মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

দেয়ালজুড়ে তারুণ্যের প্রতিবাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেয়ালজুড়ে তারুণ্যের প্রতিবাদ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার সময়ই চোখে পড়ে ক্যালিগ্রাফি ও শহীদ আবু সাঈদকে নিয়ে কালো রঙের ওপর নানান রঙের মিশেলে একটা দেয়ালচিত্র বা গ্রাফিতি। তা দেখে একটু থমকে যেতে হয়। প্রশ্ন জাগে এ রকম অসাম্প্রদায়িক নান্দনিকতার মিশেলে দেয়ালচিত্র দেখেছে কখনো বাংলাদেশ? যেখানে রংতুলির ছোঁয়ায় নিজের দাবি ফুটিয়ে তোলার স্বাধীনতা পাওয়া যাবে।

২০১৮, ২০২১-এর পর সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ২০২৪ সালে এক পর্যায়ে চারদিকে লাশের স্তূপের মাঝে একদল তরুণ রংতুলি, পেইন্ট স্প্রে নিয়ে ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন দেয়াল গ্রাফিতি এঁকে রাঙিয়ে তোলে প্রাণ সংশয়ের ভয় নিয়ে। সেই গ্রাফিতিগুলোতে উঠে আসে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ থেকে শুরু করে নিহত সব শিক্ষার্থীর হত্যার বিচারের দাবির কথা। 

স্বাধীনতার আগে থেকেই একটি শব্দের সঙ্গে পরিচিত, সেটি হলো দেয়ালে ‘চিকা মারা’। চিকা মারাকে প্রতিবাদী দেয়াল লিখন বোঝাত। বিভিন্ন প্রতিবাদী ভাষা চুপিসারে দেয়ালে লুকিয়ে লেখা হতো তখন। দেয়ালে চিকা মারার মধ্যে ‘আইজুদ্দিন’ ও ‘সুবোধ’ অনেক বেশি জনপ্রিয়। এই দুটো চরিত্র এক বা দুই শব্দে অনেক অধিকার ও দাবির কথাই বলে দিত আমাদের। সেই চিকা মারা থেকে প্রথানুযায়ী শিল্পমাধ্যম না হওয়া সত্ত্বেও গ্রাফিতি বর্তমানে প্রতিবাদের একটি অন্যতম ভাষা হিসেবে রূপান্তরিত হয়েছে।

রাজধানীর ব্যস্ততম সড়ক বা এলাকার ছোট গলিতে মুখ ফেরালেই দেখা যেত স্প্রে, পেইন্টের রঙে রঙিন কাঁচাপাকা হাতের গ্রাফিতি। আবু সাঈদের মায়ের আহাজারি ‘হামার বেটাক মারলি কেনে?’, মুগ্ধর পানির কেস হাতে ‘এই পানি লাগবে পানি’, ‘রক্তাক্ত জুলাই’, ‘দেশটা কারও বাপের না’, ‘গেরিলা বসন্তে আমরাই বুনোফুল’, ‘ধর্ম যার যার, দেশ সবার’, ‘সংস্কার, বিকল্প কে?’ এমন হাজারো প্রতিবাদী স্লোগান ও তরুণ প্রজন্মের দাবি উঠে আসে গ্রাফিতি আকারে। যেগুলো সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সময়ে ক্ষমতার জোরে মুছে ফেলার ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়। পুলিশ দিয়ে গ্রাফিতি আঁকার সময় শিক্ষার্থীদের বাধা দেওয়া হয়। তবুও শিক্ষার্থীরা দমে যায়নি। তারা চুপিসারে গ্রাফিতি এঁকে প্রতিবাদ করে। গত ৫ আগস্ট সরকার পতন হয়।

আন্দোলনের সময়ে আঁকা গ্রাফিতি, পোস্টারে ভরে থাকা দেয়াল, মেট্রোরেলের পিলার, সড়ক বিভাজক, ঢাকার বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, প্রধান সড়কের দেয়াল পাল্টে যেতে থাকে। বিভিন্ন রঙে রঙিন হতে থাকে। ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সহায়তায় প্রতিবাদী তরুণরা যা যা চায় এবং মনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে দেয়ালে দেয়ালে রংতুলি দিয়ে।

শাহবাগ, টিএসসি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, মোহাম্মদপুর, বেইলি রোড, খিলগাঁও, মালিবাগ, মিন্টো রোড, মিরপুর, সেগুনবাগিচা, রামপুরাসহ পুরো ঢাকায় দেয়ালচিত্র এঁকে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের সময়ের বিভিন্ন স্মৃতি তুলে ধরছে দেয়ালে। সেই সঙ্গে দেশের প্রায় প্রতিটি শহরে তা ছড়িয়েছে।

সর্বশেষ খবর