মঙ্গলবার, ২৫ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

নালায় পড়ে মৃত্যু ঠেকাতে বাঁশ-রশির ঘেরাও!

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

নালায় পড়ে মৃত্যু ঠেকাতে বাঁশ-রশির ঘেরাও!

চট্টগ্রাম নগরের আছদগঞ্জ এলাকার কলাবাগিচা খালে পড়ে গত ২৭ মে’র জলাবদ্ধতায় আজিজুল হাকিম নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। পরে স্থানীয়দের  উদ্যোগে সেখানে রশি দিয়ে অস্থায়ী ঘেরাও দেওয়া হয়। গত ১১ জুন চাক্তাই খালের স্লুইস গেট এলাকায় নিখোঁজের ১৪ ঘণ্টা পর পার্শ্ববর্তী রাজাখালী খালে  লাশ পাওয়া যায়। পরে সেখানে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) অস্থায়ী বাঁশের বেষ্টনী দেয়।  

এভাবে নগরের উন্মুক্ত খাল-নালা ও ড্রেনে পড়ে মৃত্যু ঠেকাতে বাঁশ ও রশি দিয়ে অস্থায়ী নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা হচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও মৃত্যুর ঘটনার পর তাও দেওয়া হয়নি। একের পর এক খাল নালায় পড়ে মৃত্যু ও নিখোঁজ হলেও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। ক্রমশই চট্টগ্রাম নগরটি খাল-নালায় পড়ে ডুবে মৃত্যুর শহরে পরিণত হচ্ছে।    

অভিযোগ আছে, গত তিন বছর ধরে প্রতি বর্ষা মৌসুমে খাল-নালায় পড়ে মৃত্যু ও নিখোঁজের ঘটনা বার বার ঘটছে। কিন্তু দায়িত্বের সংস্থা চসিক ও সিডিএ অনেকটা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। বাঁশ বা রশি দিয়ে অস্থায়ী ঘেরাও দিয়ে দায়িত্ব পালন করছে। ফলে বার বার মৃত্যুর মতো দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।

চসিক সূত্র জানায়, নগরে খাল নালা আছে ১ হাজার ১৩৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে নিরাপত্তাবেষ্টনী ছাড়া খালের পাড় আছে প্রায় ১৯ কিলোমিটার। উন্মুক্ত নালা রয়েছে ৫ হাজার ৫২৭টি স্থানে। এর মধ্যে ১০ শতাংশ নালাতেও নিরাপত্তাবেষ্টনীর কাজ হয়নি। নগর স্থপতি আশিক ইমরান বলেন, প্রতি বছরই খাল-নালায় পড়ে মানুষ মরছে, নিখোঁজ হচ্ছে। কিন্তু অভিন্ন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলেও এ সমস্যা নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এটা সেবা সংস্থাগুলোর অবহেলা। এ ব্যাপারে সংস্থাগুলোর দায়িত্বশীল ভূমিকা জরুরি। একই সঙ্গে খাল-নালা এলাকার বাসিন্দাদেরও আরও সতর্ক হওয়া দরকার।

চসিকের প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) শাহীন উল ইসলাম চৌধুরী বলেন, উন্মুক্ত খাল-নালায় নিরাপত্তার লক্ষ্যে বেষ্টনী দেওয়া হয়। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। তাছাড়া, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করার একটি কাজও বর্তমানে চলছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৯ এপ্রিল সদরঘাট নালাপাড়া এলাকায় অরক্ষিত ড্রেনে পড়ে ৩ বছরের শিশু ওজাইফা মারা যায়। গত ২৭ মে নগরীর কোতোয়ালি থানার আছাদগঞ্জ শুঁটকি পল্লি এলাকার কলাবাগিচা খালে পড়ে মারা যাওয়া আনুমানিক ৩০ বছর বয়সী অজ্ঞাত এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। গত ১১ জুন চাক্তাই খালে গোসল করতে নেমে নিখোঁজ হয় দুই শিশু। পরদিন একজন শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

২০২৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর নগরের ডবলমুরিং থানাধীন সিডিএ আবাসিক  এলাকার খালে নেমে নিখোঁজ হয় আবদুল্লাহ (৫)। এক দিন পর তার লাশ পাওয়া যায়। ওই বছরের ৭ আগস্ট ১ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের ফতেহপুর ইসলামিয়া হাটসংলগ্ন বাদামতলা এলাকায় বৃষ্টির মধ্যে নালায় পড়ে মৃত্যু হয় কলেজছাত্রী নিপা পালিতের (২০)। ওই বছরের ২৭ আগস্ট নগরের আগ্রাবাদের রঙ্গিপাড়ায় ইয়াছিন আরাফাত নামের দেড় বছর বয়সী এক শিশু নিখোঁজ হয়। পরে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। ২০২২ সালের ১৫ এপ্রিল ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা শহরের কালুরঘাট এলাকার ওসমানিয়া খাল থেকে এক নারীকে উদ্ধার করে।

সর্বশেষ খবর