মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ময়লার ভাগাড় পান্থকুঞ্জ পার্ক

পার্কের জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে টয়লেট ও এসটিএস

হাসান ইমন

ময়লার ভাগাড় পান্থকুঞ্জ পার্ক

রাজধানীর সার্ক ফোয়ারা-সংলগ্ন পান্থকুঞ্জ পার্কটি অযত্ন অবহেলায় ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। পার্কটি এখন ভাসমান মানুষের নিত্যদিনের বিচরণ ক্ষেত্র ছবি : জয়ীতা রায়

রাজধানীর কারওয়ানবাজার সার্ক ফোয়ারার পাশে অবস্থিত পান্থকুঞ্জ পার্ক এখন ময়লার ভাগাড়। পার্কটির একপাশে বর্জ্য রাখার স্থান সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) ও পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। এই এসটিএসসহ আশপাশের এলাকায় যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে ময়লা-আবর্জনা। পার্কের অধিকাংশ গাছ বিভিন্নভাবে মারা গেছে, কেটে ফেলা হয়েছে। সন্ধ্যা নামলেই ছিনতাইকারী, ভাসমান যৌনকর্মীদের আনাগোনা বাড়ে। মাদক সেবন ও ব্যবসার নিরাপদ স্থানে পরিণত হয়েছে এ পার্কটি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, জল সবুজে ঢাকা নামে একটি প্রকল্পের আওতায় ১৯ কোটি ২০ লাখ টাকায় পার্কটির উন্নয়ন কাজ শুরু করা হয় ২০১৮ সালে। ওই সময় চারপাশে টিন দিয়ে ঘেরা দেওয়া হয়। পার্কটিতে লাইব্রেরি, ফুলের বাগান, খাবার দোকান করার পরিকল্পনা ছিল। এক বছরের মধ্যে অবকাঠামো উন্নয়নের পরে জনসাধারণের জন্য এটি উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শুরুর কয়েক দিন পরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পিলার বসানোর জন্য কাজটি অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় বন্ধ করা হয়। কাজ বন্ধের পর অব্যবস্থাপনা আর তদারকির অভাবে পার্কটি এখন পরিত্যক্ত ভাগাড়। অন্যদিকে দীর্ঘদিন পার হলেও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ পান্থকুঞ্জ পার্ক এলাকায় শুরুই হয়নি। কিন্তু পার্কের ভিতর চলছে নানা অপরাধ ও অনৈতিক কাজ। প্রায় ৫ একর জায়গার পার্কটি পাঁচ বছর জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে আছে। ত্রিভুজ আকৃতির পার্কটির পশ্চিম পাশে রয়েছে কাঁঠালবাগান আবাসিক এলাকা, পূর্ব পাশে অভিজাত প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেল এবং দক্ষিণ দিকে বাংলামোটর। দুটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কও চলে গেছে এই পার্কের দুই পাশ দিয়ে। একটি কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ এবং অন্যটি সিআরদত্ত সড়ক।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পার্কটির চারপাশে আগে টিন দিয়ে ঘেরা থাকলেও এখন সেটি খোলা রয়েছে। পার্কটির ভিতর অংশে দেখা গেল মাটির উঁচু ঢিবি। এর পাশেই পড়ে আছে ময়লার স্তূপ। চারদিকে মানুষের মলমূত্রের উৎকট গন্ধ। আবার হাঁটার জন্য মাটি কাটা অংশে পানি জমে আছে। চারদিকে জঙ্গল হয়ে গেছে। এটি যে একটি পার্ক তা দেখে বোঝার উপায় নেই। পার্কটি বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। এটি কোনোভাবেই ব্যবহার করার উপায় নেই। টিনের ছাপড়া দিয়ে ঘর তুলে সেখানে কিছু ভাসমান মানুষ বসবাসও শুরু করেছে। এসব মানুষ টয়লেটও স্থাপন করেছে সেখানে। পার্কটির পশ্চিমাংশে নতুন করে রিকশার গ্যারেজ গড়ে উঠেছে। সেখানে রিকশা মেরামতও করা হয়। এর পাশে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের বিভিন্ন সরঞ্জাম রাখা হয়েছে। পশ্চিম-দক্ষিণ কর্নারে পাবলিক টয়লেট ও ময়লা রাখার স্থান সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) রয়েছে। এই এসটিএসসের পাশে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা ময়লা রেখে প্লাস্টিকের বোতলসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আলাদা করে থাকে। এতে পার্কে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে ময়লা। আর দক্ষিণাংশে ময়লা আবর্জনার স্তূপ রয়েছে। একই সঙ্গে পূর্ব পাশে পার্ক দখল করে নতুন করে নার্সারি গড়ে উঠেছে। পার্কটির অধিকাংশ স্থানে গাছ না থাকায় ব্যক্তিগত অনেক গাড়ি পার্কিং করতে দেখা যায়। সবচেয়ে অস্বস্তিকর অবস্থা দেখা যায় রাতের বেলা। এখানে মাদকের আড্ডা বসায় মাদকসেবীরা। এ ছাড়া অনৈতিক কাজও চলে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।

পার্কের পাশে পার্কিংয়ে থাকা একজন রিকশাওয়ালা জানান, রাতের বেলা অনৈতিক কাজের জন্য এখানে বিভিন্ন জায়গা থেকে যৌনকর্মীরা ভিড় করে। পার্কের ভিতর অনেক দিন জঙ্গল পরিষ্কার না করায় এখন এটি অপরাধের আখড়া হয়ে উঠছে। এ ছাড়া গাঁজা সেবনও চলে এখানে। স্থানীয় বাসিন্দা জিয়াউল হক জানান, ব্যস্ত এ এলাকায় এমন পার্ক আশপাশে আর নেই। এটি অবসর কাটানোর একমাত্র জায়গা ছিল। কিন্তু সেটি দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। উন্নয়নকাজ করতে গিয়ে যদি এটির এই হাল হয়, তাহলে আর উন্নয়নের দরকার কি? দ্রুত পার্কটি জনসাধারণের জন্য ব্যবহার উপযোগী করার দাবি জানান তিনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খায়রুল বাকের বলেন, পার্কটির নতুন করে নকশা প্রণয়নের কাজ চলছে। আশা করি, শিগগির সংস্কার কাজ শুরু হবে। একই সঙ্গে পার্কের ভিতরে যেসব অংশে গাছ নেই সেখানে নতুন করে গাছ লাগানো হবে।

সর্বশেষ খবর