সৌন্দর্য ধরে রাখতে সব ঋতুর উপযোগী কোনো আদর্শ নেই। একেক ঋতুতে ত্বকের পরিচর্যাও একেক রকম। ঋতু পরিবর্তনে পরিচর্যার আদ্যোপান্ত নিয়ে এই ফিচার।
প্রকৃতিতে চলছে শরতের ছোঁয়া। ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে প্রকৃতির রূপ। হালকা বৃষ্টি। আবহাওয়া বেশ অনুকূলে। তাপমাত্রা কম এবং সময়ের বেশ খানিকটা পরিবর্তন অনুভূত হচ্ছে। এটি কিন্তু দারুণ উপভোগের সময়। আর শরৎকে বলা হয় বছরের ক্রান্তিকাল। গ্রীষ্মের পর এবং শীতের আগে ত্বকের বাড়তি পরিচর্যা ও বিশেষ সংরক্ষণ ব্যবস্থা প্রয়োজন।
অনেকেই ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ত্বকচর্চায় পরিবর্তন আনার বিষয়টি অবহেলা করেন। কিন্তু এ কথা মানতেই হবে যে, আবহাওয়ার পরিবর্তনে ত্বকের স্বাভাবিক অবস্থাও পাল্টায় বলে জানান রূপ বিশেষজ্ঞ শারমিন কচি। গরমে সূর্যের প্রচ- উত্তাপের কারণে ত্বকে নানা সমস্যা দেখা দেয়। আর শীতকালীন ঠান্ডাও ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। তাই, শরৎকাল ত্বকের জন্য সেরা সময়। কারণ, এ ঋতুতে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা সহনীয় থাকে। শরতের মৌসুমে ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে ভিটামিন-সির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্যের এই উপাদান মানুষের বুড়িয়ে যাওয়া প্রতিরোধেও অত্যন্ত সহায়ক। যেহেতু প্রকৃতির বদলে ত্বকেও আসে পরিবর্তন। তাই এ সময় ত্বকের পরিচর্যায়ও আনতে হবে পরিবর্তন।
পরিচ্ছন্ন থাকুন
সারা দিনের ঘাম, ধুলাবালি ও ময়লা পরিষ্কার না করলে ত্বকের রোমকূপে প্রদাহ এবং খোসপাঁচড়া সৃষ্টি হতে পারে। তাই এ সময় পরিষ্কারক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন ক্লিনজিং মিল্ক। সম্ভব হলে অ্যালোভেরা ও গোলাপজল মিশিয়ে ব্যবহার করুন। চুলকানি, ব্রণ, র্যাশ, ঘামাচির সমস্যা কমে যাবে। ত্বক পরিষ্কারের জন্য সাধারণ কাপড় ব্যবহার করা ক্ষতিকর। এ কাজে সবচেয়ে ভালো নরম ও আর্দ্র কাপড়।
আর্দ্রতা ধরে রাখুন
শরতে যেহেতু আবহাওয়া আর্দ্র থাকে, তাই অনেকে ভাবেন ত্বকে ময়েশ্চারাইজারের প্রয়োজন নেই। কিন্তু এই সময় ত্বক প্রস্তুত হচ্ছে শীতের জন্য। এ কারণে আমাদের আর্দ্রতাকে ধরে রাখতে হবে ত্বকে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে। সম্ভব হলে গোসলের পানিতে কয়েক ফোঁটা গ্লিসারিন ফেলে দিন, ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকবে। ত্বকের বাড়তি আর্দ্রতার জন্য বিশেষ ক্রিম ব্যবহার করা ভালো।
সানস্ক্রিন ব্যবহার
শরতে রোদের তাপ কম থাকে। তাই বলে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে ভুলবেন না। বাইরে বের হওয়ার অন্তত ২০ মিনিট আগে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করবেন। অবশ্যই ত্বকের ধরন অনুযায়ী।
নিয়ম করে স্ক্রাবিং
স্ক্রাবিং ত্বক থেকে মৃত কোষকে দূর করবে। টকদই আর ওটমিল দিয়ে স্ক্রাবার তৈরি করতে পারেন। যাদের ত্বক তৈলাক্ত, তারা টকদইয়ের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে নিতে পারেন। শুষ্ক ত্বকে কফি বা অলিভ অয়েলের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে বা চালের গুঁড়া, মুলতানি মাটি এগুলো মিশিয়েও কিন্তু স্ক্রাবার তৈরি করতে পারেন। সপ্তাহে দুই দিন মুখ ও শরীরে স্ক্রাবারটি ব্যবহার করতে পারেন।
ঠোঁটের যত্ন নিন
শীত শুরু হওয়ার আগেই ঠোঁটের আর্দ্রতা ধরে রাখতে ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। এর মাধ্যমে ঠোঁটকে খসখসে হওয়া এবং ফেটে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব।
শরীরেরও যত্ন নিন
কেবল মুখের ত্বকের নিলেই হবে না। শরীরের সব জায়গায় সমান যত্ন নিতে হবে। বিশেষ করে ঘাড় ও গলায় সূর্যের আলোর প্রভাব বেশি পড়ে, একই সঙ্গে এই জায়গায় ময়লাও অনেক বেশি হয়। সুতরাং এসব জায়গায় ঠিকভাবে যত্ন নিতে হবে। এ ছাড়া শরীরের অবহেলিত অংশ যেমন- হাতের কনুই, পায়ের গোড়ালি। এগুলোর যত্ন আসলে তেমন করে হয় না, তাই স্বাভাবিকভাবেই শুষ্ক থাকে। আর এখানে মৃতকোষ তৈরি করার ক্ষমতাটাও বেশি। তাই এসব অবহেলিত অংশ ঘষে পরিষ্কার করতে হবে। তাহলে পরে যে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন, সেটি ত্বকে সুন্দরভাবে শোষণ হবে। ত্বক থাকবে কোমল, মসৃণ।
শাক-সবজি ও ফলমূল খান
ত্বকের পরিচর্যায় এ সময় প্রচুর পানি পানের পাশাপাশি মৌসুমি যে ফল ও সবজি থাকে, সেগুলো বেশি বেশি গ্রহণ করুন। যেমন ঝিঙ্গে, পটোল, করলা, বরবটি- এগুলোতে প্রচুর পরিমাণ বায়ো ফ্লেবোনয়েড থাকে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, আঁশ থাকে। এরপর রয়েছে পালংশাক। নানা ধরনের বাদাম, বীজ। সূর্যমুখির বীজ, মিষ্টিকুমড়ার বীজ।
এ ছাড়াও নিয়মিত প্রয়োজনীয় ঘুম, নিয়মিত গোসল, সুস্থ মানসিক অবস্থা ইত্যাদিও ত্বকের পরিচর্যায় বিভিন্নভাবে সাহায্য করে থাকে।
লেখা : ফেরদৌস আরা