মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

কী কাজে লাগছে বনানী তেজগাঁও রেলস্টেশন

রাশেদ হোসাইন

কী কাজে লাগছে বনানী তেজগাঁও রেলস্টেশন

ছবি : রোহেত রাজীব

বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ যানজটের শহর ঢাকা। ঢাকায় যানজটের কারণে বিকল্প যাতায়াত ব্যবস্থা হওয়া উচিত ছিল রেলওয়ে। ট্রেনে কম সময়ে শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাওয়া যায়। গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে মাত্র ১ ঘণ্টায় ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছানো যায়। এ ছাড়া এয়ারপোর্ট থেকে আধা ঘণ্টার কম সময়ে কমলাপুরে যাওয়া যায়; গাড়িতে যেখানে যেতে প্রায় ২ থেকে ৩ ঘণ্টা লাগে। রাজধানীতে পাঁচটি রেলস্টেশন থাকলেও দুটি স্টেশনের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ব্যস্ত কমলাপুরের পর বিমানবন্দর স্টেশনে অনেকগুলো ট্রেন থামে। লোকাল যাত্রীরাও বিমানবন্দর থেকে ট্রেনে ওঠেন। আর ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশনটি থেকে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে চলাচলকারী ‘মৈত্রী এক্সপ্রেস’ ট্রেনের যাত্রীদের ওঠানামা ও ইমিগ্রেশনের কাজে ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে বনানী ও তেজগাঁও বিমানবন্দরের পরিষেবা নিয়ে কথা উঠেছে। বনানী স্টেশনে মাঝেমধ্যে একটি লোকাল ট্রেন থামে। শুধু টিকিট বিক্রির কাজে ব্যবহৃত হয় এটি। তেজগাঁও স্টেশন মালামাল পরিবহনের কাজেই বেশি ব্যবহৃত হয়।

ঢাকা শহরের ভিতরে বিমানবন্দর ও কমলপুরসহ রেলের পাঁটটি স্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন আন্তর্জাতিক ট্রেন আগমন বহির্গমন কাজে ব্যবহৃত হয়। অন্য দুটি স্টেশনের মধ্যে বনানী স্টেশনে কোনো ট্রেন থামে না। মাঝেমধ্যে তুরাগ নামের একটি লোকাল ট্রেন থামে। এই স্টেশন মূলত টিকিট বিক্রি ছাড়া আর কোনো কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে না। যাত্রীদের বসার জায়গাও তেমন নেই। শহরের মাঝ বরাবর এখানে যাত্রী ওঠানামার সুবিধা থাকলে শহরের বাসে যাত্রীর চাপ কমে  যেত বলে জানান যাত্রীরা। যাত্রীরা বলছেন, এখানে অফিস সময়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে গাজীপুর পর্যন্ত প্রতি ঘণ্টায় লোকাল ট্রেন চালু হওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া নতুন করে কুড়িলের মতো জায়গায় স্টেশন করা যেতে পারে।

বনানী স্টেশনে দায়িত্বরত কর্মচারী জালাল উদ্দিন জানান, এই ট্রেন স্টেশন মূলত টিকিট বিক্রির কাজে ব্যবহৃত হয়। এখানে একটি ট্রেন থামে। তুরাগ নামের একটি ট্রেন সকাল ৮টা ২০ মিনিটে একবার আসে। বিকালে ৫টা ৪০ মিনিটে আবার স্টেশন ধরে। এখন এক্সপ্রেসওয়ের কারণে এখানে কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে সামনে আরও ভালো করে স্টেশন হবে। আগামীতে হয়তো আরও ট্রেন এই স্টেশনে ধরতে পারে।

রাজধানীর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তেজগাঁও স্টেশন। শহরে মালামাল আনার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে এই স্টেশন। মালামাল আনা বাবদ প্রতি মাসে ৩২ থেকে ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত এই স্টেশন থেকে সরকারের আয় হয় বলে জানা যায়। খাদ্য মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মালামাল এ স্টেশনে আসে। এ ছাড়া যাত্রী বাবদ প্রতি মাসে প্রায় ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা আয় হয়। তবে এ স্টেশনে কোনো আন্তনগর ট্রেন থামে না। লোকাল ট্রেনের মধ্যে তেজগাঁও স্টেশনে প্রতিদিন তিনটি ট্রেন তুরাগ, নোয়াখালী ও ভাওয়াল এক্সপ্রেস আসা-যাওয়া করে। এ ছাড়া বেসরকারি ট্রেন ছয়টি এই স্টেশনে থামে। তা হলো- মহুয়া কমিউটার, কর্ণফুলী কমিউটার, বলাকা, জামালপুর কমিউটার, তিতাস কমিউটার, দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার। বর্তমানে স্টেশনে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কারণে সুবিধা কিছু কম রয়েছে। আগামীতে নতুন স্টেশন চালু হলে সব সুবিধা যাত্রীরা পাবেন বলে জানান কর্মকর্তারা। শরিফ নামের এক রেলযাত্রী বলেন, রাজধানীর মধ্যে তেজগাঁও রেলস্টেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন। এখানে আন্তনগর ট্রেন থামা দরকার। শহরের যাত্রীরা ট্রেনে উঠতে হলে কমলাপুরে যেতে হয় অথবা বিমানবন্দরে যেতে হয়। অথচ এখানে ট্রেনে ওঠানামা করলে যাত্রীদের অনেক সুবিধা হবে। মেইন রাস্তা থেকে এখানে আসা-যাওয়ার রাস্তা ভালো করলে এখানে যাত্রী বাড়বে।

তেজগাঁও স্টেশন মাস্টার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, যাত্রী বাড়ানোর জন্য এখানে আন্তনগর ট্রেন থামার ব্যবস্থা করতে হবে। সিটি করপোরেশনের রাস্তা ঠিক করতে হবে। গাড়ির জন্য পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। এ পাশ থেকে ও-পাশে যাতায়াতের জন্য ওভারব্রিজ দিতে হবে। তেজগাঁও স্টেশন হলো- গুডস ইয়ার্ড, এখানে ১৪টি লাইন রয়েছে। এর মধ্যে ১০টি লাইন সব সময় ব্যস্ত থাকছে। শহরের মালামালের বড় অংশ এ স্টেশনের মাধ্যমে আসে। নতুন স্টেশন হলে হয়তো সুবিধা বাড়বে। তবে যাত্রী বাড়ানোর জন্য রেলের সংখ্যা বাড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই।

সর্বশেষ খবর