মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

বনানীতে পথচারীবান্ধব রঙিন সড়ক

জয়শ্রী ভাদুড়ী

বনানীতে পথচারীবান্ধব রঙিন সড়ক

অবৈধ পার্কিং, এবড়ো-খেবড়ো রাস্তা, ম্যানহলের বেমানান ঢাকনায় হাঁটাচলাই দায় ছিল বনানীর ২১ নম্বর সড়কে। সম্প্রতি পরিবর্তনের ছোঁয়ায় বদলে গেছে সড়কের পুরো চিত্র। বনানী বিদ্যানিকেতনের পেছনের ঝকঝকে রঙিন রাস্তা যেন পথচারীদের জন্যই তৈরি করা হয়েছে। রাস্তার প্রায় অর্ধেক জুড়ে ফুটপাতসহ মানুষের জন্য বসার জায়গা। আছে শিশুদের খেলার জায়গা, গাছপালা। সম্পূর্ণ রঙ্গিন এ রাস্তা বিভিন্ন বয়সী মানুষের সমাগমে পরিপূর্ণ।

গল্পের শুরু গত বছরের জানুয়ারিতে। সেসময় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে বনানী এলাকায় একমুখী সড়ক চালু করাসহ নিরাপদ সড়ক অবকাঠামো গড়ে তোলার জন্য একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ জন্য তারা ‘ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেফটি’ (বিআইজিআরএস) কর্মসূচির সঙ্গে যোগাযোগ করে। পরবর্তীতে বিআইজিআরএসের পার্টনার ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউট এ বিষয়ে গবেষণা শুরু করে। এ আন্তর্জাতিক অলাভজনক গবেষণা সংস্থা বসবাসযোগ্য নগরী এবং আরবান ডিজাইন নিয়ে কাজ করে।

গবেষণার এক পর্যায়ে প্রকল্পটির স্থপতি ফারজানা ইসলাম তমা দেখতে পান বিদ্যানিকেতন স্কুলের পেছনের রাস্তাটি একমুখী চলাচলের লুপ তৈরিতে কোনো ভূমিকা রাখছে না। শুধু রাস্তাটির দক্ষিণ দিকের চারটি প্লটের গাড়ি যাতায়াতের জন্য জায়গা প্রয়োজন। তার জন্য ৪০ ফিট প্রশস্ত রাস্তার প্রয়োজন পড়ে না।

স্থপতি ফারজানা ইসলাম তমা বলেন, ‘প্রকল্পটিতে কাজ করার সময় চোখে পড়ে রাস্তার অর্ধেকের বেশি জায়গা অবৈধ দখলের খপ্পরে। পার্কিং আর নানা অবকাঠামোর মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে শিশুরা খেলাধুলা করত। শিশুদের অভিভাবকরা বসার জায়গা পায় না। পাশের বিভিন্ন অফিসের কর্মচারীরা ক্যান্টিন থেকে খাবার কিনে এনে রাস্তায় বসেই খাবার খায়। গাড়ির জন্য বানানো ৪০ ফুট রাস্তার পুরোটাই কি আসলে গাড়ি চলার জন্য ব্যবহার হচ্ছে? এত মানুষ দিনের বেশির ভাগ অংশ রাস্তায় কাটায়, তাদের জন্য রাস্তা কেন নয়? এ রকম হাজারো প্রশ্ন থেকে পাবলিক প্লেস মেকিংয়ের চিন্তা এলো।’

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলেন, গত বছরের ৬ জুলাই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলামের সামনে এ বিষয়ে পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। উপস্থাপনায় বনানীকে একমুখীকরণসহ ২১ নম্বর রাস্তাটিকে পাবলিক স্পেস হিসেবে ট্রান্সফর্ম করার প্রস্তাবনা ডিজাইনসহ ডব্লিউ আর আই এবং ব্লুমবার্গের প্রতিনিধিরা তুলে ধরেন। ১০ ফুটের চওড়া ফুটপাথ, ১২ ফুট মানুষের জন্য বসার জায়গা সঙ্গে শিশুদের জন্য নির্ধারিত খেলার জায়গা, গাছ লাগানোর জন্য নির্দিষ্ট স্থান, বসে খাওয়ার মতো কিছু অবকাঠামো করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। বিদ্যানিকেতন স্কুলের দেয়ালে গ্রাফিতি করার প্রস্তাবনা আনা হয়। এ ছাড়া প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের যাতায়াতের জন্য র‌্যাম্প নির্মাণ, গাড়ি এবং মোটরসাইকেল পার্কিং প্রতিরোধে বোলার্ড স্থাপনের প্রস্তাবনা করা হয়। মেয়র আতিকুল ইসলামসহ উপস্থিত সব প্রতিনিধি প্রস্তাবনাটি সাদরে গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ নকশা অনুসারে রাস্তাটিকে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ নেয়।

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিন সড়ক ঘুরে দেখা যায়, নানা বয়সী মানুষের কলতানে মুখরিত হয় এ সড়ক। বিকাল হতেই সাইকেলসহ বিভিন্ন খেলার সামগ্রী নিয়ে ভিড় করেছে শিশুরা। ছেলেমেয়েদের খেলায় ব্যস্ত দেখে ফুটপাতে বসার জায়গায় গল্পে মেতে উঠেছেন মায়েরা। আশপাশে বসে আছেন নানা বয়সী মানুষ। অনেকে বসে হালকা খাবার খাচ্ছে। বয়স্ক দুজনকে দেখা গেল হাঁটতে বের হয়েছেন।

‘আর্ট অ্যান্ড সোল’ এর কর্ণধার নাবিলা রহমানের উদ্যোগে স্কুলের দেয়ালে করা হয়েছে ম্যুরালের কারুকাজ। নানা রঙের আলপনায় প্রজাপতির মতো ঝলমল করছে দেয়াল। ছেলেকে বন্ধুদের সঙ্গে খেলায় মেতে উঠতে দেখে বিকালে হাঁটার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন আরিফা বেগম। তিনি বলেন, এ সড়কে আগে হাঁটাচলা করাই দায় ছিল, বসার মতো পরিবেশ ছিল না। কিন্তু এখন পুরো চিত্রই বদলে গেছে। পরিচ্ছন্ন রাস্তা, হাঁটার জায়গা, বসার জায়গা, চিত্রাঙ্কন করা দেয়ালে দারুণ পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ছেলেমেয়েদের খেলার জায়গা হওয়াতে আমরা খুব খুশি। এ রাস্তায় সকাল, সন্ধ্যায় নানা বয়সী মানুষ হাঁটতে আসে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চলাচলের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর