শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

দূষণ বাড়ছে মাস্ক উধাও!

স্বাস্থ্যঝুঁকি রোধে মাস্ক পরতে বললেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা

হাসান ইমন

দূষণ বাড়ছে মাস্ক উধাও!

ছবি : রোহেত রাজীব

চলছে হেমন্তকাল। গরম কালকে বিদায় দিয়ে শীতের আগমন ঘটছে রাজধানীতে। দিনের বেলায় তাপমাত্রা বাড়তি থাকলে সকালে শীতের আবহ থাকে শহরে। এরই মধ্যে সড়কে উড়তে শুরু করেছে ধুলাবালি। একই সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি সংস্থার উন্নয়ন কাজে ধুলায় ধূসর হচ্ছে ঢাকা। এতে বায়ুদূষণের শীর্ষে উঠছে রাজধানী। ঝুঁকিতে পড়ছে নগরবাসীর স্বাস্থ্য। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দূষিত বায়ুতে শ্বাস নেওয়ার ফলে ব্যক্তির হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসযন্ত্রের রোগ, ফুসফুসের সংক্রমণ এবং ক্যান্সারও হতে পারে। অস্বাস্থ্যকর বাতাস থেকে রক্ষা পেতে ঢাকাবাসীকে মাস্ক পরা ও ঘরে বায়ু বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

শীতের আগমনের শুরুতেই ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হতে শুরু করে। বাতাসের সঙ্গে বেড়েছে দূষিত বস্তুকণার পরিমাণ। ঢাকায় বায়ুর দূষণ এতটাই খারাপ যে, খালি চোখেই দেখা যায়। যেসব সড়কে উন্নয়নকাজ চলছে সেখানকার অবস্থা আরও ভয়াবহ। সড়কে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে ধূলিময় হয়েছে রাজধানীর অনেক এলাকা। আরেক দূষণকারী ইটভাটা রাজধানীর চারপাশ ঘিরে রেখেছে; যা প্রতিনিয়ত ছড়াচ্ছে তার কালো ধোঁয়া। স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, বায়ুদূষণের জন্য নির্মাণ খাত ৩০ শতাংশ দায়ী। ইটভাটা ও শিল্পকারখানার মাধ্যমে ২৯ শতাংশ। যানবাহনের কালো ধোঁয়া দূষণ করে ১৫ শতাংশ। নির্মাণকাজ, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, খোলা ট্রাকে মাটি-বালু পরিবহন ও  ট্রাফিক জ্যামের কারণে দূষণ বাড়ছে।

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘আইকিউ এয়ার’ দূষিত বাতাসের শহরের তালিকা প্রকাশ করে। প্রতিদিনের বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা একিউআই সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বায়ু কতটুকু নির্মল বা দূষিত, তার তথ্য প্রদান করে। একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়। আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়। স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে খুবই অস্বাস্থ্যকর বলে বিবেচনা করা হয়। আর ৩০১-এর বেশি হলে তা দুর্যোগপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। অক্টোবর মাসের গত ২৯ দিন সবচেয়ে বেশি সংখ্যক দিন দুর্যোগপূর্ণ বায়ুর মধ্যে কাটিয়েছে ঢাকাবাসী। মাসটির ৩, ৪ ও ২৪ তারিখ মোট তিন দিন রাজধানীর বায়ুর মান মাঝারি হিসেবে ছিল। বাকি ২৬ দিনই ছিল দুর্যোগপূর্ণ ও অস্বাস্থ্যকর।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বায়ুদূষণ মানুষের শরীরে অনেক ধরনের রোগ তৈরি করে। এটা সব বয়সী মানুষের জন্য ক্ষতিকর। শিশু, অসুস্থ ব্যক্তি, প্রবীণ ও অন্তঃসত্ত্বাদের জন্য বায়ুদূষণ মারাত্মক ক্ষতিকর। বায়ুদূষণ কমানো না গেলে ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়বে, যার মাশুল দিতে হবে সবাইকে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাতাসে বিভিন্ন ধরনের ধূলিকণা থাকে; এসবের পরিমাণ যখন বেড়ে যায় তখন বায়ুদূষণ হয়। কার্বন-ডাইঅক্সাইড, কার্বন-মনো অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড, ক্লোরোফ্লোরো কার্বন, বিভিন্ন যানবাহন থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া বাতাসের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। এসব বিষাক্ত এবং ক্ষতিকর পদার্থ শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে যাচ্ছে। এতে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রক্তের মাধ্যমে হৃৎপিন্ডে চলে যাচ্ছে। বায়ুদূষণের প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। দীর্ঘদিন ক্ষতিকর পদার্থ শরীরে প্রবেশের ফলে ফুসফুস, কিডনি, লিভার, হৃৎপিন্ডে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হয়। একপর্যায়ে দেখা যায় বিভিন্ন ধরনের অঙ্গ-পতঙ্গ বিকলাঙ্গ হয়ে যায় এবং মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়। প্রতিরোধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের ধুলাবালি এড়িয়ে চলতে হবে, বাইরে বের হলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। পরিবেশ দূষণ রোধ, বিশুদ্ধ অক্সিজেনের জন্য আমাদের বেশি বেশি করে গাছ লাগানো উচিত। বাড়িঘর এবং আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। রাস্তাঘাটে পানি ছিটাতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পরিবেশ এবং বায়ুদূষণ কমাতে হবে।

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষক ও ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, বাংলাদেশে বায়ুদূষণ এখন একটি উদ্বেগজনক জায়গায় আছে, অথচ রাষ্ট্র কিন্তু এখানে নির্বিকার। এ বায়ুদূষণ নিয়ে যে গবেষণা হচ্ছে বেশির ভাগই হচ্ছে বেসরকারি উদ্যোগে। সরকারি যে কয়েকটা গবেষণা হচ্ছে সেখানে অল্প জায়গাতে বায়ুমান পরিমাপ করা হচ্ছে। কিন্তু তা দিয়ে পুরো শহরের যে ক্রান্তিক অবস্থা সেটা বোঝার উপায় নেই। অথচ রাষ্ট্রর উচিত ছিল সরকারিভাবে সবাইকে নিয়ে আলোচনা করা, গবেষণা করা ও করণীয়গুলো ঠিক করা। একই সঙ্গে বায়ুদূষণ রোধে সংশ্লিষ্ট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর জোরালো ভূমিকা পালন করা।

সর্বশেষ খবর