রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকা দিয়ে ছয়টি নদী এবং দুটি খাল প্রবাহিত হচ্ছে। নদীগুলো হচ্ছে- ঘাঘট, ইছামতী, বুড়াইল, খোকসা, খোকসা ঘাঘট, আলাইকুমারী। খাল দুটি হচ্ছে- শ্যামাসুন্দরী ও কেডি খাল। তবে শ্যামাসুন্দরী খাল না নদী- এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এসব নদী-খালে আছে বিভিন্ন রকম অবৈধ দখল। কোনোটির পানির প্রবাহ স্বাভাবিক নেই। দখল ও দূষণে এসব নদী-খাল মরে যেতে বসেছে। শ্যামাসুন্দরীর চেয়ে নগরীতে বয়ে যাওয়া কেডি খালের অবস্থা আরও করুণ। ভয়াবহ দূষণের কবলে পড়েছে এই খালটি। নগরীর উত্তর দিক দিয়ে প্রবাহিত প্রায় ৮ কিলোমিটার এই খালটির অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। খালের মাঝখানে মাথা উঁচু করে রয়েছে ঝোপ-ঝাড় এবং জঙ্গল। রংপুর নগরীর প্রধান সড়ক সেন্ট্রাল রোড থেকে উত্তরে প্রায় ৪০০ গজ এবং নগরীর প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত সিটি বাজার থেকে আনুমানিক ৫০০ গজ উত্তর দিকে গেলে দেখা যাবে কেডি খালের ভয়াল মৃত্যুদশা। প্রায় দেড় শ বছরের এই খালটি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই দীর্ঘ বছর ধরে। কেডি খাল সম্পর্কে জানা গেছে, ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে কেডি ঘোষ (কৃষ্ণধন ঘোষ) রংপুরের সিভিল সার্জন পদে নিয়োজিত হন। ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে ডা. কেডি ঘোষ রংপুর পৌরসভার মেম্বার এবং পরের বছর ১৮৭৭ সালে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরই সুবাদে কেডি ঘোষ তৎকালীন রংপুরের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টর এডওয়ার্ড জর্জ গ্লাজিয়ার, জেলা জজ হেনরি বেভারিজসহ অন্যান্য পদস্থ ব্যক্তিদের খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ডা. ঘোষ রংপুরের মানুষের জন্য ম্যালেরিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়ে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন রংপুরের নিম্নাঞ্চলের জলাবদ্ধতাই মশার জন্মভূমি এবং এই অঞ্চলের ম্যালেরিয়ার কারণ। জলাবদ্ধতা দূরীকরণে তিনি পদস্থ কর্মকর্তাদের বোঝাতে সক্ষম হন যে, জনগণের সহায়তায় জমা পানি নিষ্কাশনে ড্রেন বা ক্যানেল নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি। তার প্রস্তাবে এবং আন্তরিক উদ্যোগে পরের বছরই খাল কেটে রংপুরের উত্তরের নিম্নাঞ্চলের জমা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়। সে সময় রংপুরের জনগণও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে খালটির নামকরণ করেন কেডি খাল। ১৮৮৩ সাল পর্যন্ত কেডি ঘোষ রংপুরে কর্মরত ছিলেন। খালটি সংস্কারের বিষয়ে সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র তৌহিদুল ইসলাম বলেন, শ্যামাসুন্দরী খাল পরিচ্ছন্নতা শুরু হয়েছে। কেডি খালও পরিষ্কারের কাজ দ্রুত শুরু করা হবে।