মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

পাতাল রেলের নির্মাণ এগিয়ে

চলছে ডিপো নির্মাণের কাজ

হাসান ইমন

পাতাল রেলের নির্মাণ এগিয়ে

দেশের প্রথম পাতাল রেল এমআরটি লাইন-১ এর নির্মাণকাজ পুরোদমে শুরু হয়েছে। রাজধানীর এয়ারপোর্ট থেকে কমলাপুর পর্যন্ত এই পাতাল রেলের ডিপো নির্মাণের কাজও চলছে। গতকাল যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে থেকে তোলা ছবি : জয়ীতা রায়

রাজধানীতে এগিয়ে চলছে দেশের প্রথম পাতাল রেল এমআরটি লাইন-১ এর নির্মাণকাজ। চলছে ডিপো নির্মাণের কাজও। একই সঙ্গে প্রগতি সরণি এলাকায় চলছে সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর লাইন অপসারণের কাজ। প্রকল্পটি কয়েকটি ফেইজে ভাগ করে চলছে টেন্ডার প্রক্রিয়াসহ বিভিন্ন কার্যক্রম। প্রকল্পটির সব কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। প্রসঙ্গত, গত ২ ফেব্রুয়ারি পূর্বাচলে এমআরটি লাইন-১ এর নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করা হয়। প্রকল্পটি ২০২৬ সালে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। সে লক্ষ্য অনুযায়ী নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে নির্মাণযজ্ঞ চলছে।

সরেজমিন দেখা যায়, রাজধানীর প্রগতি সরণির উভয় লেনে চলছে সেবা সংস্থাগুলোর লাইন সরানোর কাজ। এরই মধ্যে সড়কটির পশ্চিমাংশের কাজ শেষ হলেও পূর্বাংশের কাজ চলছে। সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের তত্ত্বাবধানে কাজ চলছে। কর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতিতে সার্ভিস লাইন অপসারণের কাজ চলছে। যদিও উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের কারণে সড়ক সরু হওয়ায় যানজট তৈরি হচ্ছে। প্রতিদিনই এই দুই লেনে শত শত যাত্রীবাহী পরিবহনসহ অন্যান্য পরিবহনের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। খুব ধীরগতিতে পরিবহন চলতে দেখা যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন এই রুট ব্যবহারকারী যাত্রীরা।

এ বিষয়ে এমআরটি লাইন-১ এর প্রকল্প পরিচালক মো. আবুল কাশেম ভূঞা বলেন, এমআরটি লাইন-১ এর কাজ এগিয়ে চলছে। এরই মধ্যে ডিপো নির্মাণের কাজ চলছে। প্রকল্পটি কয়েকটি ফেইজে ভাগ করা হয়েছে।  ইতোমধ্যে কয়েকটি ফেইজের টেন্ডার কার্যক্রম শেষ হয়েছে। কয়েকটি চলমান। আরও কয়েকটি আগামী মাসে দেওয়া হবে। সব ঠিকঠাক থাকলে নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারব।  প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে বিমানবন্দর-কমলাপুর রুটেই দেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেল নির্মিত হতে যাচ্ছে। প্রকল্প শেষ হবে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে। যাত্রী ধারণ ক্ষমতা দৈনিক ৮ লাখ। অবকাঠামোর ধরন পাতাল এবং উড়াল। মোট ৩১ দশমিক ২৪১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে পাতাল পথে স্টেশন সংখ্যা ২১টি। দুটি রুটে চলবে পাতাল মেট্রোরেল। বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত বিমানবন্দর রুট এবং নতুন বাজার থেকে পিতলগঞ্জ ডিপো পূর্বাচল রুট। বিমানবন্দর-কমলাপুর রুটের দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৮৭২ কিলোমিটার। এ অংশটি সম্পূর্ণ পাতাল পথ হিসাবে নির্মিত হচ্ছে। বিমানবন্দর রুটের স্টেশন ১২টি। বিমানবন্দর রুটের স্টেশনসমূহ, বিমানবন্দর-বিমানবন্দর টার্মিনাল ৩, খিলক্ষেত, নদ্দা-নতুন বাজার, উত্তর বাড্ডা-বাড্ডা-আফতাবনগর-রামপুরা-মালিবাগ-রাজারবাগ-কমলাপুর। বিমানবন্দর-কমলাপুর রুটে নির্মিত বাংলাদেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেল নিয়ে মানুষের মধ্যে আগ্রহের শেষ নেই। বিমানবন্দর রুট-২ দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৩৬১ কিলোমিটার। এর স্টেশন হবে ৯টি। তন্মধ্যে ৭টি স্টেশন হবে উড়ালে। নদ্দা ও নতুন বাজার স্টেশনদ্বয় বিমানবন্দর রুটের অংশ হিসেবে পাতালে নির্মিত হবে। নদ্দা ও নতুন বাজার স্টেশনের আন্তঃফুট সংযোগ ব্যবহার করে বিমানবন্দর থেকে পূর্বাচল রুটে এবং পূর্বাচল রুট থেকে বিমানবন্দর রুটে যাওয়া যাবে। বিমানবন্দর রুটের স্টেশনসমূহ হচ্ছে, নতুন বাজার নদ্দা-জোয়ার সাহারা-বোয়ালিয়া-মস্তুল- ক্রিকেট স্টেডিয়াম-পূর্বাচল সেন্টার, পূর্বাচল পূর্ব-পূর্বাচল টার্মিনাল। 

প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, এমআরটি লাইন-১-এর দুটি অংশ থাকবে- একটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত (বিমানবন্দর রুট) ১৯.৮৭২ কিলোমিটার অংশ। এটি পুরোটাই হবে ভূগর্ভস্থ এবং এতে ১২টি স্টেশন থাকবে। অপর অংশটি নতুন বাজার থেকে প্রায় ১১.৩৭ কিলোমিটার এলিভেটেড লাইনসহ পূর্বাচল পর্যন্ত (পূর্বাচল রুট)। এতে সাতটি স্টেশন থাকবে। অন্যদিকে বিমানবন্দর রুটের অংশ হিসেবে নতুন বাজার এবং নদ্দা স্টেশন হবে ভূগর্ভস্থ। বাংলাদেশ সরকার ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন (জাইকা) এমআরটি লাইন-১-এর নির্মাণকাজের জন্য ৫২,৫৬১.৪৩ কোটি টাকার ব্যয়ভার বহন করবে। এর মধ্যে জাইকা প্রকল্প সহায়তা (পিএ) হিসেবে দেবে ৩৯,৪৫০.৩২ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ সরকার দেবে ১৩ হাজার ১১১ কোটি ১১ লাখ টাকা। জাপানি ফার্মের নেতৃত্বাধীন কনসোর্টিয়াম বিমানবন্দর-কমলাপুর-পূর্বাচল মেট্রো লাইন নির্মাণকাজ তদারকি করবে।  এর আগে ২০১৯ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ৫২,৫৬১.৪৩ কোটি টাকায় এমআরটি লাইন-১ প্রকল্প অনুমোদন দেয়।

সর্বশেষ খবর