাজ সম্পর্কে জানাতে হবে। আগেই সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে। পাশাপাশি সাইনবোর্ডে খননকাজ ও ঠিকাদার সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে হবে। নীতিমালায় আরও বলা হয়, রাস্তা খোঁড়ার কাজ মাসের পর মাস ফেলে রাখা যাবে না। রাতে খননের পর রাতেই যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে। আগের মতো উপযুক্ত ও ঝকঝকে-তকতকে করে রাস্তাটি তৈরি করতে হবে, যেন বোঝার উপায় না থাকে রাস্তাটি কাটাকাটি হয়েছে। আর যুক্তিসংগত কারণে কাজ শেষ করতে না পারলে কমপক্ষে পাঁচ দিন আগে সিটি করপোরেশনের ওয়ান স্টপ সেলকে জানাতে হবে।  

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, যে সংস্থাগুলো রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করেছে, তারা সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছে। কিন্তু তাদের যে সময় দেওয়া হয়েছিল তারা সময়মতো শেষ করতে পারেনি। এ জন্য নগরবাসীর ভোগান্তি বেড়েছে। এর জন্য সংস্থাগুলোকে জরিমানা করা হবে। যেসব রাস্তায় খানাখন্দ তৈরি হয়েছে সেগুলো আগামী বছরের প্রথম দিক থেকে সংস্কারের কাজ শুরু হবে।

সর্বশেষ খবর