মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিপ্লব উদ্যান কি হারিয়ে যাবে?

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

বিপ্লব উদ্যান কি হারিয়ে যাবে?

চট্টগ্রাম নগরের অন্যতম সবুজ মাঠ বিপ্লব উদ্যান। আগে এখানে প্রবেশ করলেই দেখা মিলত সবুজ ঘাসের। মন জুড়াত দৃষ্টিনন্দন সবুজে। কিন্তু এখন সেই সবুজে শোভা পাচ্ছে ইট-কংক্রিটের বাণিজ্যিক স্থাপনা। সবুজ ঘাসের বুকে নির্মাণ হচ্ছে দোকান। কমছে সবুজ ঘাস ও উন্মুক্ত স্থান।

এখন বিপ্লব উদ্যানের সবুজ ও উন্মুক্ত স্থানের আয়তন অর্ধেকে নেমে এসেছে। বিপ্লব উদ্যানে শোভা পাচ্ছে ‘সবুজ ধ্বংস করে নতুন স্থাপনা আর নয়’ শীর্ষক ব্যানার। প্রশ্ন উঠেছে, বিপ্লব উদ্যান কি হারিয়ে যাবে? ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী, উদ্যানে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশের বেশি কংক্রিট অবকাঠামো থাকতে পারবে না। আন্তর্জাতিকভাবে ২ শতাংশও অনুমোদন করে না। কিন্তু চট্টগ্রাম নগরের দুই নম্বর গেটের বিপ্লব উদ্যানের কংক্রিট অবকাঠামোর পরিমাণ প্রায় ৫৫ শতাংশ।               

জানা যায়, ১৯৭৯ সালে নগরের ২ নম্বর গেট মোড়ে প্রায় দুই একর জায়গায় বিপ্লব উদ্যানটি নির্মিত হয়। নির্মাণের পর থেকেই সেখানে প্রতিদিন বিকালে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষে মুখর থাকত। কিন্তু ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) আধুনিকায়নের নামে প্রকল্প গ্রহণ করে দুটি প্রতিষ্ঠানকে ২০ বছরের জন্য ইজারা দেয়। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে গত আগস্ট মাসে  চুক্তি সংশোধন করে আবারও একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ২৫ বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। চুক্তি মতে, চসিককে বছরে ১০ লাখ টাকা দেবে ইজারাদার।

বিপ্লব উদ্যান দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হুমায়ূন কবির বলেন, বিপ্লব উদ্যানে বর্তমানে ২০টি দোকান আছে, নতুন করে আরও ২০টি নির্মাণ করা হবে। তখন এটি আর সবুজ উদ্যান থাকবে না, এটি হয়ে যাবে বাজার। এমনিতেই এটির অবস্থা এখন বেহাল। নতুন করে দোকান দিয়ে আরও ঘিঞ্জি করা হচ্ছে। চসিকের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা শুরু হয়েছে। এটি শেষ হলেই বোঝা যাবে সবুজ কতটা কমবে-বাড়বে। কাজ শেষ হওয়ার আগেই এর বিরোধিতা করাটা উচিত হচ্ছে না। এখানে প্রকল্প গ্রহণ করার মাধ্যমে সবুজ কমবে না। সবুজ অক্ষত রেখেই কাজ করা হবে।’    

চসিক সূত্রে জানা যায়, নতুন চুক্তিমতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হবে বিপ্লব উদ্যানে। ভেঙে ফেলা দ্বিতীয় তলায় ফের স্থাপনা নির্মাণ করতে পারবে। উদ্যানে স্থাপন করা যাবে বিলবোর্ড, আয়োজন করা যাবে মেলা বা উৎসব। দোতলায় থাকবে চট্টগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংবলিত জাদুঘরসহ প্রদর্শনী কেন্দ্র। সেখানে থাকবে কফি শপ। তবে কেন্দ্রটি হবে চসিকের উদ্যোগে। দ্বিতীয় তলার ছাদে করা যাবে কিডস বা গেমিং জোন। সাবেক প্রশাসকের আমলে ভাঙা হয়েছিল বসার একটি সারি। এখন সে উন্মুক্ত স্থানে ২০০ ফুট দীর্ঘ ও ৫০ ফুট প্রস্থের স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি কাঠামো নির্মাণ করা যাবে। স্থাপনা নির্মাণের সুযোগে কাঠামোর ওপর, নিচ ও দুই পাশে পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানের লোগো প্রদর্শন করতে পারবে। ভাঙা হবে বিদ্যমান ফোয়ারা ও গ্লাস টাওয়ার। চত্বরে অনুষ্ঠান করার জন্য অস্থায়ী উন্মুক্ত মঞ্চের ব্যবস্থা করা যাবে। নতুন চুক্তি অনুযায়ী উদ্যানে বিলবোর্ড, মেগাসাইন, এটিএম বুথ, প্রদর্শনী কেন্দ্র, কিডস এক্সপেরিয়েন্স বা গেমিং জোন ইত্যাদি স্থাপন করতে পারবে। তবে এটি সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে।

সর্বশেষ খবর