মঙ্গলবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

যানজটের বিষফোড়া মহাখালী টার্মিনাল

নাসিমুল হুদা

যানজটের বিষফোড়া মহাখালী টার্মিনাল

ছবি : জয়তিা রায়

ঘড়ির কাঁটায় বেলা ১২টা। তীব্র যানজটে, গাড়ির হর্নে শীতের বাতাস যেন গরম হয়ে উঠেছে। সিএনজির চালকরা দরজা খুলে উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে। হর্ন দিচ্ছে আর একে অন্যকে গালাগাল করছে বাসচালকরা। এর মধ্যে মাথা গলিয়ে আগানোর চেষ্টায় ব্যস্ত মোটরসাইকেল চালকরা। শুধু এই সময় নয়, সকাল-দুপুর-রাত সবসময় যানজট লেগে থাকে মহাখালী বাস টার্মিনাল এলাকায়। রাস্তার দুই পাশে দূরপাল্লার বাস রাখায় সমাধান হয় না যানজট সমস্যার।

রাজধানীর মহাখালী আন্তজেলা বাস টার্মিনাল হয়ে উঠেছে গলার কাঁটা। একদিকে ধারণক্ষমতার বেশি বাস চলাচল, তার ওপর স্থান সংকুলান না হওয়ায় রাস্তায় পার্কিং; সব মিলিয়ে নাবিস্কো থেকে আবদুল্লাহপুর কিংবা বিমানবন্দর সড়কে যানজটের অন্যতম কারণ এ টার্মিনালটি। ফলে যানজটে নাভিশ্বাস উঠে যায় এ পথে যাতায়াতকারী যাত্রীদের। বিগত কয়েক বছর ধরে মহাখালীসহ রাজধানীর আরও দুটি আন্তজেলা বাস টার্মিনাল নগরের বাইরে সরিয়ে নেওয়ার সমীক্ষা শেষ হলেও তা বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে টার্মিনালটির কারণে সৃষ্ট যানজটে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে মানুষকে।

সরেজমিনে টার্মিনাল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি বাস টার্মিনালটি ব্যবহার করায় স্থান সংকুলান হয় না। ফলে রাস্তায় গাড়ির লম্বা লাইন ও রাস্তার দুই ধারে পার্কিং করতে হয়। এ ছাড়াও এলোমেলোভাবে বাস চলাচলের কারণে প্রতিনিয়ত যানজট লেগেই থাকে টার্মিনালের আশপাশে। যার প্রভাবে মহাখালী-বিমানবন্দর রুটেও যানজটের তৈরি হয়।

জানা যায়, বৃহত্তর ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটের বাস রাখার জন্য ১৯৮৪ সালে মহাখালী বাস টার্মিনাল স্থাপন করা হয়। বর্তমানে এ টার্মিনালটি দিয়ে ময়মনসিংহসহ উত্তরাঞ্চলের প্রায় ২০টিরও বেশি জেলার বাস চলাচল করছে। সব মিলিয়ে এতে ২০০ থেকে ২৫০ বাস রাখার মতো জায়গা আছে। তবে এ টার্মিনালটি থেকে প্রায় ১ হাজার, ক্ষেত্রে বিশেষে প্রায় দেড় হাজার বাস চলাচল করে। ধারণক্ষমতার চার থেকে ছয়গুণ বাস চলাচল করায় টার্মিনালের সামনে শহীদ তাজউদ্দীন সড়ক ও আশপাশের রাস্তায় শত শত বাস পার্কিং করতে হয় চালকদের। নাবিস্কো মোড় থেকে মহাখালী বাস টার্মিনাল পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে নিয়মিত দিনের বড় সময়জুড়েই লাইন করে বাস রাখা হয়। এতে রাস্তার দুই পাশে সড়কের একাংশ দখল হয়ে যায়। ফলে টার্মিনালে অন্য বাস ঢোকা ও বের হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়। একটি গাড়ি বের হলেও ১০টি গাড়ি ঢোকার অপেক্ষায় থাকে। একই সময়ে এ পথটি ব্যবহার করে আশপাশের বিভিন্ন সড়ক থেকে আসা যানবাহনের ভিড়ও তৈরি হয়।

টার্মিনালের গাড়ি ছাড়াও এর সামনের রাস্তা দিয়ে নাবিস্কো, তেজগাঁও, গুলশান ও ফার্মগেট থেকে আসা ঢাকার লোকাল বাসগুলোও চলাচল করে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনগুলো। যদিও বিভিন্ন অসুবিধার কারণে তেজগাঁও থেকে এখনো খুব অল্প সংখ্যক যানবাহন এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে। সব মিলিয়ে মহাখালীর যানজট যেন চরমে পৌঁছেছে।

এ পথ দিয়ে নিয়মিত চলাচলকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারহান সাইফুল জানান, টার্মিনালের সামনে রাস্তাটি ব্যবহার করে উত্তরা যেতে গেলে মহাখালীতে প্রতিদিনই যানজটের কারণে ২০-২৫ মিনিট নষ্ট হয়। এর আশপাশে রাস্তায় কোনো শৃঙ্খলা নেই। যে যার ইচ্ছামতো বাস পার্কিং করে রাখে। ভোগান্তিতে পড়ি আমরা সাধারণ মানুষ।

দুই সিটি করপোরেশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালী থেকে বাস টার্মিনাল সরিয়ে কেরানীগঞ্জের বাঘাইর, সাভারের হেমায়েতপুর ও বিরুলিয়া, নারায়ণগঞ্জের ভুলতা, কাঁচপুর সেতু ও কাঁচপুরের মদনপুরে ছয়টি আন্তজেলা বাস টার্মিনাল নির্মাণ করার কথা। সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের আওতায় বেশ কিছু বাস ও ট্রাক ডিপোও নির্মাণের কথা। তথ্য অনুযায়ী, এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ হাজার ২০০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। প্রকল্পের সমীক্ষার কাজও শেষ হয়েছে। কিন্তু দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়ায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে মানুষকে।

সর্বশেষ খবর