মঙ্গলবার, ১৪ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

দূষণে পুরনো চেহারায় ময়ূর!

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

দূষণে পুরনো চেহারায় ময়ূর!

খুলনা নগরে পানি নিষ্কাশনে ‘লাইফ লাইন’ খ্যাত ময়ূর নদ। নানা ধরনের বর্জ্যে দূষণ-ভরাটের কবলে পড়েছে নদটি। কোথাও গৃহস্থালি বর্জ্য, কোথাও ভাঙা প্লাস্টিক, ছেঁড়া কাপড়, শিল্পবর্জ্য, কচুরিপানায় আবদ্ধ হয়ে পড়েছে ময়ূর। একসময় নৌকা চলত এ নদ দিয়ে, এখন ময়লা-আবর্জনায় অধিকাংশই ভরাট হয়ে গেছে। কুচকুচে কালো পানির দুর্গন্ধে নাক চেপে পথ চলতে হয় পথচারীদের। কেবল ময়ূর নয়, খুলনা নগরের ছোট-বড় ২২টি খাল ও ড্রেনগুলোরও এখন বেহাল অবস্থা। হরিণটানা খাল, নিরালা খাল, বাঁশখালী খুদের খাল সর্বত্রই বর্জ্যরে ভাগাড়। খাল ও ড্রেনে পানি নিষ্কাশন ব্যাহত  হওয়ায় বর্ষাকালে নগরে তৈরি হয় জলাবদ্ধতা।

সিটি করপোরেশনের কনজারভেন্সি শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, নগরবাসী নির্দিষ্ট স্থানে বর্জ্য না ফেলে ড্রেনে-খালে ফেলছে। যা পানিতে ভেসে ময়ূর নদে গিয়ে মিশছে। নির্দিষ্ট স্থানে বর্জ্য ফেললে ময়ূরের এভাবে দূষণ-ভরাট হতো না। আর নগরবাসীর অভিযোগ, ড্রেনে-খালে বর্জ্য ফেললে শাস্তির ব্যবস্থা থাকলে কেউ এ কাজ করত না। পরিবেশ সুরক্ষা মঞ্চের সভাপতি অ্যাড. কুদরত-ই খুদা বলেন, রূপসার আলুতলায় গেট (জলকপাট) নির্মাণ করে নদটিকে বদ্ধ রাখা হয়েছে। ফলে পানিপ্রবাহ কমে ময়ূরের তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে শহরের গৃহস্থালি বর্জ্যসহ দূষিত পানির ৮০ শতাংশই ড্রেনের মাধ্যমে নদে পতিত হয়। ফলে দূষণের মাত্রা অনেক বেশি।

জানা যায়, জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০১৪ সালে ৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ময়ূর নদ খনন করা হয়। কিন্তু বছর ঘুরতেই নদটি দূষণে পুরনো চেহারায় ফিরে যায়। ২০১৮ সালে ৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে বয়রা শ্মশানঘাট থেকে সাচিবুনিয়া ব্রিজ পর্যন্ত খননকাজ হয়। ৮২৩ কোটি টাকার ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় ২০২২ সালে আবারও ময়ূর নদ খননের কাজ শুরু হয়। তবে ময়ূরকে বাঁচানোর জন্য পরিকল্পিত নদ খননের দাবি জানিয়েছে পরিবেশবাদী নাগরিক সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)।

সংগঠনের জেলা সমন্বয়কারী অ্যাড. মো. বাবুল হাওলাদার বলেন, ময়ূর নদটি বাঁচাতে নদের আংশিক খনন করে প্রবাহ নিশ্চিত করা বাস্তবতার পরিপন্থি। সমন্বিত পরিকল্পনায় আলুতলা থেকে বিল ডাকাতিয়া পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ নদ এবং সংযুক্ত খালগুলো খনন করে প্রবাহ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, সিটি করপোরেশন নিয়মিত খাল খনন ও সংস্কার কাজ করছে। ড্রেনে-খালে বর্জ্য ফেলা নিয়ে নগরবাসী সচেতন হলে দূষণ কমানো যেত। তিনি বলেন, ময়ূরকে ঘিরে সৌন্দর্যবর্ধনে কাজ হবে। দুই পাড় বাঁধাই করে ওয়াকওয়ে, সংযোগ সেতু, বিনোদনের জন্য নৌকা চালানোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এসব কাজ বাস্তবায়িত হলে সুফল মিলবে।

সর্বশেষ খবর