মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

ক্লিন সিটির নাগরিকরা অনেক সেবাই পান না

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

ক্লিন সিটির নাগরিকরা অনেক সেবাই পান না

ক্লিন সিটি ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য রাজশাহী শহরের সুনাম দেশজুড়ে। আন্তর্জাতিকভাবেও শহরটি প্রশংসা কুড়িয়েছে লাইটের কারণে। ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে নগরীর বিভিন্ন সড়কের দৃশ্য। বর্তমানে এখানে চলছে বেশ কয়েকটি সৌন্দর্যবর্ধক প্রকল্পও। কিন্তু এসবের আড়ালে চাপা পড়ে গেছে নাগরিক সেবার মান। অল্প বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, শব্দদূষণ, মশার উপদ্রব, সুপেয় পানির সংকট, যানজট, নগরীর অর্ধেক জনগোষ্ঠী গ্যাস সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকা, ভঙ্গুর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও নড়বড়ে চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়ে অসন্তোষ আছে। সেইসঙ্গে কর্মসংস্থানের অভাবে বেকারত্ব বাড়তে থাকা, উন্নয়নের নামে দিন দিন সবুজায়ন কমতে থাকা, শিক্ষায় ভর্তি জটিলতা, সংস্কৃতিচর্চার অভাব, খেলার মাঠ কমে যাওয়া, পুকুর ভরাট, হেরিটেজ স্থাপনা কমে যাওয়া, ফ্লাইওভারসহ অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প, সিটির ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে গলাকাটা চিকিৎসাব্যবস্থা গড়ে ওঠা, পাবলিক টয়লেট সংকট, আশ্বাসের পরও শিল্পায়ন গড়ে না ওঠা- এসব নিয়েও দুশ্চিন্তা যাচ্ছে না নগরবাসীর। ফলে তাদের মুখ্য দাবি হয়ে উঠেছে, অপ্রয়োজনীয় অপরিকল্পিত প্রকল্প বাদ দিয়ে নাগরিকসেবা বাড়ানোর বিষয়টি। যদিও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজশাহীতে যে উন্নয়ন হয়েছে তা নজিরবিহীন বলছেন মানুষ। এই উন্নয়নকে জনবান্ধব করে নাগরিক সুবিধা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তারা।

রাজশাহী নগরী ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় ঠাসা। এগুলো নিজের খেয়ালখুশি মতো চলাফেরা করায় নগরীর বিভিন্ন স্পটে সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। প্রধান শহরজুড়ে সুপ্রশস্ত রাস্তা ও ফুটপাত গড়ে তোলা হয়েছে। সড়কগুলোতে শোভা পাচ্ছে নানা ধরনের ফ্লাডলাইট। যেগুলো নজর কাড়বে যে কারও। তবে বেশির ভাগ ফুটপাতই দখলে চলে গেছে। প্রভাবশালী মহল সেগুলো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও চা দোকানিদের কাছে ভাড়া দিয়েছেন। বর্তমানে বৃষ্টি না থাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হলেও পরিকল্পিত স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা না থাকায় হালকা বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এ বছরই ব্যস্ত সড়কে নৌকা চালিয়েছেন নাগরিকরা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মলয় ভৌমিক বলেন, রাজশাহীতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও প্রধান সমস্যা হচ্ছে নাগরিক সেবার মান কমে যাওয়া। সেই সঙ্গে রাজশাহীকে শিক্ষানগরী বলা হলেও এখানকার মানুষের শিক্ষা-দীক্ষা ও রুচিশীলতার অভাব আছে অনেক। ওয়ার্ড পর্যায়ে উন্নয়ন ঘাটতি আছে। সংস্কৃতিচর্চার কেন্দ্র ও খেলার মাঠের অভাব আছে। রাজশাহীতে গ্যাস পাইপলাইনের সংযোগ দেওয়া হলেও ৫০ শতাংশ মানুষ এই সুবিধার বাইরে আছে। এসব বিষয়ে পরিকল্পিত উদ্যোগ নেওয়া দরকার। রাজশাহী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু বলেন, রাজশাহীর প্রধান সমস্যা এখানে শিল্পায়ন গড়ে ওঠেনি। শিল্পায়নের জন্য অতিপ্রয়োজনীয় গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না। সদিচ্ছা থাকলেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী রাজশাহীতে কৃষিভিত্তিক ইকোনমিক জোন করা সম্ভব। আমের পাশাপাশি বর্তমানে এখানে প্রচুর পরিমাণে টম্যাটো, পিঁয়াজ, আলু, শাকসবজি উৎপাদন হচ্ছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রাজশাহীর সভাপতি আহমেদ শফিউদ্দিন বলেন, উন্নয়ন হলেও সেবার মানে পিছিয়ে পড়েছে রাজশাহী। প্রধান সমস্যাগুলোর অন্যতম অপরিকল্পিত স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা। হাজার হাজার বাসাবাড়ির নোংরা পানি সরাসরি ড্রেনে জমা হচ্ছে। হালকা বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা হচ্ছে। পদ্মা নদীর পাড়কে ঘাসের গালিচা থেকে কনক্রিটে মুড়ে দেওয়া হয়েছে। প্রশস্ত রাস্তার প্রশংসা করি কিন্তু অপরিকল্পিত উন্নয়ন বেশি হচ্ছে বলে আমরা মনে করি। শহরের পাশে ৮০০-৯০০ কোটি টাকা করে খরচ করে দুটি ফ্লাইওভার করা হয়েছে, যা তেমন কাজে আসছে না।  রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, আয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মানুষ তার জীবিকা নির্বাহ করে। রাজশাহীতে শিক্ষাকে কেন্দ্র করে উপার্জন করা মানুষের সংখ্যা বেশি। যে আয় খুব বেশি নয়। এর পরও পানি ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এটি না বাড়ালে ভালো হতো। রাজশাহীতে কর্মসংস্থানের সুযোগ কম। এটা যদি কেউ ঠিক করতে পারতেন ভালো হতো।

স্থানীয়রা জানান, ২০০৮ সালে বর্তমান মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, গার্মেন্ট শিল্প স্থাপন করে ৬০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান করবেন কিন্তু তিনি সেই প্রতিশ্রুতি রাখেননি। তারপর আরও দুই দফায় তিনি মেয়র হয়েছেন। কিন্তু কর্মসংস্থানের সেই উদ্যোগ থমকে আছে। কিশোর গ্যাং কালচার ও মাদকের চালান বেড়েছে বলেও অভিযোগ করেন অনেকে।

সর্বশেষ খবর