শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

অটো থ্রি হুইলারে স্থবির গাজীপুর

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, পুলিশ প্রতিদিন শত শত গাড়ি আটক করে ব্যবস্থা নিচ্ছে

আফজাল, টঙ্গী

অটো থ্রি হুইলারে স্থবির গাজীপুর

গাজীপুরে নিয়ন্ত্রণহীন লাখ লাখ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও থ্রি হুইলারে স্থবির হয়ে পড়েছে মহাসড়ক। রিকশার কাঠামোতে ব্যাটারির সাহায্যে মোটরযুক্ত করে তৈরি হয় ব্যাটারিচালিত রিকশা। শুধু রিকশা নয়, ইজিবাইক ও ভ্যানের সঙ্গেও যুক্ত করা হয় ব্যাটারি। এসব ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান, ইজিবাইক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সড়ক-মহাসড়ক ও অলিগলি। ফলে যানজটে স্থবির হয়ে আছে জনজীবন। ঘটছে দুর্ঘটনা। মৃত্যু হচ্ছে বহু মানুষের।  এলাকাবাসীর অভিযোগ, ট্রাফিক বা হাইওয়ে পুলিশের উদাসীনতায় এসব যানবাহন গলি  থেকে শুরু করে সড়ক-মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।

গাজীপুরে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক, টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়ক ও নগরীর বিভিন্ন শাখা সড়কে নিয়ন্ত্রণহীন লাখ লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা চলছে। নগরজুড়ে কত সংখ্যক থ্রি হুইলার চলছে, তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। তিন চাকার এসব ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান, ইজিবাইকের দৌরাত্ম্য নগরজুড়ে। যত্রতত্র গাড়ির স্ট্যান্ড, সড়কে বেপরোয়া চলাচল, লাইসেন্সবিহীন চালক,  এমনকি শিশু ও প্রতিবন্ধীদের হাতেও এসব গাড়ির স্টিয়ারিং। সবমিলিয়ে চরম বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি করেছে এসব ছোটযান। গত ৪ ফেব্রুয়ারি টঙ্গীর শিলমুন এলাকায় কাভার্ডভ্যান ও বিপরীত দিকে থেকে আসা ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুজন মারা যায় এবং আরও ছয়জন আহত হয়। এর আগে গত ২১ ডিসেম্বর নগরীর বোর্ডবাজার এলাকায় দুই নারী মোমেনা ও কুলসুম অটোরিকশা করে মহাসড়কে উল্টো পথে যাচ্ছিলেন। বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বাসের ধাক্কায় চালক আতিকসহ তিনজন গুরুতর আহত হয়। এ রকম দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনা নিয়মিত হয়ে উঠেছে।

টঙ্গী শিলমুন এলাকার গ্যারেজ ও ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের মালিক মো. রিপন বলেন, ইজিবাইকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। প্রশাসনের কোনো নীতিমালা না থাকায় অদক্ষ চালকরা এসব গাড়ি চালাচ্ছে। তিনি বলেন, সরকারিভাবে এসব গাড়ির যন্ত্রাংশ বিদেশ থেকে আনা বন্ধ করলেই এর উৎপাদন বন্ধ হবে। পর্যায়ক্রমে কমতে শুরু করবে এসব গাড়ি।

৪৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাজহারুল ইসলাম দিপু বলেন, এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইকের নৈরাজ্য অনেক বেড়ে গেছে। তাদের কারণে সড়কে অনেক দুর্ঘটনা ঘটছে, দেখা দিয়েছে বিশৃঙ্খলা। তিনি বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে তালিকা তৈরি করে গাড়ি শনাক্ত করার জন্য বিভিন্ন রং ব্যবহার করা যায়। ইনিফর্ম দেওয়া, গাড়ির নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেওয়া যেতে পারে। তাহলে অনেক গাড়ির চালক অপরাধ থেকে দূরে থাকবে।

টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজ অধ্যক্ষ মো. আলাউদ্দিন মিয়া বলেন, এসব গাড়ি চলাচলের ব্যাপারে একটি আইনের কাঠামোতে আনা উচিত। সড়ক ও মহাসড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ এসব ছোট গাড়ি। প্রশিক্ষণবিহীন অদক্ষ চালকদের বেপরোয়া চলাচলের কারণে দুর্ঘটনার শিকার অনেকেই। ব্যাটারিচালিত এসব গাড়ি পরিবেশের জন্যও ক্ষতিকর। সড়কে এর শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কিংবা বড় বড় দুর্ঘটনা এড়াতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা উচ্ছেদের বিষয়ে গাজীপুর ট্রাক-শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুর রশিদ বলেন, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা কয়েক লাখ। এসব ব্যাটারিচালিত রিকশা ইজিবাইকসহ সব ধরনের অবৈধ ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন বন্ধ করা হোক। ধীর গতির এসব গাড়ি সড়ক মহাসড়কে যানজট তৈরি করছে। এ ছাড়া যত্রতত্র চলাচলের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। ট্রাফিক বিভাগ, সিটি করপোরেশন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধির উদ্যোগের মাধ্যমে এর শৃঙ্খলা আনতে হবে।  

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, যত্রতত্র অটোরিকশার স্ট্যান্ড বসিয়ে খেয়ালখুশি মতো চলাচল করে সড়কে যানজট তৈরি করা হচ্ছে। ব্যাটারিচালিত এসব রিকশা-ভ্যান নিয়ন্ত্রণে প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি তালিকা করে সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত করা হবে। পরে তাদের একটি নম্বর প্লেট দেওয়া হবে। যাদের নম্বর প্লেট থাকবে না তারা চলাচল করতে পারবে না। একটি নিয়মের আওতায় আনার চেষ্টা করা হবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করেই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

গাজীপুর মহানগন ট্রাফিক পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশানার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ রয়েছে। ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বে কোনো অবহেলা নেই। বেশির ভাগ সময় চালকরা পুলিশের চোখে ফাঁকি দিয়ে মহাসড়কে এসে গাড়ি চালায়। মহাসড়কে এসব গাড়ি বন্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এ ব্যাপারে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মাহবুব আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পুলিশ প্রতিদিন শত শত গাড়ি আটক করে ব্যবস্থা নিচ্ছে। ব্যাটারিচালিত গাড়ি তৈরির কারখানাকে লাইসেন্স দিচ্ছে সিটি করপোরেশন। ব্যাটারির লাইসেন্স দিচ্ছে ডিসি অফিস। এসব গাড়ির লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ করতে হবে। তাহলেই এর প্রতিকার মিলবে। প্রথমত সিটি করপোরেশনকে এগিয়ে আসতে হবে। যে পরিমাণ পুলিশ রয়েছে, তারা যদি ব্যাটারিচালিত গাড়ির পেছনে পড়ে থাকে, তাহলে অন্য কাজ করবে কীভাবে। এটা পুরো নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পুলিশের না। সিটি করপোরেশনের। সিটি করপোরেশনের এগুলোকে একটি নিয়মের মধ্যে আনতে হবে। আমাদের কোনো সহযোগিতা চাইলে আমরা অবশ্যই দেব।

সর্বশেষ খবর