মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

টয়লেট ব্যবস্থাপনায় পিছিয়ে ঢাকা

রাশেদ হোসাইন

টয়লেট ব্যবস্থাপনায় পিছিয়ে ঢাকা

ছবি : জয়ীতা রায়

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্টবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জেসমিন আক্তার। রাজধানীর উত্তরা থেকে নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে হয় ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিতে। মাঝে মধ্যে রাস্তায় কাকরাইল যাওয়ার পরপরই তার টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, কিন্তু আশপাশে কোথাও পাবলিক টয়লেট খুঁজে পাচ্ছিলাম না। মহাখালীর বাসস্ট্যান্ডে পাবলিক টয়লেট পাওয়া যাবে ভেবে আধা ঘণ্টা কষ্ট করে সেখানে নামি। ১০ টাকায় টিকিট কেটে পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করি। কিন্তু এত দুর্গন্ধ যে, মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়বে। রাস্তায় টয়লেটের চাপ পড়লেই মনে হয় বিপদ হাজির হলো। কোথাও টয়লেট পাওয়া না গেলে দীর্ঘ সময় চেপে ধরে রাখা লাগে।

ঢাকা শহরে পাবলিক টয়লেট সংকটের কারণে নাগরিকদের এ ভোগান্তির চিত্র প্রতিদিনের। নগরে জনসংখ্যার তুলনায় পাবলিক টয়লেট অত্যন্ত অপ্রতুল। ফলে নগরের প্রায় ২ কোটি মানুষ প্রতিনিয়ত এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়েন। কিন্তু তারপরও পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেট নির্মাণে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে ১৩৮টি পাবলিক টয়লেট রয়েছে। এর মধ্যে ডিএসসিসিতে ৯১টি, আর ডিএনসিসিতে ৪৭টি। এই দুই সিটি করপোরেশনে আরও কিছু পাবলিক টয়লেট নির্মাণের কাজ চলছে। নতুন নির্মাণ করে প্রতিটি পাবলিক টয়লেটে ভাসমান মানুষের কথা বিবেচনায় রেখে টয়লেটের অভ্যন্তরে বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি, গোসলখানা, শিশুদের দুধ খাওয়ানোর কক্ষসহ সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য টয়লেটের বাইরে স্থাপন করা হয়েছে সিসি ক্যামেরা।

যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে নিয়মিত বাড্ডা এসে অফিস করেন মাহমুদ হাসান। মাঝে মধ্যে সকালে মালিবাগ আসলে টয়লেটে চাপে তার। এ সময় মালিবাগ মোড় এলাকায় টয়লেট না থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাকে। মানসম্মত টয়লেট না থাকায় অনেক সময় চেপে থাকতে হয় তার। এতে কিডনিসহ বিভিন্ন জটিলতার মুখোমুখি পড়তে হয় তাকে।  

তিনি বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে ভালোমানের টয়লেটের ব্যবস্থা খুবই কম রয়েছে। কাছাকাছি পাবলিক টয়লেটের আরও ব্যবস্থা করা উচিত। সিটি কপোরেশনের উচিত রাজধানীতে আরও বেশি স্থানে পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থা করা। তবে নারীদের সংকট বেশি। চাইলেই যে কোনো জায়গায় যাওয়া যায় না। নারীদের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে নগরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা জরুরি। বেসরকারি এনজিও সংস্থা ওয়াটার এইড বছর তিনেক আগে পাবলিক টয়লেট নিয়ে একটি জরিপ চালিয়েছিল। সেই জরিপের তথ্য মতে, ঢাকায় বসবাসরত ও বহিরাগত মিলিয়ে ১ কোটি মানুষ প্রতিদিন চলাচল করে। কিন্তু তাদের ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত টয়লেট নেই। করপোরেশনের বিদ্যমান টয়লেটগুলোও সব সময় পরিষ্কার থাকে না। এমন পরিস্থিতিতে ঢাকা শহরে বিভিন্ন স্থানে নান্দনিক নকশায় বিভিন্ন পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করেছে ওয়াটার এইড। তাদের প্রতিটি টয়লেটে নারী-পুরুষ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য অবকাঠামো ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া এসব টয়লেটে নারীবান্ধব পরিবেশ ও নারী কেয়ারটেকার, বিশুদ্ধ খাবার পানি, সাবান, ওজু এবং গোসলের ব্যবস্থা আছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।

ঢাকা সিটিতে পাবলিক টয়লেট সংকটের মধ্যে নারীদের ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত সুরাইয়া খানম বলেন, পাবলিক টয়লেট সংকট বা ভোগান্তির কথা বলে শেষ করা যাবে না। বাসে চলার পথে সব সময় আতঙ্কে থাকতে হয়। যে খাবার খেলে টয়লেটের চাপ তৈরি হয় তা এড়িয়ে যাই। কারণ, রাস্তাঘাটে চাপ পেলে কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকে না। এ কথা কাউকে বলতেও পারি না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা চেপে বাসায় চলে যাই। এতে অনেক সময় দেখা যায় কিডনির সমস্যা হয়, প্রস্রাবে ইনফেকশন হয়। সিটি করপোরেশনের উচিত প্রত্যেক বাস স্টপেজের কাছাকাছি মানসম্মত টয়লেট তৈরি করা।

কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. শেখ মইনুল খোকন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঢাকা শহরে নারীদের চলাচলের ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা হয়। ভালো মানসম্মত টয়লেট না থাকায় অনেক সময় দেখা যায় নারীরা তা চেপে রাখেন। এতে বিভিন্ন ধরনের জটিলতার মুখোমুখি হতে হয়। চেপে রাখলে কিডনিতে উল্টো দিক থেকে চাপ দেয়। অনেক সময় চেপে রাখার ফলে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বা ইউটিআই সংক্রমণ হয়। নারীদের জন্য ভালোমানের টয়লেট স্থাপন করা প্রয়োজন। পাবলিক টয়লেট কোথায় আছে অনেকে জানেও না। মানুষকে জানানোর ব্যবস্থা করতে হবে। যেখানে যেখানে টয়লেট আছে তা ব্যবহারের উপযোগী করে তুলতে হবে।

সর্বশেষ খবর