মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

শরবতের নামে কী খাচ্ছে মানুষ!

জয়শ্রী ভাদুড়ী

শরবতের নামে কী খাচ্ছে মানুষ!

ছবি : জয়ীতা রায়

কাঠফাটা রোদে তাপমাত্রার পারদ ঊর্ধ্বমুখী। তীব্র গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত। তৃষ্ণা মেটাতে রাস্তার পাশে নানা রং-মসলার শরবত, খুলে রাখা বরফের ছাচ গলানো আখের রসে গলা ভেজাচ্ছে মানুষ। কিন্তু এই অস্বাস্থ্যকর পানীয় ডেকে আনছে বিপদ। এর ফলে ডায়রিয়া, টায়ফয়েড, জন্ডিসসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।

ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দেশে বর্তমানে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। এই তাপমাত্রায় শিশু থেকে বয়স্ক-সবার জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। এখন সুস্থ থাকতে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘গরমে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো পানিশূন্যতা। তাই পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। কিন্তু অস্বাস্থ্যকর শরবত, ফলের রস খেয়ে রোগ ডেকে আনা যাবে না। অনেকেই রাস্তার পাশে ধুলাবালু উড়ে আসছে খুলে রেখে বানানো জুস খেয়ে তৃষ্ণা নিবারণ করছেন। এসব দূষিত পানীয়র চেয়ে বিশুদ্ধ পানি কিংবা পরিমিত পরিমাণে স্যালাইন সেবন করলেও পানির অভাব পূরণ হবে।’

চিকিৎসকরা বলছেন, তীব্র গরমে অস্বাস্থ্যকর খাবার ও পানি খাওয়ার কারণে ঢাকাসহ সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে জ্বর, সর্দি, হিটস্ট্রোক, ডায়রিয়া, টাইফয়েড আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গরম বাড়লে আরও রোগী বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালে সাধারণত প্রতিদিন গড়ে ৩০০ ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকে। তবে বর্তমানে সেই সংখ্যা প্রায় ৫০০ জন বলে জানান চিকিৎসকরা। একইভাবে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের প্রাইভেট চেম্বারে বেড়েছে রোগীর চাপ।

আইসিডিডিআর,বির হাসপাতাল প্রধান ডা. বাহারুল আলম বলেন, আইসিডিডিআর,বিতে দিনে ৭০০ এর বেশি রোগী ভর্তি হলে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। গ্রীষ্মের শুরুতে এখনো সে ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তবে রোগী বাড়ছে। গরমে ডায়রিয়া থেকে বাঁচতে সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে, খাবার আগে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে।

গতকাল রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় আনন্দ সিনেমা হল এলাকায় দেখা যায়, ভ্যানগাড়িতে করে শরবত ফেরি করে বিক্রি করছেন এক ব্যক্তি। কমলা রঙের পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে চিয়া সিডের দানা। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এই শরবত কিনে খাচ্ছেন। মাঝেমাঝেই মিশিয়ে দিচ্ছেন নিচে বস্তায় রাখা বরফ। বরফের গায়ে থাকা ময়লাও মিশে যাচ্ছে শরবতের পানিতে। শিক্ষার্থীদের চারজনের দল এসে শরবত চায়। এই শরবতে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি আছে কি না জানতে চাইলে তারা বলেন, দোকানে এক গ্লাস জুস খেতে ৬০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত গুনতে হয়। এত দাম দিয়ে জুস কিনে খাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। টিউশনি করে নিজেদের পড়ার খরচ চালাতে হয়। তাই তৃষ্ণা মেটাতে ১০ টাকায় এক গ্লাস শরবত কিনে খাই মাঝেমাঝে। গরমে ঠান্ডা শরবত খেতে ভালোই লাগে। 

তেজগাঁও এলাকায় দেখা যায়, রিকশার পাটাতনে কোনোরকম সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই আনা হচ্ছে বরফের বড় খন্ড। নামানোর সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো ভেঙে দেওয়া হচ্ছে ফিল্টারের মধ্যে। এর সঙ্গে পাশের ড্রাম থেকে মগ ভরে দেওয়া হচ্ছে পানি। পলিথিন থেকে বের করে হাতের মুঠোয় ভরে দেওয়া হচ্ছে চিনি-লবণ। তৈরি হয়ে গেল অস্বাস্থ্যকর শরবত। এরপর ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী লেবু অথবা বিভিন্ন ইনস্ট্যান্ট পাউডার মিশিয়ে কাচের গ্লাসে এই শরবত পরিবেশন করা হচ্ছে। পাশেই আখ মেশিনে দিয়ে রস রেব করে বরফগলা পানি মিশিয়ে পরিবেশন করা হচ্ছে। অভিযোগ আছে কারওয়ান বাজারের মাছের আড়তের ব্যবহৃত বরফ দিয়ে তৈরি হয় এসব শরবত। রিকশাচালক, দিনমজুর, দোকানদার, পথচারী- অনেক সচেতন মানুষকেও দেখা গেছে রাস্তার পাশের এসব শরবত পান করতে।

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু বলেন, ‘গরমে সুস্থ থাকতে প্রচুর বিশুদ্ধ পানি ও খাবার স্যালাইন খেতে হবে। অনেকে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাহারি শরবত খাচ্ছেন। এসব পানীয়র ফলে অনেকেই পেটের পীড়া, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বাইরে থেকে ঘরে ফিরে ঠান্ডা পানি খাওয়া যাবে না, কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার পর পানি খেতে হবে।’

সর্বশেষ খবর