রাজধানীর আসাদ এভিনিউ যানজটের কারণে আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ সরণিতে পোহাতে হয় যানজটের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। এতে মোহাম্মদপুরসহ আশপাশের এলাকার মানুষের নাভিশ্বাস হলেও দেখার যেন কেউ নেই। এই সড়ক এক সময় যানজটহীন সড়কের উদাহরণ হলেও বর্তমানে যানজট থেকে নিস্তার নেই এখানে।
এই সড়কের আশপাশে রয়েছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর বেসরকারি বিভিন্ন দফতর। তবে বেশির ভাগ স্কুল শিক্ষার্থীদের পরিবহনের জন্য ব্যক্তিগত গাড়ি এ সড়কের দুই ধারে পার্কিং করা থাকে। স্কুল ছুটি না হওয়া পর্যন্ত অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে রাস্তা সংকুচিত হয়ে তৈরি হয় যানজটের। যানজট এড়াতে মাঝেমধ্যে লোকদেখানো নানা কর্মসূচি লক্ষ্য করা গেলেও এসব অবৈধ পার্কিং উচ্ছেদে কার্যত ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ স্থানীয়দের। এ ছাড়া কেরানীগঞ্জ আর বছিলা যাওয়ার রাস্তাও এই আসাদ এভিনিউ। বেসরকারি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসও রয়েছে এই সড়কে। সব মিলিয়ে আশপাশের কয়েক এলাকার বাসিন্দাদের চলাচলে ব্যবহৃত হয় গুরুত্বপূর্ণ এই সড়ক। প্রতিদিন সকালে আসাদ এভিনিউয়ে হাঁটতে বের হন রকিব সরদার। গতকাল তিনি প্রতিবেদককে বলেন, ফজরের নামাজের পর থেকেই এই সড়কে যানজট শুরু হয়। চলে গভীর রাত পর্যন্ত। স্কুল শিক্ষার্থীদের গাড়ি অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে গত পাঁচ বছরে যানজটের ভয়াবহতা বেড়েছে। অসহনীয় যানজটের কারণে অনেকেই এই এভিনিউ থেকে বাসা বদল করতে বাধ্য হচ্ছেন। যানজটের কারণে অনেক কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। পথচারীদের স্বাভাবিক চলাচলেও বিঘ্ন ঘটছে অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে। তিনি আরও বলেন, এই এভিনিউতে যাদের বাসা তারা নিজের বাসা থেকে বের হতে পারেন না। কারণ বাড়ির গেটই বন্ধ থাকে রাস্তার গাড়ির জন্য। পায়ে হাঁটার পাঁচ মিনিটের পথ গাড়িতে যেতে সময় লাগে ৩০/৩৫ মিনিট। তাছাড়া এই সড়ক কেরানীগঞ্জ বছিলা চলাচলকারী বাস, টেম্পোর অন্যতম সড়ক হওয়ায় যানবাহনের উচ্চ হর্নের শব্দে জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে শিশু ও বয়স্ক মানুষ।
এই সড়কের প্রান্তে মিরপুর রোডে একটি পুলিশ বুথ থাকলেও ট্রাফিক সদস্যরা অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে যানজট নিরসনে হিমশিম খান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্রাফিক সদস্য বলেন, আমাদের সদিচ্ছার কমতি না থাকলেও এই সড়ক যানজটমুক্ত রাখা সম্ভব হয় না। আসাদ এভিনিউয়ের যানজট দিন দিন বাড়ছে। আমরা রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছি। বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের গাড়ি এই সড়কে অবৈধভাবে পার্কিং করা হয়। এর কারণে রাস্তা সংকুচিত হয়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। মাঝেমধ্যে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়, জরিমানাও করা হয়। কিন্তু পরিস্থিতির উন্নয়ন হয় না। নগরের সমস্যা সমাধানে নগরবাসী সচেতন না হলে শুধু আইন করে সমস্যা সমাধান করা যায় না। টাউন হল এলাকার গৃহিণী অনিতা রায় বলেন, আসাদ এভিনিউয়ে সন্তানকে স্কুলে পৌঁছে দিতে পোহাতে হয় অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। পাবলিক বাসে উঠে অল্প রাস্তা পার হতে পেরিয়ে যায় অনেকটা সময়। তাই বাধ্য হয়ে শিশু সন্তানকে নিয়ে হেঁটে যেতে হয় প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা। প্রতিদিনের এই দুর্ভোগ থেকে যেন কোনো নিস্তারই নেই। মোহাম্মদপুর টাউন হলের এক ব্যবসায়ী বলেন, এক সময় টাউন হল বাজারটির ঐতিহ্য ছিল। ঢাকা শহরের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষ এই বাজারে আসতেন। যারা দীর্ঘদিন এই বাজারে আসতেন তারা এখন আর আসেন না। আর স্থানীয় মানুষও দিন দিন অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছেন। যানজটে আসাদ এভিনিউ আভিজাত্য হারিয়ে ফেলেছে। ঢাকা শহরে কোথাও যানজট না হলে এখানে যানজট হয় গভীর রাত পর্যন্ত। বাস, টেম্পো, ট্রাক, প্রাইভেট কার, রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইকসহ সব যানবাহন এই সড়কে চলাচল করে। সে কারণে কোনো শৃঙ্খলা নেই। সেই সঙ্গে ফুটপাত দখল করে আছে অবৈধ হকাররা। সব মিলিয়ে আসাদ এভিনিউর যানজট নিয়ে এই এলাকার মানুষ দিন দিন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন বলে জানান এলাকাবাসী।