মঙ্গলবার, ১১ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

শতবর্ষী হাঁসের হাট

নজরুল মৃধা, রংপুর

শতবর্ষী হাঁসের হাট

রংপুর নগরীর প্রাণকেন্দ্রের দক্ষিণ দিকে ঐতিহ্যবাহী লালবাগের হাট। এ হাটকে ঘিরে গরু-খাসিসহ নানা ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। তেমনি লালবাগ হাটে রয়েছে শতবছরের ঐতিহ্য হাঁসের হাট। প্রতি রবিবার ও বুধবার এ হাট বসে। দূর-দূরন্ত থেকে হাঁস বিক্রি করতে আসেন বিক্রেতারা। মূল লালবাগ হাটের পূর্বপাশে রাস্তার পাশে এ হাট বসে। হাঁস বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম বদরগঞ্জ উপজেলা থেকে এসেছেন হাঁস বিক্রি করতে। তিনি ৬৫টি হাঁস এনেছেন।  দেশি হাঁস বাদেও তার কাছে রয়েছে রাজহাঁস, চিনাহাঁস।  তিনি জানান, প্রতিহাটে গড়ে ৩০/৪০টি হাঁস বিক্রি করেন।  দেশি  হাঁস  আড়াই থেকে ৩ হাজার টাকা জোড়া। চিনা ও রাজহাঁস প্রতিটি ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি করেন।

আরেক বিক্রেতা আনারুল ইসলাম নগরীর কলেজ পাড়া থেকে হাঁস বিক্রি করতে এসেছেন।  তিনি বলেন, ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে এখানে হাঁস কেনা বেচা হচ্ছে। হাঁস কিনতে আসা আমিন মিয়া বলেন, তিনি শখ করে হাঁস কিনতে এসেছেন। এক জোড়া হাঁস কিনেছেন আড়াই হাজার টাকায়।  তার মতো অনেকে আসেন এখানে হাঁস কিনতে। হাঁসের হাটের ইজারাদার স্বপন মিয়া বলেন, হাটবারে ৯০ থেকে ১১০ জন হাঁস বিক্রি করতে আসেন। প্রতিহাটে গড়ে ৩৫০ থেকে ৪০০ হাঁস বিক্রি হয় এখানে।

লালবাগ হাট সম্পর্কে জানা গেছে, মুঘল সম্রাট শাহ আলমের বড় চাচাত ভাই এবং ভগ্নিপতি ছিলেন নবাব নূর উদ্দিন বাকের মোহাম্মদ জং। তার রাজধানী ছিল মিঠাপুকুরের ফুলচৌকি। এখানকার শাসক ছিলেন তিনি। বাকের জং ১৭৬০ থেকে ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ইংরেজদের সঙ্গে অসংখ্যবার যুদ্ধ করেছেন। সর্বশেষ লালমনিরহাটের আদিতমারীর মোগলহাটে ব্রিটিশ সেনাদের অতর্কিত হামলায় আহত হন। আহত অবস্থায় তাকে রাজধানী ফুলচৌকিতে নেওয়া হয়। আহত অবস্থায় ১৭৮৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি ফুলচৌকির নিজ বাসভবনে মারা যান। বাকের জংয়ের দুই ছেলে কামাল উদ্দিন মোহাম্মদ ও জামাল উদ্দিন মোহাম্মদ। তার দুই কন্যা শাহাজাদি লালবিবি ও শাহাজাদি চাঁদ বিবি। লালবিবিও ছিলেন পিতার মতো ইংরেজবিরোধী। ১৮৩২-৩৩ সালে রংপুর নগরীর মীরগঞ্জ তামপাট এলাকায় প্রজা ও ফকির বিদ্রোহী নেতাদের সঙ্গে ইংরেজদের যুদ্ধ হয়। সেখানে লালবিবিসহ বেশ কজন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেতাকে হত্যা করে ইংরেজরা। তামপাটেই লালবিবিকে সমাহিত করা। ওই এলাকাটির নাম এখন সমর দীঘি । এখনো সমর দীঘিতে লাল বিবির কবরের স্মৃতি চিহ্ন রয়েছে। বর্তমান যেখানে লালবাগ হাট। সেই স্থানটি ওই সময় ছিল লালবিবির বিশ্ববিখ্যাত ফুলের বাগান অর্থাৎ বাগ বা বাগিচা। বিশ্বের দুর্লভ প্রজাতির ফুল ফুটত ওই বাগানে। লালবিবি শহীদ হওয়ার পর ওই স্থানের নাম রাখা হয় লালবাগ।

সর্বশেষ খবর