ডেঙ্গুজ্বরের মৌসুম এগিয়ে আসতেই বাড়ছে দুশ্চিন্তা। সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু রোগী। কিন্তু এডিস মশা নির্মূলে শোরগোল থাকলেও কার্যকর উদ্যোগ কম। ঢাকার দুই সিটিতে কিছু কার্যক্রম চললেও অন্য জেলা-উপজেলায় কোনো উদ্যোগ নেই। তাই এখনই ব্যবস্থা না নিলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাওয়ার শঙ্কা বাড়ছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মশা প্রজননের জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রা হচ্ছে ২৫-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা যদি ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে হয়, তখন যে কোনো মশার প্রজনন কমে যায়। তাপপ্রবাহে মশার প্রজনন কমলেও বৃষ্টিপাত হলেই মশার প্রজনন বাড়তে শুরু করবে। আমাদের দেশে সাধারণত জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বরে এ কয়েক মাস ডেঙ্গুর জন্য উচ্চ ঝুঁকি থাকে। এ সময়টাতে বৃষ্টি হয়, মশার প্রজননের জন্যও তাপমাত্রা উপযুক্ত থাকে। তাই আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বুঝতি পারছি, এ বছর বৃষ্টি শুরু হলে এডিস মশার প্রজনন বাড়তে থাকবে।’
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গত বছর ডেঙ্গুজ্বরে রেকর্ড পরিমাণ রোগী আক্রান্ত হয়েছে। ২০০০ সালে দেশে প্রথম ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। সে বছর ৫ হাজার ৫৫১ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং ৯৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এরপর ২০১৯ সালে ডেঙ্গু প্রকোপ আকার ধারণ করে। এ সময় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন ১ লাখেরও বেশি মানুষ, মারা গিয়েছিলেন ১৭৯ জন। ২০২০ সালে করোনা মহামারি আঘাত হানে। এ বছর আক্রান্ত কমে আসে। এরপর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। গত বছর দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের ২২ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয় ও মারা যায়।
গত বছর ৬৪ জেলাতেই এডিস মশার অস্তিত্ব ও ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গিয়েছিল। এবারও দেশজুড়ে এডিস মশার বিস্তার থাকলেও জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থা বসে আছে হাত গুটিয়ে। মশা নিয়ন্ত্রণে ২০২১ সালে একটি জাতীয় নির্দেশিকা প্রকাশ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। সেই জাতীয় নির্দেশিকা নিয়ে নেই কোনো আলোচনা। ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত অন্যান্য রোগ প্রতিরোধে জাতীয় নির্দেশিকায় বলা হয়, ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায় থেকে শুরু করে পৌরসভা, উপজেলা, জেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন প্রতি মাসে মশা পরিস্থিতির ওপর প্রতিবেদন পেশ করবে। প্রতিটি পর্যায়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তির সমন্বয়ে এ-সংক্রান্ত কমিটিও আছে। তবে প্রতিবেদন পাঠানো দূরের কথা, এ ধরনের একটি কমিটি আছে এটাই জানা নেই কারও। নির্দেশিকায় বলা আছে, ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্যরা তাঁর ওয়ার্ডের মশার বিস্তার নিয়ে প্রতি মাসে ইউপি চেয়ারম্যানকে জানাবেন। একইভাবে জেলা পর্যায়ে মশক নিয়ন্ত্রণে ২৬ সদস্যের একটি কমিটি থাকার কথা বলা আছে নির্দেশিকায়। তারা প্রতি মাসে একটি করে সভা করে মশার বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে প্রতিবেদন দেবেন। এ কমিটির সদস্যরা হলেন- জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন থেকে শুরু করে সরকারের স্থানীয় পর্যায়ের সব শীর্ষ কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, মুক্তিযোদ্ধা, এনজিও প্রতিনিধি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি। কিন্তু এগুলো শুধুই কেতাবে আছে, বাস্তবে এর কোনো খবর নেই।