মঙ্গলবার, ১১ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

নগরে চলছে বৃক্ষমেলা

শামীম আহমেদ

নগরে চলছে বৃক্ষমেলা

ছবি : জয়ীতা রায়

চলছে আম-কাঁঠাল-লিচুর মৌসুম। গাছ থেকে নিজ হাতে এসব ফল পেড়ে খাওয়ার সৌভাগ্য রাজধানী ঢাকার খুব কম মানুষেরই হয়। তবে এক মাসের জন্য মিলছে সেই সুযোগ। এজন্য ক্রেতাকে কিনতে হবে পুরো গাছ। যেতে হবে আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র (বিআইসিসি) সংলগ্ন সাবেক বাণিজ্য মেলার মাঠে। সেখানেই চলছে জাতীয় বৃক্ষমেলা-২০২৪। বিশাল এলাকাজুড়ে লাখো গাছে ঝুলছে আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, বেল, লটকন, খুরমা খেজুর, মাল্টা, সুইট লেমনসহ শত শত প্রজাতির ফল। আছে বনজ, ঔষধি, সৌন্দর্যবর্ধকসহ হাজারও প্রজাতির দেশি-বিদেশি গাছ। ৫০ টাকা থেকে শুরু করে রয়েছে ১২ লাখ টাকা দামের গাছও।

গত ৫ জুন জাতীয় বৃক্ষমেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মেলা চলবে আগামী ১৩ জুলাই পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত মেলা প্রাঙ্গণ। মেলায় ঢুকতে লাগবে না প্রবেশ ফি। রয়েছে বিনামূল্যে গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা। প্রথম দিন ভিড় কিছুটা কম থাকলেও দি¦তীয় দিন থেকেই জমে উঠেছে মেলা। হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন বৃক্ষপ্রেমিরা। অফিস থেকে ফেরার পথে অনেকেই ঢুঁ মারছেন বৃক্ষমেলায়। হারিয়ে যাচ্ছেন সবুজের ভিড়ে। হাতে করে বা গাড়ির ব্যাকডালায় ভরে গাছ নিয়ে ফিরছেন বেলকনি বা ছাদের জন্য। ১২০টি স্টলের মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি ৮০টি প্রতিষ্ঠান ও নার্সারি এবারের বৃক্ষ মেলায় দেশি-বিদেশি ২ শতাধিক প্রজাতির ফলদ, বনজ ও শোভাবর্ধক গাছের পসরা সাজিয়ে বসেছে। তবে, বেশি বিক্রি হচ্ছে ছাদ-বাগান ও ঘর সাজানোর গাছ। গাছের পাশাপাশি বীজ, সার, মাটি, কীটনাশক, টব, ল্যান্ডস্কেপ ডিজাইন, টব বা গাছ রাখার বিভিন্ন আসবাবপত্রও বিক্রি করা হচ্ছে।

গতকাল সন্ধ্যায় মেলায় কথা হয় মিরপুরের বাসিন্দা ডেইজি আক্তারের সঙ্গে। স্কুলপড়ুয়া দুই সন্তানকে নিয়ে আসেন বৃক্ষমেলায়। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রতি বছর বৃক্ষমেলার জন্য অপেক্ষা করি। এখানে আসলে মনটা ঠান্ডা হয়ে যায়। বাচ্চাদের বিভিন্ন গাছের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেই। লাগানোর জায়গা নেই, তবুও বেলকনি ও ঘরের ভিতরে রাখার জন্য কিছু গাছ কিনি।

