মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

৯৬ বর্গ কিলোমিটারের ছোট্ট শহরে ৭ ফ্লাইওভার!

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

৯৬ বর্গ কিলোমিটারের ছোট্ট শহরে ৭ ফ্লাইওভার!

প্রায় ৯৬ বর্গকিলোমিটারের রাজশাহী মহানগরীতে হচ্ছে সাতটি ফ্লাইওভার। এর মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে দুটি, যার একটি রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্মাণ করেছে, আরেকটি করেছে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ)। দুটি ফ্লাইওভারই হয়েছে শহরের পূর্বপ্রান্তে, যেগুলোর ব্যবহার হয় না বললেই চলে। এর মধ্যেই রাসিক আরও পাঁচটি ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। নতুন ফ্লাইওভারগুলোও কতটা কাজে আসবে, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

২০১৯ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। যার মধ্যে সরকারি বরাদ্দর ছিল ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। ২০২৩ সাল পর্যন্ত এই প্রকল্পের মাত্র ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয় করে রাসিক। এখানে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আরও বরাদ্দ ব্যবহার বাকি আছে। রাসিক সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ফ্লাইওভারগুলো নির্মাণ করছে।

ফ্লাইওভার নির্মাণের জন্য সিটি করপোরেশন ৮২১.৯৩ কোটি টাকার সংস্থান করেছে। অর্থাৎ টাকার অঙ্কে এ যাবৎ মহানগরীর সবচেয়ে বড় উন্নয়ন প্রকল্পের প্রায় এক তৃতীয়াংশ বরাদ্দই ব্যবহৃত হচ্ছে ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজে। গুরুত্বহীন পুরনো ফ্লাইওভার রুয়েট ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যবর্তী স্থানে ২০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮১০ মিটার ফ্লাইওভারসহ ৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করেছে আরডিএ। এটি ছিল প্রথম ফ্লাইওভার।

 প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মূল উদ্দেশ্য ছিল শহরের মধ্যে যানবাহনের চাপ কমানো, যাতে শহরের মধ্যে রাজশাহী-ঢাকা হাইওয়ের বাসগুলো প্রবেশ না করে এই পথে চলাচল করে। কিন্তু গত ১০ মাসে দেখা গেছে, সড়কটির কাজলা রুয়েট চত্বর থেকে মেহেরচন্ডী পর্যন্ত ফ্লাইওভারসহ সোয়া দুই কিলোমিটার অংশটুকু ব্যবহার হয় না বললেই চলে। অধিকাংশ যানবাহনই ভদ্রা মোড় হয়ে বিদ্যমান পথে চলে। ভদ্রা মোড়ে সব সময়ই যানজট লেগে থাকে। অথচ নতুন রাস্তাসহ ফ্লাইওভারটি সারা দিন ফাঁকাই থাকে।

নগরীর প্রথম ফ্লাইওভারটি ২০২.৫০ মিটারের। চারলেনের সড়কে ২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রথম অবস্থায় দুই লেনের ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়। পরে সেই ভুল শোধরাতে ৪০ কোটি টাকায় আরেকটি দুই লেনের ফ্লাইওভার পাশে নির্মাণ করা হয়। আরডিএর ফ্লাইওভারের তুলনায় এখানে যানবাহনের সংখ্যা কিছুটা বেশি হলেও শুধু রেললাইনের ওপর দিয়ে যাওয়ার জন্য ফ্লাইওভার বানানো নিয়ে আছে প্রশ্ন।

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. কামরুজ্জামান বলেন, এ ধরনের প্রকল্পে আর্থিক সম্ভাব্যতা নিরূপণ করতে হয়। আমি জানি না, সেগুলো হয়েছে কি না। অথবা হয়ে থাকলে সেখানে কী তথ্য পাওয়া গেছে। কিন্তু আমরা বাস্তবে যে চিত্র দেখছি তা সুখকর নয়। রুয়েটের পেছনের ফ্লাইওভারটা তো রীতিমতো হাস্যকর। এখানে সারা দিনে কটা গাড়ি চলে তা হাতে গোনা যায়। এ ধরনের প্রকল্প সরকারি অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছুই না। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) কেন্দ্রীয় সদস্য আহমেদ সফিউদ্দিন বলেন, রাজশাহীর মতো একটা শহরে এখনই এতগুলো ফ্লাইওভার প্রয়োজন আছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। এখানে ফ্লাইওভারের দরকার কী?

রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, যতদূর জানি ফ্লাইওভারের পরিকল্পনা তো অনেক আগের। পরিকল্পনা আগের থাকলে এসব সৌন্দর্যবর্ধন, রাস্তার কাজ, ডিভাইডার বা বাতি ফ্লাইওভার তৈরির পরে একবারে করা যেত। জনগণের টাকা সাশ্রয় হতো। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর ইসলাম তুষার টাকার অপচয় হবে না উল্লেখ করে বলেন, বাতিগুলো তো আমরা ফেলে দিচ্ছি না। এগুলো অন্য সড়কে লাগাব।

সর্বশেষ খবর