মঙ্গলবার, ২৫ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

নগরে বেহাল নগর পরিবহন

অন্য বাসের দাপটে থমকে গেছে, তিন রুটের মধ্যে একটি বন্ধ, দুটিতে খুঁড়িয়ে চলছে বিআরটিসি

হাসান ইমন

নগরে বেহাল নগর পরিবহন

রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে ঘটা করে চালু হয়েছিল ঢাকা নগর পরিবহন। শুরুতে এই ব্যবস্থাপনায় বেশ সাড়াও পড়েছিল। নগরবাসীর সাড়া পেয়ে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি পরিকল্পনা অনুযায়ী নতুন নতুন রুট চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু নগর পরিবহন বাস রুটে অন্য পরিবহনের আধিপত্য, বাস মালিক সমিতির অনাগ্রহ ও ব্যবস্থাপনায় গাফিলতির কারণে উদ্যোগ থমকে গেছে। এখন রীতিমতো বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই পাইলট প্রকল্প। তবে এখন শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) দুটি রুটে কিছু পরিবহন দিয়ে সেবাটি চালু রেখেছে। 

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি প্রথম ২১ নম্বর রুট চালু করে। এর যাত্রাপথ ছিল ঘাটারচর থেকে মোহাম্মদপুর, শাহবাগ, প্রেস ক্লাব হয়ে কাঁচপুর পর্যন্ত। ১০০ বাস দিয়ে যাত্রা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ৫০টি দিয়ে শুরু করা হয়। এর মধ্যে বিআরটিসির ৩০টি ডাবল ডেকার এবং ট্রান্স সিলভা পরিবহনের ২০টি বাস কিছুদিনের মধ্যে যুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও আর হয়নি। সব শেষ গত বছরের ১ এপ্রিল থেকে এ রুটে ট্রান্স সিলভা পরিবহন সেবা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। এ রুটে বিআরটিসির কিছু বাস চললেও উপযুক্ত সেবা পাচ্ছেন না যাত্রীরা। ২২ নম্বর রুটে (ঘাটারচর-মোহাম্মদপুর-ফার্মগেট-শাহবাগ-কাকরাইল-ফকিরাপুল-মতিঝিল-কাজলার পাড়-ডেমরা) চলে হানিফ পরিবহনের বাস। এ রুটে তাদের ৫০টি বাস চলার কথা থাকলেও শুরু হয়েছিল ৩০টি বাস দিয়ে। সবশেষ তথ্য অনুযায়ী এই রুটের হানিফ পরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। ২৬ নম্বর রুটে ৫০টি বাস দিয়ে বিআরটিসি চালু হওয়ার কথা থাকলেও ৩০টি দিয়ে শুরু হয়। তা এখন কমে ১৫-২০টিতে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া গত বছর ২৩, ২৪, ২৫, ২৭ ও ২৮ নম্বর রুটে বাস চালু করার কথা থাকলেও চালু হয়নি।

আরও জানা যায়, ২১, ২২ ও ২৬ নম্বর রুটে নগর পরিবহন সেবা চালু হওয়ার পর অন্য বাসগুলো বন্ধের নির্দেশনা দেওয়ার পরও চলছে বেসরকারি মালিকানাধীন পরিবহন। এসব রুটে গ্লোরি পরিবহন, মৌমিতা পরিবহন, আশিয়ান পরিবহন, গ্রিন বাংলা, স্বাধীন পরিবহন, অভিনন্দন পরিবহন, পরিস্থান পরিবহন, প্রজাপতি, আনন্দ পরিবহন, বোরাক পরিবহন, আলদি পরিবহন, রাইদা পরিবহন, মালঞ্চ পরিবহন, মিডলাইন পরিবহন চলাচল করছে। এ ছাড়া মাইক্রোবাস কেটে অবৈধভাবে বানানো লেগুনা এবং রুট পারমিটবিহীন লেগুনাও নিয়মিত চলছে। এসব রুটে বেসরকারি মালিকানাধীন বাসের আধিপত্যে মান হারিয়েছে ঢাকা নগর পরিবহন। এসব অভিযোগে ট্রান্সসিলভা ও হানিফ পরিবহন তাদের রুট থেকে বাস সেবা সরিয়েছে।

এ ছাড়া বেসরকারি বাস মালিকরা দাবি করেছিল তাদের বাসগুলোর বিকল্প ব্যবস্থা করতে। এর একটি হচ্ছে সরকারিভাবে চলমান বাসগুলো কিনে নেওয়া এবং অপরটি হচ্ছে নতুন বাস কেনার জন্য ব্যাংক ঋণ দেওয়া। তার কোনোটিই হয়নি। এতে পরিবহন মালিকরা নগর পরিবহন সেবায় বাস দিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে।

এদিকে নগর পরিবহনে ২১ ও ২৬ নম্বর রুটে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিআরটিসি বাস চালিয়ে যাচ্ছে। তবে পরিবহন সেবা চলমান থাকলেও প্রতিদিনই লোকসান গুনতে হচ্ছে সংস্থাটির। বিআরটিসি দাবি করছে, নগর পরিবহনে চলাচলের কারণে বাসে যাত্রী কম ছিল। ফলে আয়ও কম হয়েছে। এর বিপরীতে জনবল বেশি হওয়ায় তাদের বেতন ও রক্ষণাবেক্ষণসহ অপারেশন খরচ মেটাতে গিয়ে লোকসান গুনতে হয়েছে। এ বিষয়ে বিআরটিসি চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রাজধানীর পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকার ‘ঢাকা নগর পরিবহন’ চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। এরমধ্যে ২১ ও ২৬ নম্বর রুটে বিআরটিসির বাস দিয়ে সেবা চালু হয়েছে। এটা এখনো অব্যাহত আছে। লোকসানে থাকলেও সরকারি সিদ্ধান্তে যাত্রীসেবা অব্যাহত রাখবে। সব জায়গায় লাভ করা যায় না। যেহেতু সরকারি সংস্থা মানুষের সেবা দেওয়াই বিআরটিসির কাজ।

সর্বশেষ খবর