একটু ভারী বৃষ্টি হলেই রাজধানীর প্রধান সড়কসহ অলিগলি সব স্থানে জমে যায় হাঁটু পানি। এতে ভোগান্তিতে পড়েন শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, পথচারীসহ কর্মজীবীরা। নগরবাসীর প্রশ্ন, সারা বছরই ঢাকা দুই সিটি করপোরেশন জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করছে। তার পরেও একটু বৃষ্টি হলে সড়কে জলাবদ্ধতা হয় কেন? কেন বারবার ডুবে যায় ঢাকা।
গত এক যুগ থেকে দেখা যাচ্ছে, এক পশলা বৃষ্টিতে রাজধানীর অলিগলি ও প্রধান প্রধান সড়কগুলো তলিয়ে যায়। আর দিনভর বৃষ্টি হলে ডুবে যায় ঢাকা শহর। হাঁটু ও বুকসমান পানিতে তলিয়ে যায় বিভিন্ন এলাকা। এতে ভোগান্তি ও নাকাল হতে হয় নগরবাসীকে। অথচ জলাবদ্ধতা নিরসনে সারা বছর কাজ করে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। একই সঙ্গে জলাবদ্ধতা নিরসনে বহু প্রকল্পের মধ্যে এরই মধ্যে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে। বর্তমানে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি প্রকল্পের কাজ চলছে। তার পরেও দূর হয় না জলাবদ্ধতার। এত টাকা খরচ করেও ফলাফল শূন্যই থেকে যাচ্ছে। কোনো উদ্যোগই যেন কাজে আসছে না।
রাজধানীর সায়েদাবাদ, শনিরআখড়া, বংশাল, নাজিমুদ্দিন রোড, নিউমার্কেট, ধানমন্ডি, মিরপুর, ১১, ১২, ১৩, কল্যাণপুর, হাতিরঝিলের কিছু অংশ, আগারগাঁও থেকে জাহাঙ্গীর গেট যেতে নতুন রাস্তায়, খামারবাড়ী থেকে ফার্মগেট, ফার্মগেট-তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড-সংলগ্ন এলাকা, মোহাম্মদপুরের কিছু অংশ, মেরুল বাড্ডা, ডিআইটি প্রজেক্ট এলাকায়, গুলশান লেকপাড় এলাকার সংযোগ সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে নিয়মিত।
নিউ মার্কেটের দোকানি জহিরুল ইসলাম বলেন, ইদানীং বৃষ্টি হলে খুব ভয় লাগে। কারণ বৃষ্টি হলেই দুই তিন দিন পর্যন্ত জলাবদ্ধতা থাকে। ফলে আমাদের ব্যবসাও বন্ধ থাকে। দোকান খুলতে পারি না, পানির কারণে কাস্টমার আসতে পারে না। আগে বৃষ্টির পর কিছু সময় পানি থাকত, পরে নেমে যেত। কিন্তু এখন দুই-তিন দিন ধরে থাকে।
জুরাইন এলাকার বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম বলেন, কিছুদিন আগে যে তীব্র বৃষ্টি হলো সে সময় আমার এলাকার অনেক বাড়ি থেকে দুই দিন কেউ বেরই হতে পারেনি। খুব প্রয়োজনে যারা বের হয়েছে তারা হাঁটু পানি মাড়িয়ে এখানে ওখানে গেছে।
তিনি বলেন, আমাদের সারা জীবন জলাবদ্ধতার মধ্যে চলাফেরা করতে হয়। আগেও জলাবদ্ধতা ছিল, এখনো জলাবদ্ধতা আছে। তবে এখন পানি জমে থাকার সময়সীমা আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্টদের স্থায়ী কিছু একটা করা দরকার। কারণ, জলাবদ্ধতা হলে আমাদের এলাকায় যান চলাচল, মানুষের যাতায়াত এবং ব্যবসায় খারাপ প্রভাব পড়ে। আমরা এই সমস্যা থেকে স্থায়ী মুক্তি চাই।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, ঢাকায় দেদার ভবন হচ্ছে, খাল দখল করে রাস্তা হচ্ছে। নগরীর ধারণক্ষমতার তুলনায় ভবন ও মানুষের সংখ্যা ৩ থেকে ৪ গুণ হয়ে গেছে। এখনো ঢাকা ঘিরে উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণের কোনো প্রচেষ্টা নেই। সেই জন্যই বৃষ্টি হলেই ডুবে যায় ঢাকা।
তিনি আরও বলেন, পানি আন্ডারগ্রাউন্ডে যাওয়ার জন্য যে মাঠ বা সবুজ এলাকা দরকার তা নেই। জলাশয়ও ভরাট হয়ে যাচ্ছে। যেমন- হাতিরঝিলে একটা অংশ, বিমানবন্দর এলাকার একটা অংশও ভরাট করা হয়েছে। বিএডিসিও জায়গা ভরাট করেছে। একই সঙ্গে কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকার পরিমাণ বাড়ার কারণে ঢাকা ডুবছে।
এদিকে জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় মনিটরিং করার জন্য কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে অঞ্চল ভিত্তিক ১৭ সদস্যের পরিদর্শন টিম গঠন করেছে। গত রবিবার এক অফিস আদেশে এই তথ্য জানানো হয়। কমিটিতে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা, প্রধান প্রকৌশলীরা রয়েছেন।