মঙ্গলবার, ৯ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

সরু হয়ে আসছে উত্তরার সড়ক

সার্ভিস লেন ভেঙে মূল সড়ক প্রশস্ত করা হয়েছে তবুও লাগছে যানজট

বিশেষ প্রতিনিধি

সরু হয়ে আসছে উত্তরার সড়ক

ছবি : শিমুল মাহমুদ

দেখে মনে হতে পারে রাজধানীর সবচেয়ে প্রশস্ত সড়ক এটি। উত্তরার ঐতিহ্য প্রধান সড়কের সার্ভিস লেনগুলো ভেঙে মূল সড়কের সঙ্গে মিশিয়ে দিয়ে প্রশস্ত করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে প্রায়ই যানজট লাগে প্রধান সড়কেই। দীর্ঘ এক দশক ধরে উত্তরা-টঙ্গী-গাজীপুরবাসীর দুর্ভোগ-দুর্গতির অন্যতম প্রকল্প বাস র‌্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) বাস চলাচলের জন্য মাঝ রাস্তা বরাবর বিআরটি সড়ক করা হয়েছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মূল সড়কের ওপর মাঝখানে তৈরি করা হয়েছে বাস স্টপেজ। ফুটপাত থেকে শত সিঁড়ির ফুটওভার ব্রিজ পেরিয়ে পৌঁছাতে হবে সেই বাস স্টপেজে। বিআরটি বাস স্টেশনের কারণে বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত ১৯টি স্থানে সরু হয়ে গেছে সড়ক ও ফুটপাত। ১৬ কিলোমিটারের মধ্যে এই ১৯টি স্টেশন ভূমির সমান্তরালে রয়েছে। বাকি সাড়ে ৪ কিলোমিটারে ছয়টি ফ্লাইওভারের ওপরে রয়েছে ছয়টি স্টেশন। ভূমির সমান্তরালের ১৯টি স্টেশন এলাকায় সড়ক ও ফুটপাত সরু হয়ে যাওয়ায় যানজট ও পথচারী পারাপারে ভোগান্তির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন স্থানে যানজট লাগছে। বিআরটি প্রকল্পের লিফট ও ফুটওভার ব্রিজের সিঁড়ির কারণে সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে ফুটপাত। এই পরিস্থিতিতে বাস স্টপেজ এলাকায় ভোগান্তিতে পড়ছে যাত্রী ও পথচারীরা। এ বছরের মধ্যেই বিআরটি চালুর তোড়জোড় চলছে। তখন প্রকল্পটির পরিকল্পনা ত্রুটিগুলো প্রকট হয়ে দেখা দেবে বলে মনে করছেন পরিবহন বিশ্লেষকরা।

উত্তরার এইচ এম প্লাজার ব্যবসায়ী আহসান উল্লাহ বাবু বলেন, সার্ভিস রোডগুলো ভেঙে ফেলে আমাদেরকে অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে। সার্ভিস রোডগুলো না থাকায় আমরা অনিরাপদ ভাবছি। এখন রাস্তায় বেরোলেই দ্রুতগামী বাস-ট্রাকের মুখোমুখি হতে হয়। তিনি বলেন, বর্তমান ব্যবস্থায় নারী, শিশু, বয়ষ্ক ও প্রতিবন্ধীরা বড় বিপদে পড়েছেন। তাদের রাস্তা পারাপারে কোনো সুযোগ রাখা হয়নি।  

এদিকে বিআরটি প্রকল্পের সাফল্য নিয়ে শুরুর আগেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। টঙ্গীর ব্যবসায়ী ইব্রাহিম হোসেন বলেন, আমাকে ব্যবসার কাজে প্রায়ই পল্টন যেতে হয়। আমি বিআরটির বাসে চড়ে কীভাবে পল্টন যাব। আমাকে তো এয়ারপোর্টেই বাস বদলাতে হবে। এই ভোগান্তি আমি কেন নেব। গাজীপুরের ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) শিক্ষাথী গোলাম রাব্বানী বলেন, বিআরটি মূল সড়কের বড় অংশ নিয়ে নিয়েছে। বিআরটির অংশ বাদ দিলে এই সড়কে একটি করে লেন। একটি লেন দিয়ে যানবাহন স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারবে না। যানজট থেকে কোনোভাবেই মুক্তি পাওয়া যাবে না। তিনি বলেন, গাজীপুর পোশাক শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকা। কিন্তু প্রকল্পে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের কথা ভাবা হয়নি। তারা সকালে কাজে যাওয়ার সময় দুপুরে খাবারের সময় এবং রাতে বাড়ি ফেরার সময় কীভাবে রাস্তা পার হবেন সেই ব্যবস্থা রাখা হয়নি।

বিআরটির স্টেশনে ওঠানামার জন্য চারটি চলন্ত ও পায়ে হাঁটার দুটি সিঁড়ি রাখা হয়েছে। সব কটি ফুটপাতের ওপর। এ জন্য স্টেশন এলাকায় ফুটপাত সরু হয়ে গেছে। এসব জায়গা পার হতে পথচারীদের মূল সড়কে নামতে হচ্ছে। অন্যদিকে শতাধিক সিঁড়ি পার হয়ে ফুটপাত থেকে রাস্তার মাঝখানে গিয়ে বাসে উঠতে হবে যাত্রীদের।

বিআরটি স্টেশন কেন ১ নম্বর সেক্টরে : বিআরটি অপারেশন শুরুর আগেই প্রশ্নটি এসে গেছে। বর্তমানে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের বিমানবন্দর, জসীমউদ্দীন, রাজলক্ষ্মী ও আজমপুরে নির্ধারিত বাস স্টপেজ রয়েছে। সড়কের এই অংশে বিআরটি স্টেশন করা হয়েছে বিমানবন্দর, ১ নম্বর সেক্টর ও আজমপুরে।  জসীমউদ্দীন ও রাজলক্ষ্মীতে কোনো স্টেশন নেই। এই দুটি স্টপেজের যাত্রীরা বিআরটির সার্ভিস নেবে কীভাবে? অথচ বিমানবন্দর স্টেশন ও ১ নম্বর সেক্টরের স্টেশন খুবই কাছাকাছি। এই দুটি স্টেশনের প্রায় চারগুণ দূরত্ব  জসীমউদ্দীন ও রাজলক্ষ্মী এলাকায় কোনো স্টেশন করা হয়নি। অন্যদিকে ১ নম্বর সেক্টর স্টেশনের পশ্চিম অংশে ওয়ানওয়ে সড়ক, যেখানে রিকশা চলাচলের কোনো সুযোগ নেই। ব্যক্তিগত গাড়িতেই যানজট লাগে প্রায়ই। একই অবস্থা উল্টো পাশে র‌্যাব অফিসের কাছের সড়কেরও। সেখানেও রিকশা চলাচলের কোনো সুযোগ নেই। এই অবস্থায় বিআরটির যাত্রীরা কীভাবে যাতায়াত করবে? সেখানে কি আদৌ কোনো যাত্রী পাওয়া যাবে? কোন বিবেচনায় রাজলক্ষ্মী ও জসীমউদ্দীনের মতো জনবহুল এলাকা বাদ দিয়ে এমন একটি বিরান এলাকায় বিআরটি স্টেশন করা হলো? পর্যবেক্ষকদের মতে, এই প্রশ্নের জবাব খুব শিগগিরই দিতে হবে সংশ্লিষ্টদের।

সর্বশেষ খবর