মঙ্গলবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

টিনের ঘরে খাঁটি রসমালাই

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

টিনের ঘরে খাঁটি রসমালাই

কুমিল্লা নগরীর মনোহরপুর। পাশাপাশি তিনটি টিনের ঘর। ভগবতী পেড়া ভান্ডার, মাতৃভান্ডার ও শীতল ভান্ডার। এই দোকানগুলোতে শত বছর আগে খাঁটি রসমালাইয়ের যাত্রা শুরু হয়। এ ছাড়া মনোহরপুরে কুমিল্লা মিষ্টি ভান্ডার, লিবার্টি মোড়ে জলযোগ, কান্দিরপাড়ে পিপাসা, নিউমার্কেটে পোড়াবাড়ি ও জেনিসসহ নগরীতে আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। নাম শুনে জিভে জল আসা রসমালাইয়ের সুখ্যাতি দেশজোড়া। অন্য জেলার কোনো দর্শনার্থী কুমিল্লায় এসেছেন কিন্তু রসমালাই নিয়ে যাননি, তা ভাবা কঠিন। কুমিল্লার রসমালাইয়ের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। নগরীর মনোহরপুরের দোকানের সামনের সড়কে প্রায় ক্রেতার সারি দেখা যায়। আসল রসমালাই পেতে দীর্ঘ লাইন পড়ে মনোহরপুর, কান্দিরপাড় ও নিউমার্কেট এলাকায়।

মনোহরপুরে মাতৃভান্ডার, ভগবতী পেড়া ভান্ডার, শীতল ভান্ডার পাশাপাশি তিনটি প্রতিষ্ঠান। পাশের কারখানায় কারিগরদের ব্যস্ততা। কেউ হাতে দুধের ছানা তৈরি করছেন। কেউ দুধ চুলায় ফুটাচ্ছেন। কেউ দুধের ঘন ক্ষীরে ছানা মেশাচ্ছেন। কারখানার বাতাসে রসমালাইয়ের মিষ্টি ঘ্রাণ। রসমালাই ছাড়া সেখানে বিভিন্ন প্রকারের মিষ্টিও তৈরি করা হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯০০ সালে প্রথম কুমিল্লায় বাণিজ্যিকভাবে রসমালাই উৎপাদন শুরু হয়। মাতৃভান্ডার, ভগবতী পেড়া ভান্ডার ও শীতল ভান্ডার ১৯৩০ সাল থেকে রসমলাই বিক্রি করে আসছে। কুমিল্লা মিষ্টি ভান্ডার ১৯৫০ সালে রসমালাইয়ের ব্যবসা শুরু করে। বংশপরম্পরায় চলছে রসমালাইয়ের ব্যবসা। শহরে বর্তমানে শতাধিক মিষ্টির দোকান রয়েছে। কুমিল্লা মিষ্টি মালিক সমিতির অধীনে ৩২টি প্রতিষ্ঠান আছে, যারা রসমালাইও তৈরি করেন। নগরীতে উৎপাদিত বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের রসমালাইয়ের মান ও স্বাদ কাছাকাছি। তবে মাতৃভান্ডারের জনপ্রিয়তা বেশি। মাতৃভান্ডারের রসমালাইয়ের জনপ্রিয়তার কারণে জেলার বিভিন্ন জায়গায় ব্যাঙের ছাতার মতো মাতৃভান্ডার গড়ে ওঠে। শুধু মাতৃভান্ডার নামের আগে পরে নানা শব্দ যুক্ত করে তারা ব্যবসা করছেন। নকল মাতৃভান্ডারের পাল্লায় পড়া ক্রেতার সংখ্যাও কম নয়। নকল মাতৃভান্ডারগুলো মহাসড়কের নিমসার থেকে পদুয়ারবাজার পর্যন্ত গড়ে উঠেছে। তবে মূল মাতৃভান্ডার কর্তৃপক্ষের দাবি, তাদের কোনো শাখা নেই।

মাতৃভান্ডারের স্বত্বাধিকারী অনির্বাণ সেন জানান, আমরা মান ধরে রেখেছি। মানুষকে ভালো জিনিস দিচ্ছি। ভালো জিনিস পেলে কাস্টমার আসবেই। কুমিল্লার শীতল ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী রতন ঘোষ জানান, কুমিল্লার রসমালাইয়ের ঐতিহ্য প্রায় শত বছরের। ৯০ বছর ধরে শীতল ভান্ডার, ভগবতী পেড়া ভান্ডার ও মাতৃভান্ডার এখানে রসমালাইসহ বিভিন্ন মিষ্টান্ন তৈরি করছে। কুমিল্লার রসমালাই বিদেশেও যাচ্ছে। গুণগতমান ঠিক রাখলে ৩৬ ঘণ্টা রসমালাই নষ্ট হয় না। পাকিস্তান আমলে আমরা ক্ষীরভোগ নামে বিক্রি করতাম। ধীরে ধীরে ক্রেতারা রসমালাই বলতে শুরু করলেন। ভালো মানের রসমালাইয়ের জন্য মনোহরপুর আসতে হবে। কুমিল্লা মিষ্টি প্রস্তুতকারী সমিতির সভাপতি মামুনুর রশীদ জানান, আমাদের সমিতির সদস্য নগরীর ৩২টি প্রতিষ্ঠান। আমাদের বাইরেও নগরীতে ৫০টির বেশি প্রতিষ্ঠান আছে। সব প্রতিষ্ঠান রসমালাই তৈরি করে। ইতিহাস গবেষক আহসানুল কবীর বলেন, কুমিল্লায় মনীন্দ্র সেন ও ফনীন্দ্র সেন প্রথম রসমালাইয়ের ব্যবসা শুরু করেন। যদিও প্রথমে এর নাম ছিল ক্ষীরভোগ। কুমিল্লা ছিল ত্রিপুরা রাজ্যের হেড কোয়ার্টার। ছিল বাণিজ্য কেন্দ্র। এখানে ব্রিটিশ কর্মকর্তা, নগরীর উচ্চবিত্তের নিকট ক্ষীরভোগ বেশ জনপ্রিয়তা পায়।

সর্বশেষ খবর