মঙ্গলবার, ৭ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

আবার খোঁড়াখুঁড়ি আবার দুর্ভোগ

হাসান ইমন

আবার খোঁড়াখুঁড়ি আবার দুর্ভোগ

ছবি : জয়ীতা রায়

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বেশির ভাগ এলাকায় চলছে বিভিন্ন সংস্থার খোঁড়াখুঁড়ি। যদিও সেবাদাতা সংস্থাগুলোর খোঁড়াখুঁড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে নীতিমালা করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এই নীতিমালা কোনো সংস্থাই মানছে না। সিটি করপোরেশন, ওয়াসা, ডেসকোসহ অন্যান্য সেবাদাতা সংস্থাগুলো নিজেদের কাজ করতে রাস্তা কাটাকাটি করছেই। এই অপরিকল্পিত সড়ক খোঁড়াখুঁড়িতে বর্ষায় চরম ভোগান্তির আশঙ্কা করছেন নগরবাসী।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, বর্ষা মৌসুমে (মে থেকে সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কোনো সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি করা যাবে না। সড়ক কাটাও যাবে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে খননকাজ শুরু করলে মূল খরচের পাঁচ গুণ জরিমানা গুনতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারলেও দিতে হবে জরিমানা। সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির কারণে জনগণের ভোগান্তি কমাতে এমন বেশ কিছু বিধান রেখে ‘ঢাকা মহানগরীর সড়ক খনন নীতিমালা-২০১৯’ চূড়ান্ত করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। কাগজে-কলমে নীতিমালা করা হলেও তা মেনে চলার বালাই নেই। অথচ রাজধানীজুড়ে চলছে সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীন খোঁড়াখুঁড়ি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার এলাকায় খোঁড়াখুঁড়ি করছে ঢাকা ওয়াসা। সেখানে দেখা যায়, রাস্তার অর্ধেকাংশ কেটে ওয়াসা স্যুয়ারেজের লাইন সংস্কার করছে। যদিও সংস্কার করতে গিয়ে ডেসকোর বিদ্যুতের লাইন কেটে ফেলেছে ওয়াসা। এটি সংস্কার করতে বেশ বেগ পেতে হয় ডেসকোকে। এ ছাড়া গুলিস্তানে মওলানা ভাসানী জাতীয় হকি স্টেডিয়ামের উত্তরের সড়ক অর্থাৎ গুলিস্তান থেকে মতিঝিলের প্রধান সড়কের একপাশে খোঁড়াখুঁড়ি করছে ডেসকো। সংস্থাটির বিদ্যুতের লাইন মাটির নিচ দিয়ে নিতে খোঁড়াখুঁড়ি হচ্ছে বলে কর্মীরা জানায়। রাজারবাগ শান্তিনগর রোডে রাস্তা কাটছে সংস্থাটি। শাপলা চত্বর থেকে কমলাপুরগামী মেট্রোরেলের কাজ এখনো চলছে। এর মধ্যে শাপলা চত্বর থেকে টিকাটুলি যাওয়ার পথে সড়কের মাঝ বরাবর রাস্তা কেটেছে ডিপিডিসি। কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর মাটি ভরাট করা হলেও এখনো পিচ ঢালাই করা হয়নি। এ ছাড়া কয়েকটি স্থানে রাস্তা আড়াআড়ি কেটে রাখায় সেখানে বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এ সড়ক দিয়ে চলতে গিয়ে দ্রুতগামী যানবাহন প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। ইত্তেফাক মোড় থেকে হানিফ ফ্লাইওভারগামী টিকাটুলি সড়কের পূর্ব পাশে রাস্তা কেটে ফেলে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বঙ্গভবনের পশ্চিম পাশের সড়কেও রাস্তা কেটে উন্নয়নকাজ চলছে। সেগুনবাগিচায় গত কয়েক মাস থেকেই অলিগলির সড়কে ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। এসব সড়কে ড্রেনের কাজ শেষ করে ঢালাই দিলেও এখনো রাস্তার কাজ সম্পূর্ণ না করায় গাড়ি ও পথচারী চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সর্বশেষ সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সামনের সড়কেও ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। সেখানে রাস্তা কেটে পাশেই মাটির স্তূপ করে রাখা হয়েছে। এতে ওই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচলে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এলাকাবাসী। স্থানীয় বাসিন্দা কাউসার হামিদ বলেন, সেগুনবাগিচা এলাকার একটি রাস্তাও ভালো নেই। বাচ্চাদের স্কুলে আসা-যাওয়ায় সমস্যা হয়েছে এত দিন। দীর্ঘদিন যদি এই অবস্থায় থাকে, তাহলে তো সন্তানদের স্কুলে পাঠানোই কঠিন হয়ে যাবে। আর সড়কগুলোতে প্রায়ই থাকে যানজট। সড়ক দিয়ে হেঁটে চলাও দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৃষ্টি হলে মানুষের ভোগান্তির অন্ত থাকে না।

রাজধানীর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার মধ্যে অন্যতম মোহাম্মদপুর। এ এলাকায় রয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ২৯, ৩০, ৩১, ৩২ ও ৩৩ এই পাঁচটি ওয়ার্ড। এসব ওয়ার্ডে ছোট-বড় প্রায় শতাধিক রাস্তা রয়েছে। এগুলোর প্রায় অর্ধেকেরই করুণ দশা। যেসব রাস্তা কাটা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- ইকবাল রোডের অধিকাংশ গলি, তাজমহল রোড, হুমায়ুন রোড, টিক্কাপাড়া, মোহাম্মাদিয়া হাউজিং সোসাইটি, শেখেরটেক, আদাবর, লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের আশপাশে, শেরশাহ সুরি রোডসহ এসব রোডের বিভিন্ন গলি। মোহাম্মদপুরের মোহাম্মাদিয়া হাউজিং সোসাইটির ২ নম্বর সড়ক মিলেছে শেখেরটেক সড়কে। দুই সড়কের সংযোগ সড়কটিতে সিটি করপোরেশনের রাস্তা কাটা শুরু হয়েছে চার মাস আগে। ড্রেনেজের কাজ এখনো শেষ হয়নি। আদাবর, শেখেরটেক এলাকার প্রতিটি বাড়ির সামনের রাস্তা কাটা। অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যকার সমন্বয়ের অভাবেই রাজধানীবাসীর কপালে জোটে এমন দুর্ভোগ।

সর্বশেষ খবর