মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

গরিবের ডাক্তারের বাড়ি ফেরা

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

গরিবের ডাক্তারের বাড়ি ফেরা

ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী। কুমিল্লা নগরীর মানুষ তাকে  চেনেন গরিবের ডাক্তার আজিজ ভাই নামে। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের পদ থেকে অবসর নিয়েছেন। চাকরির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছেন তিনি। রোগীদের সেবায় নিবেদিতপ্রাণ এ চিকিৎসক কর্মকর্তা কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসাসেবায় ইতিবাচক পরিবর্তনের চেষ্টা করেছেন। সময়ে সময়ে নিজেও রোগী দেখেছেন। ৩১ জানুয়ারি চাকরিজীবনের শেষ দিনের শেষবেলায় তার কক্ষে এক যুদ্ধাহত বীর প্রতীক মোহাম্মদ শাহ্জাহানকে সেবা দিতে দেখা যায়। পেছনে চোখে পড়ে বিদায়ী সংবর্ধনার ফুল। সেখানে কথা হয় তার  সঙ্গে। অতীত স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকীর চোখের কোণে আনন্দাঅশ্রু জমে। মায়ের আদেশ পালন করতে পারায় স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানান তিনি।

ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ১৯৯৫ সালের ১৫ নভেম্বর ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগ দিই। বিসিএস পাস করে পাড়াগাঁয়ে আসায় প্রথমে খারাপ লাগল। বন্ধুরা অনেক উঁচু জায়গায়, বিদেশে পড়াশোনা করছে। আর আমি পাড়াগাঁয়ে! সেই দুঃখ বেশিদিন থাকেনি। হাসপাতালে শিশু, গরিব মানুষদের দেখি। তাদের সেবা দেওয়ার পর অন্য রকম তৃপ্তি পাই। তিনি বলেন, আমার আম্মা আমাদের গরিবের ডাক্তার বানানোর নিয়ত করেছিলেন। আমাদের ১১ ভাইবোনের মধ্যে পাঁচজনকে ডাক্তার বানিয়েছেন। অন্যরাও প্রকৌশলী এবং উচ্চশিক্ষিত। পরে কুমিল্লার ডেপুটি সিভিল সার্জন, মেহেরপুরের সিভিল সার্জন ও চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন হই।

২০২৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা মেডিকেলে যোগ দিই। ৯৬ জন দালালকে পুলিশে দিই। যদিও পুরোপুরি নির্মূল করতে পারিনি। হাসপাতালকে নতুন করে সাজানো, সার্জারি বিভাগে এন্ডোস্কপি, ল্যাপারোস্কপিক সার্জারি চালু করি। হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতা, খাবারের মানোন্নয়ন করি।

তিনি বলেন, আমার একার জন্য বেতনের বাইরে টাকার কোনো দরকার নেই। আমি মনে করেছি, গরিবের সেবা করা দরকার। হাসপাতালে রোগীরা সিরিয়াল ধরে লাইনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন। এটা আমার কাছে খারাপ লাগে। হাসপাতালে ই-টিকিটিং চালু হলে ভালো হবে। পাশাপাশি সেবার মান বাড়াতে জনবল বাড়াতে হবে। বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এটি। এখানে চাপ বাড়লে রোগীরা মেঝেতে থাকেন। হাসপাতালকে ওপরের দিকে সম্প্রসারিত করা গেলে রোগীদের কষ্ট কমবে। রোগী সুস্থ হওয়ার পরের হাসি আমাকে আলোড়িত করে। ২৯ বছরের চাকরিজীবন শেষে আমি সেই আনন্দ নিয়েই      বাড়ি ফিরেছি।

সর্বশেষ খবর