মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

কুমিল্লায় সাদা ইঁদুর চাষে সাফল্য

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

কুমিল্লায় সাদা ইঁদুর চাষে সাফল্য

ইঁদুর নিধনে বাসাবাড়িতে বসানো হয় ফাঁদ। কিন্তু কুমিল্লায় যত্নসহকারে পালন করা হচ্ছে ইঁদুর। অনেকটা ব্রয়লার মুরগির মতো ট্রাংকে রেখে জামাই আদরে চাল গম খাওয়ানো হচ্ছে। তবে এগুলো দেশি প্রজাতির ইঁদুর নয়। এগুলো সুইজারল্যান্ডের সুইস অ্যালবিনো প্রজাতির সাদা ইঁদুর। কুমিল্লা নগরীর সালমানপুরে এই খামার গড়ে তোলা হয়েছে। খামারের উদ্যোক্তা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের ল্যাব সহকারী মো. আবদুল আউয়াল ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অফিস সহকারী নাসির উদ্দিন। তারা দুটি ইঁদুর দিয়ে শুরু করেন। বর্তমানে খামারে ইঁদুরের সংখ্যা ১ হাজারের বেশি। চাকরির পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে ইঁদুর চাষে বাড়তি আয় হচ্ছে। উদ্যোক্তাদের আশা বিদেশেও এই ইঁদুর রপ্তানি করতে পারবেন। জানা যায়, গত বছরের অক্টোবরে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অফিস সহকারী নাসির উদ্দিনের বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন সালমানপুরের বাড়িতে গড়ে তোলা হয় ইঁদুরের ফার্ম। নাম ‘কুমিল্লা মাইচ ফার্ম’। নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবের গবেষণার প্রয়োজন মিটিয়ে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও তারা বাণিজ্যিকভাবে সরবরাহ করেন। দেশের চারটি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের ল্যাবে এই ইঁদুর সরবরাহ করা হয়। ফার্মে ৩০-৩৫ গ্রাম ওজনের ইঁদুর পাওয়া যায়।  সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অফিস সহকারী নাসির উদ্দিনের সালমানপুরের বাড়িতে মূল ঘরের পাশে আরেকটি ছোট ঘর। সেখানে র‌্যাকে সাজানো ট্রাংক। ট্রাংকের ওপরে তারের নেট। ভিতরে সাদা ইঁদুরের বসবাস। নাসির কোনো ট্রাংকে খাবার দিচ্ছেন, কোনোটির ময়লা পরিষ্কার করছেন। আবদুল আউয়াল বলেন, আমি একজন ল্যাব সহকারী, প্রয়োজনীয় ইঁদুর নিয়ে আসতে হতো অন্য জায়গা থেকে। এগুলোর পরিচর্যা করতে গিয়ে প্রজনন প্রক্রিয়াসহ অন্যান্য বিষয়গুলো জানতে পারি। তাই নিজেরা ইঁদুর উৎপাদনের চেষ্টা করি। চারটি স্তরে মোট ৫০০ ইঁদুর বিক্রি করতে পেরেছি। প্রয়োজন অনুসারে চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে আমরা নিয়মিত সরবরাহ করছি। আমরা দুজন চাকরির পাশাপাশি এখানে সময় দেই। নাসির উদ্দিন বলেন, আবদুল আউয়ালের ল্যাবে ইঁদুর লাগে। দূর থেকে আনা কষ্টসাধ্য ও ব্যয়বহুল। তিনি আমার সঙ্গে পরামর্শ করেন। আমার বাড়িতে খামারটি চালু করি। দুজন ভোর থেকে এগুলোর পরিচর্যায় লেগে যাই। পরিচ্ছন্ন করি, খাবার দেই। তারপর অফিসে যাই। বিক্রি বাড়লে আমাদের আরও বেশি মুনাফা হবে। এই ইঁদুর বিদেশেও রপ্তানি করা যাবে। কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, ফার্মেসি বিভাগের বিভিন্ন কোর্সের অংশ হিসেবে ইঁদুর নিয়ে গবেষণা করতে হয়। কোনো একটি মেডিসিন তৈরি করা এবং এর কার্যকারিতা পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে ইঁদুর ব্যবহার করা হয়। ল্যাবে আগে ইঁদুর ছিল না, অন্যান্য ল্যাব থেকে নিয়ে আসতে হতো। এতে ইঁদুর মারা যাওয়ার ঝুঁকি ছিল। এখন ক্যাম্পাসের পাশে কম দামে পাওয়া যাচ্ছে।  কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, কুমিল্লায় ইঁদুরের খামার হওয়ায় ফার্মেসি বিভাগসহ অন্যান্য বিভাগের গবেষণা সহজলভ্য হচ্ছে। এটি অবশ্যই ভালো একটি উদ্যোগ, এমন উদ্যোগকে   আমি সাধুবাদ জানাই। তাদের দেখে স্থানীয় লোকজনও ব্যতিক্রমী উদ্যোক্তা হওয়ার উৎসাহ পাবেন।

সর্বশেষ খবর