মেলা ঘুরে ফলদ গাছের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে বিভিন্ন প্রজাতির আম। ছোট ছোট গাছে দৃষ্টি কাড়ছে থোকায় থোকায় ধরে থাকা বিভিন্ন রঙের ও আকারের আম। এর মধ্যে ক্রেতাদের সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করছে ব্রুনাই কিং জাতের আম গাছ। কয়েক ফুট উচ্চতার এসব গাছে ঝুলে আছে ৩-৪ কেজি ওজনের আম। ছোট ছোট কাঁঠালের মুচিও দেখা গেছে গাছে। ক্রেতাদের আগ্রহ দেখা গেছে আঁঠাবিহীন কাঁঠাল গাছের প্রতি। বৃক্ষমেলায় অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ৩১ বছর বয়সের জিনসেং বট প্রজাতির একটি বনসাই। মূল ফটক দিয়ে মেলায় প্রবেশের পর হাতের বাঁ দিকে কিছুটা এগোলেই বরিশাল নার্সারির সামনে খালি জায়গায় সাজিয়ে রাখা হয়েছে গাছটি। বনসাইটির দাম চাওয়া হচ্ছে ১০ লাখ টাকা। বরিশাল নার্সারির স্বত্বাধিকারী মো. ইব্রাহিম বলেন, জিনসেং বট প্রজাতির এ বনসাইটি আনা হয়েছে চীন থেকে। চীনে বনসাইটি ২৩ বছর ছিল। বাংলাদেশে বরিশাল নার্সারিতে আছে আট বছর ধরে। আমরা এবার বিভিন্ন ফলদ, বনজ ও ইনডোর প্ল্যান্টের অন্তত ১ হাজার প্রজাতির গাছের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বনসাই এনেছি।

এদিকে মেলার মাঝামাঝি খাঁন নার্সারিতে গিয়ে দেখা মিলল বারহি জাতের একটি খেজুর গাছের। প্রায় ২০ ফুট উচ্চতার গাছটিতে থোকায় থোকায় ঝুলছে খেজুর। গাছটির দাম চাওয়া হচ্ছে ১২ লাখ টাকা। খাঁন নার্সারির বিক্রয়কর্মী শাকিল বলেন, খেজুর গাছটির বয়স আট বছর। এটি সৌদি আরবের একটি জাত। এখন পর্যন্ত ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম উঠেছে।

মেলায় বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের স্টলকে ঘিরেও নগরবাসীর উৎসাহ দেখা গেছে। স্টলটির শোভা বাড়াচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির দুর্লভ ও বিলুপ্তপ্রায় বাঁশ ও গাছ। রয়েছে ওরা বাঁশ, তল্লা বাঁশ, ভেরিগেড ব্যাম্বু, মুসো বাঁশ, জিগজাগ বাঁশ, মিতিঙ্গা বাঁশসহ নানান প্রজাতির বাঁশের সমাহার। স্টলে থাকা বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজিজুল হক বলেন, আমাদের স্টলে বিভিন্ন প্রজাতির দুর্লভ ও বিলুপ্তপ্রায় বাঁশ, কাঠ ও ফলের গাছ রয়েছে। দর্শনার্থীদের এসব গাছের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে এগুলো মেলায় আনা হয়েছে। মেলার শেষভাগে এসব বাঁশ ও গাছ স্বল্পদামে বিক্রি করা হবে।

মেলায় অংশ নেওয়া রেনোভা নার্সারির স্বত্বাধিকারী ফাতেমা বলেন, আমাদের স্টলে আউটডোর প্লান্টের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের উপকারী ইনডোর প্লান্ট রয়েছে। এসব ইনডোর প্লান্ট ঘরের বাতাস বিশুদ্ধ রাখে। দর্শনার্থীদের আমরা কোন গাছের কী উপকারিতা তা জানাচ্ছি। মানুষও দিন দিন সচেতন হচ্ছে। আশা করছি বেচাকেনা ভালোই হবে।

বিক্রেতারা বলছেন, ঢাকায় বড় গাছ লাগানোর মতো জমি আছে খুব কম মানুষের। এজন্য ফুলগাছ, ক্যাকটাস, পাতাবাহার, বেগুন, মরিচ, ক্যাপসিকামের মতো ছোট গাছের চাহিদা বেশি। তবে যাদের ছাদ বা কিছুটা জমি আছে তারা আম, কাঁঠাল, লিচু, মাল্টা, কমলা, সফেদাসহ বিভিন্ন ফল গাছ কিনছেন। তবে এখনো বেচাকেনা জমে ওঠেনি। অধিকাংশ মানুষই আসছেন দেখতে। শেষ দিকে বিক্রি বাড়তে পারে।

সর্বশেষ খবর