বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

রাজধানীজুড়ে পোড়া গাড়ির কঙ্কাল

বিশেষ প্রতিনিধি

রাজধানীজুড়ে পোড়া গাড়ির কঙ্কাল

ছবি : জয়ীতা রায়

রাজধানীর রাজপথ এবং গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনজুড়ে এখন পোড়া গাড়ির কঙ্কাল পড়ে আছে। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের আড়ালে সরকারি স্থাপনা টার্গেট করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে গত কয়েক দিনে। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে শত শত গাড়ি। সবচেয়ে বেশি ৫৫টি গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের বনানীর অফিস কম্পাউন্ডে। আমাদের গর্ব ও গৌরবের স্থাপনা বাংলাদেশ টেলিভিশনে ঢুকেও অসংখ্য গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। নগরীর বিভিন্ন স্থানে সড়কে, গ্যারেজে পোড়া গাড়ি পড়ে আছে ধ্বংসস্তূপের চিহ্ন হয়ে। এমন নারকীয় তাণ্ডব আগে কখনো দেখেনি বাংলাদেশ। এমন আত্মঘাতী অপতৎপরতায় ক্ষুব্ধ-মর্মাহত দেশের মানুষ।

গত কয়েক দিনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন অঞ্চল ৩ ও ৪-এ অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করেছে আন্দোলনকারীরা। এতে সিটি করপোরেশনের ৩২টি গাড়ি আগুনে পুড়ে যায়। আরও ১৭টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এসব গাড়ির অধিকাংশই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার। বাকিগুলো পিকআপ, ট্রাক ও প্রাইভেটকার রয়েছে। গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার কারণে এসব এলাকায় ময়লা সংগ্রহ ব্যাহত হচ্ছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম বলেন, গত কয়েক দিনে আন্দোলনকারীরা ৪৯টি গাড়ি ভাঙচুর ও আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে। এতে বর্জ্য সংগ্রহে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।

জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে শত শত গাড়ি। সবচেয়ে বেশি ৫৫টি গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের বনানীর অফিস কম্পাউন্ডে। আমাদের গর্ব ও গৌরবের স্থাপনা বাংলাদেশ টেলিভিশনে ঢুকেও অসংখ্য গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে

বাংলাদেশ গাড়ি তৈরি করে না। নগদ ডলার খরচ করে গাড়ি আমদানি করতে হয়। দেশে এখন সেই ডলারের সংকট চলছে। ডলার সংকটে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে সরকারকে। এমনকি সরকার অনেক বৈদেশিক পাওনা পরিশোধ করতে পারছে না ডলারের অভাবে। এমন অবস্থায় এতগুলো গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া অত্যন্ত গর্হিত কাজ বলে মনে করছেন অনেকে।

এবারের অরাজনৈতিক আন্দোলনে বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহলের তৎপরতায় সরকারি সম্পত্তি ধ্বংসের প্রবণতা দেখা গেছে। সেতু ভবনের পাশাপাশি দুষ্কৃতকারীরা বনানীতে বিআরটিএর প্রধান কার্যালয়, মিরপুর আঞ্চলিক কার্যালয়, মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বনানীতে এক্সপ্রেসওয়ের টোলপ্লাজা পুড়িয়ে দেয়। হামলা চালিয়ে ও আগুন লাগিয়ে রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশনের সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়। মেট্রোরেলে হামলা চালিয়ে মিরপুর ১০ ও কাজীপাড়ার দুটি স্টেশন তছনছ করে দেয়।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মঞ্জুর হোসেন বলেছেন, দুর্বৃত্তদের আগুনে পদ্মা সেতু, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেলসহ বড় প্রকল্পগুলোর গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পুড়ে গেছে। পাশাপাশি পরবর্তী (আপকামিং) প্রকল্পগুলোর নথিপত্রও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা সাত সদস্যের ঊর্ধ্বতন তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। কমিটি সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হিসাব করবে।

রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনে অগ্নিকাণ্ডের কারণে পুরো দেড় দিন সম্প্রচার বন্ধ ছিল। পুড়ে ছাই হয়েছে মোটরসাইকেল, গাড়িসহ প্রডাকশন সেট। ভবন ঘুরে দেখা যায়, মূল ফটকের ডান পাশে ২০-২৫টি পোড়া গাড়ি পড়ে রয়েছে, বাম পাশে সারি সারি পোড়া মোটরসাইকেল। এ ছাড়া ক্যান্টিন ভবন, প্রডাকশন সেট, অভ্যর্থনা কক্ষ ও সম্প্রচারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তবে এই ধ্বংসযজ্ঞে ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারেনি টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ। মহাখালীতে ডেটা সেন্টারে অগ্নিসংযোগের ফলে টানা চার দিন ইন্টারনেট সেবা থেকে বিচ্ছিন্ন সারা দেশ।

গতকাল ক্ষতিগ্রস্ত ডেটা সেন্টার পরিদর্শন শেষে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, এই অগ্নিকাণ্ডে ডাক বিভাগের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। আহত হয়েছেন পাঁচজন কর্মী। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ডাক বিভাগের চারটি গাড়ি। মিরপুরের বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ভবনে অগ্নিকাণ্ডে ঢাকা বিভাগীয় পরিচালকের গাড়ি, কার্যালয় ও একটি বাস পুড়ে যায়।

সর্বশেষ খবর